Admiral Kuznetsova service uncertain

ব্যুরো নিউজ ১৮ জুলাই ২০২৫ : রাশিয়ার একমাত্র বিমানবাহী রণতরী, সোভিয়েত আমলের ‘অ্যাডমিরাল কুজনেতসভ’, বর্তমানে পরিত্যক্ত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। এর ফলে রাশিয়ান নৌবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে একটি উন্নত সামরিক শক্তি হিসেবে পরিচিত হতে চলেছে, যাদের কোনো বিমানবাহী রণতরী থাকবে না। ২০১৮ সাল থেকে ‘কুজনেতসভ’-এর মেরামত ও সংস্কার কাজ চললেও, সম্প্রতি রাশিয়ান সংবাদপত্র ‘ইজভেস্টিয়া’ জানিয়েছে যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এর সংস্কার কাজ বাতিল করতে পারে।

রণতরীর উপযোগিতা নিয়ে বিতর্ক

রাশিয়ার প্রাক্তন প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের কমান্ডার, অ্যাডমিরাল সের্গেই আভাবাকিয়ান্টস, মনে করেন আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে ক্লাসিক্যাল বিমানবাহী রণতরীর প্রয়োজন নেই। তাঁর মতে, এগুলি ব্যয়বহুল এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে আধুনিক অস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করা যেতে পারে। তিনি রোবোটিক সিস্টেম এবং মনুষ্যবিহীন বিমানবাহী রণতরীকে ভবিষ্যৎ বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে, অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞ এখনও বিমানবাহী রণতরীকে অপরিহার্য মনে করেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের নতুন রণতরী নির্মাণ প্রকল্প থেকে স্পষ্ট। ভারতেরও দ্বিতীয় একটি রণতরী তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।

Indian Navy Nistar : ভারতীয় নৌবাহিনীতে যোগ দিচ্ছে গভীর সমুদ্রের প্রহরী ‘নিস্তার’ !

ভারতের সেবায় রাশিয়ার ‘আরেক’ বিমানবাহী রণতরী: আইএনএস বিক্রমাদিত্য

এখানে উল্লেখ্য, ভারতীয় নৌবাহিনীতে বর্তমানে যে বিমানবাহী রণতরীটি পরিষেবায় আছে, সেটিও রাশিয়ান বংশোদ্ভূত। আইএনএস বিক্রমাদিত্য হলো একটি আধুনিকীকরণ ও সংস্কার করা কিয়েভ-শ্রেণির বিমানবাহী রণতরীর পরিবর্তিত সংস্করণ, যা ১৯৮৭ সালে অ্যাডমিরাল গোরশকভ নামে রাশিয়ান নৌবাহিনীতে প্রথম কমিশন করা হয়েছিল। ১৯৯৫ সাল থেকে এর আধুনিকীকরণ ও অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয় এবং এতে ১৬টি মিগ-২৯কে যুদ্ধবিমান সজ্জিত করা হয়। ২৮৪ মিটার দীর্ঘ এবং প্রায় ৬০ মিটার প্রস্থের এই ৪৪,৫০০ টনের বিশাল রণতরীটি ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধাস্ত্র।

কুজনেতসভের ‘অভিসপ্ত’ ইতিহাস

‘অ্যাডমিরাল কুজনেতসভ’ ১৯৮৫ সালে চালু হয়েছিল এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ান নৌবাহিনীতে স্থানান্তরিত হয়। ২০১৬ সালে সিরিয়ার উপকূলে এটি ব্যবহৃত হলেও, পরে কালো ধোঁয়া উদগিরণ এবং একের পর এক দুর্ঘটনার জন্য এটি কুখ্যাত হয়। ২০১৮ সাল থেকে মেরামতের জন্য শুষ্ক ডকে প্রবেশের পর এটি একাধিক অগ্নিকাণ্ড ও ক্ষতির শিকার হয়েছে, যার কারণে এটি “অভিসপ্ত বাহক” নামে পরিচিতি লাভ করেছে। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এর মেরামত কাজ আরও বিলম্বিত হয়েছে।

রাজনাথ সিং বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ INS বিক্রান্তে, কেন কাঁপছে পাকিস্তান?

রাশিয়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

যদিও ‘কুজনেতসভ’-এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, রাশিয়ার নৌবাহিনী সম্পূর্ণভাবে বিমানবাহী রণতরীর ধারণা পরিত্যাগ করেনি। কৌশলগত পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে উত্তর ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরগুলিতে বিমানবাহী রণতরী থাকার কথা। রাশিয়া ‘প্রজেক্ট ২৩০00E স্টর্ম’ নামে একটি নতুন বিমানবাহী রণতরীর নকশা বিবেচনা করছে, যা পারমাণবিক চালিত হতে পারে এবং ৯০টি পর্যন্ত বিমান বহন করতে সক্ষম হবে।৯৫-১০০ হাজার টন ডিসপ্লেসমেন্ট, দৈর্ঘ্য ৩৩০ মিটার, প্রস্থ ৪০, ড্রাফ্ট ১১। জাহাজটির সর্বোচ্চ গতি ৩০ নট এবং সমুদ্র-ক্ষমতা গ্রেড ৭ পর্যন্ত। পূর্ণ গতি ৩০ নট, স্বায়ত্তশাসন ১২০ দিন, ক্রু – চার থেকে পাঁচ হাজার জন। জাহাজটির পরিষেবা জীবন ৫০ বছর পর্যন্ত হবে। বিমানের মধ্যে থাকবে, মিগ-২৯কে/কেওইউবি এবং পঞ্চম প্রজন্মের Su-৫৭ যুদ্ধবিমানের নৌবাহিনী সংস্করণ ।
তবে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। রাশিয়ার এই পদক্ষেপগুলি ইঙ্গিত দেয় যে তারা ভবিষ্যতে একটি শক্তিশালী নৌ বিমানবাহী সক্ষমতা বজায় রাখতে আগ্রহী, যদিও তার ধরন ক্লাসিক্যাল রণতরীর চেয়ে ভিন্ন হতে পারে।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর