ব্যুরো নিউজ ২৪ জুন : আজ, ২৫শে জুন, “সংবিধান হত্যা দিবস” উপলক্ষে রাজ্য জুড়ে পালিত হলো এক ব্যতিক্রমী মক পার্লামেন্ট কর্মসূচী। ভারতীয় জনতা পার্টির যুব মোর্চার উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক স্বৈরাচারী মনোভাবের অভিযোগ তুলে ধরেন। তিনি দেশের মধ্যে সাংবিধানিক স্বৈরাচারী সরকারগুলির তীব্র নিন্দা করেন এবং জরুরি অবস্থার সময়কালীন ইন্দিরা গান্ধী সরকারের সঙ্গে বর্তমান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের তুলনা করেন।
মক পার্লামেন্টের আয়োজন ও শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ
এই মক পার্লামেন্ট কর্মসূচীটি বিজেপির যুব মোর্চা আয়োজন করে। সারা দেশে বিজেপির উদ্যোগে বিভিন্ন রাজ্যে মক পার্লামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে, যা জরুরি অবস্থার সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কর্তৃক ঘোষিত পরিস্থিতিতে ভারতীয় সংসদের অবস্থাকে অনুকরণ করার জন্য। সেই সময়ে পার্লামেন্টে বিরোধী দলের কোনো ভূমিকা ছিল না এবং হাউসকে বলপূর্বক বিরোধীশূন্য করে বিল অনুমোদন করা হয়েছে , যার ফলে জরুরি অবস্থার সময় ভারতীয় সংবিধানের চরিত্রে অনেক মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছিল। সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এবং ‘সমাজতান্ত্রিক’ সংজ্ঞা যুক্ত করে এর প্রস্তাবনাটিকে ধর্ম এবং অর্থনীতির ক্ষেত্রে একটি ধর্মতান্ত্রিক চরিত্র প্রদান করা হয়, যা সংবিধানকে বিকৃত করে।
শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন যে, তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় লাইভ করতে দেওয়া হয় না। তিনি এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী সমস্ত সদস্যদের সাংবিধানিক ভাষা ব্যবহার এবং চয়নের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকার জন্য ভূয়সী প্রশংসা করেন।
ইন্দিরা গান্ধী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের তুলনা
শুভেন্দু অধিকারী জরুরি অবস্থার সময়কালীন ইন্দিরা গান্ধী সরকারের কঠোরতার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, জরুরি অবস্থায় ইন্দিরা গান্ধী সরকার ১,৩০,০০০ মানুষকে গ্রেপ্তার করে, যার মধ্যে ১,০০,০০০ মানুষ হয় ভারতীয় জন সংঘ (পুরোনো বিজেপি) এর সদস্য অথবা আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ) এর সদস্য ছিলেন।
এরপর তিনি জরুরি অবস্থা কালীন ইন্দিরা গান্ধী সরকারের সাথে পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের তুলনা করেন। তাঁর অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের গণতন্ত্রের চারটি স্তম্ভ ধ্বংস হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রের চার স্তম্ভের অবক্ষয়
১. বিরোধী দল: শুভেন্দু অধিকারী বলেন, বিরোধী শূন্য করা তৃণমূলের সর্বত্র প্রচারিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং সেটি পালনে বিধানসভায় নির্বাচিত বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের বারবার বহিষ্কৃত করা হয়েছে।
২. আমলাতন্ত্র: তিনি রাজ্যের আমলাতন্ত্রের অনিয়মের শিকার হওয়ার অভিযোগ তোলেন এবং প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বেশ কিছু উচ্চপদস্থ আমলা তাদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার দ্বারা নিযুক্ত হয়ে রয়েছেন। এছাড়াও, রাজ্য জুড়ে সরকারি কর্মচারী এবং শিক্ষকদের প্রতি দুর্ব্যবহার করা হয়েছে এবং তাঁদেরকে চাকরি ও ক্ষতিপূরণ উভয় থেকেই বঞ্চিত করা হয়েছে, যখন রাজ্য সরকার নিজের সুবিধার জন্য কিছু অবসরপ্রাপ্ত আমলাকে ধরে রেখেছে।
৩. বিচার ব্যবস্থা: রাজ্য সরকারের সাথে রাজ্যের উচ্চ আদালতের আইনানুগ পার্থক্যের জেরে বহু ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে বলে তিনি জানান। এছাড়াও, বেশ কিছু বিচারপতির বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার এবং শাসক দলের বিভিন্ন নিন্দনীয় ব্যক্তি অবমাননার মতো কর্মসূচী গ্রহণ করেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
৪. সংবাদ মাধ্যম: শুভেন্দু অধিকারী স্বাধীন সমাজ মাধ্যমে থাকা সংবাদমাধ্যম, ইউটিউবার এবং স্বীকৃত সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকদের প্রতি প্রশাসনের দুর্ব্যবহার, গ্রেফতারি এবং নিষেধাজ্ঞার উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি সরকার দ্বারা ক্রয় বা প্রচারিত কিছু সংবাদপত্রের নিরপেক্ষতা নিয়েও অভিযোগ করেন।
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘অতুলনীয় সাহস’-কে স্মরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর প্রয়াণ দিবসে ।
রাজনৈতিক আসামীদের অভিযোগ:
বিরোধী দলনেতা আরও অভিযোগ করেন যে, রাজ্যের রাজনৈতিক আসামীদের বেশিরভাগই বিরোধী দলের, রাষ্ট্রবাদী এবং প্রতিবাদী। তাঁর মতে, এটি পরিষ্কার অসাংবিধানিক স্বৈরাচারী শাসনের পরিচয় দেয়।
শুভেন্দু অধিকারী উপসংহারে বলেন যে, ভারতের জনগণ এই ধরনের জরুরি অবস্থার ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং পরবর্তী নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধীকে ক্ষমতা থেকে সরাতে তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও একই পরিণতি ঘটবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই মর্মে “সংবিধান হত্যা দিবস” উপলক্ষে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের স্বৈরাচারী প্রবৃত্তি তুলে ধরে এক জোরালো বার্তা দিলেন।
