ব্যুরো নিউজ ৩০ জুলাই ২০২৫ : ওড়িশার উপকূলে অবস্থিত আব্দুল কালাম দ্বীপ থেকে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO) গত ২৮ এবং ২৯ জুলাই ‘প্রলয়’ ক্ষেপণাস্ত্রের দুটি সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। এই পরীক্ষাগুলি ক্ষেপণাস্ত্রটির সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন পাল্লার কার্যকারিতা যাচাই করার জন্য ব্যবহারকারী মূল্যায়ন পরীক্ষার (User Evaluation Trials) অংশ ছিল।
ডিআরডিও-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুটি ক্ষেপণাস্ত্রই তাদের নির্ধারিত গতিপথ নির্ভুলভাবে অনুসরণ করেছে এবং লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে আঘাত হেনেছে। পরীক্ষার সময় ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যকারিতা সমস্ত উদ্দেশ্য পূরণ করেছে, যা সিস্টেমটির অপারেশনাল প্রস্তুতি এবং নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করে।
‘প্রলয়’ ক্ষেপণাস্ত্র কী এবং এর কার্যকারিতা কেমন?
‘প্রলয়’ হলো একটি স্বল্প-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (SRBM), যা বিশেষভাবে যুদ্ধক্ষেত্রের ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ডিআরডিও দ্বারা তৈরি এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর অপারেশনাল চাহিদা পূরণের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
Defence : ভারতের MIRV সক্ষম K-6 এর পরীক্ষা শীঘ্রই , শত্রু রাষ্ট্রর সামরিক মোকাবিলায় এক বৃহৎ পদক্ষেপ
ক্ষেপণাস্ত্রের বৈশিষ্ট্য:
- পাল্লা: ‘প্রলয়’ ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ১৫০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার, যা কৌশলগত এবং কৌশলগত উভয় ধরনের লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করার জন্য উপযুক্ত।
- যুদ্ধাস্ত্র: এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ৩৫০ থেকে ৭০০ কিলোগ্রাম ওজনের প্রচলিত ওয়ারহেড বহন করতে পারে। এটি শত্রুপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তু যেমন কমান্ড সেন্টার, লজিস্টিক হাব এবং বিমান ঘাঁটিতে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম।
- গতি এবং জ্বালানি: এটি কঠিন-জ্বালানিযুক্ত রকেট মোটর ব্যবহার করে, যা দ্রুত উৎক্ষেপণ ক্ষমতা নিশ্চিত করে। এছাড়াও, উন্নত নেভিগেশন এবং অ্যাভিওনিক্স সিস্টেমের কারণে এটি মাঝ-আকাশে তার গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে, যা একে প্রতিহত করা অত্যন্ত কঠিন করে তোলে।
- মোবিলিটি: একটি উচ্চ-মোবিলিটি যানে এটি সংযুক্ত করা যায়, যার ফলে এটিকে সংবেদনশীল সীমান্ত অঞ্চলে দ্রুত মোতায়েন করা সম্ভব। ভারতের ‘নো ফার্স্ট ইউজ’ (No First Use) পারমাণবিক নীতির অধীনে প্রচলিত স্ট্রাইকের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে, যা এর বিশেষত্ব বাড়ায়। এর অর্থ হলো, এই ক্ষেপণাস্ত্র পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করেও একটি শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম।
রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ‘ইস্কান্দার’-এর সঙ্গে তুলনা
সাম্প্রতিককালে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে রাশিয়া ‘ইস্কান্দার’ (সিকান্দার বা আলেকজান্ডার) নামক এক ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে, যা ইউক্রেন কে ব্যাপভাবে ক্ষতিতগ্রস্থ করেছে । এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ডুবোজাহাজ, যুদ্ধজাহাজ এবং স্থলভাগ থেকেও উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ডিআরডিও-র বিজ্ঞানীরা ‘প্রলয়’ ক্ষেপণাস্ত্রটি স্বদেশী প্রযুক্তিতে তৈরি করার আগে ‘ইস্কান্দার’-এর কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করেছেন।