ব্যুরো নিউজ ২৩ জুন : অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং ওয়াইএসআরসিপি (YSRCP) প্রধান ওয়াইএস জগন মোহন রেড্ডি এবার একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছেন, যেখানে তাঁর গাড়ির নিচে পিষ্ট হয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। পালনাডু জেলার রেন্টাপাল্লা গ্রামে তাঁর সাম্প্রতিক সফরের সময় এই ঘটনা ঘটে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে অবহেলার অভিযোগ আনা হলেও, সিসিটিভি ফুটেজ এবং অন্যান্য প্রমাণ বিশ্লেষণের পর মামলায় খুনের ধারা যুক্ত করা হয়েছে, যা অন্ধ্রের রাজনীতিতে নতুন করে ঝড় তুলেছে।
কী ঘটেছিল সেই ভয়াবহ দিনে?
গুন্টুর জেলার পুলিশ সুপার এস সতীশ কুমার রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেছেন যে, ঘটনাটি গত ১৮ জুন ঘটেছিল। জগন মোহন রেড্ডি রেন্টাপাল্লা গ্রামে যাচ্ছিলেন গত বছর আত্মহত্যা করা এক ওয়াইএসআরসিপি নেতার পরিবারের সাথে দেখা করতে। তাঁর কনভয় যখন ইতিকুরু বাইপাস দিয়ে যাচ্ছিল, তখনই এই দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সিঙ্গাইয়া নামের ৫৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ গুরুতর আহত হন এবং তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। প্রথমে মনে করা হয়েছিল যে, সিঙ্গাইয়া জগনের কনভয়ের একটি গাড়িতে ওঠার চেষ্টা করতে গিয়ে পড়ে আহত হয়েছিলেন। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, সিঙ্গাইয়া জগনের গাড়ির সামনে পড়ে যান এবং গাড়ির সামনের ডান চাকা তাঁর ঘাড়ের উপর দিয়ে চলে যায়, যার ফলে তাঁর ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। সিঙ্গাইয়া ভেঙ্গালায়াপালেম গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন এবং জগনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
মামলার মোড় বদল: অবহেলা থেকে খুনের অভিযোগ
প্রাথমিকভাবে, নিহতের স্ত্রী চিলি লুরদু মেরি’র অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (BNS) এর ১০৬(১) ধারা (অবহেলার কারণে মৃত্যু ঘটানো) এর অধীনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তবে, এসপি কুমার জানান, সিসিটিভি ফুটেজ, ড্রোন ভিজ্যুয়াল এবং পারিপার্শ্বিক প্রমাণসহ বিভিন্ন সাক্ষ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণের পর দেখা যায় যে, মৃত ব্যক্তি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ির নিচে পিষ্ট হয়েছিলেন। এর পর মামলার ধারা পরিবর্তন করে বিএনএস-এর ১০৫ (খুনের সমান অপরাধ, যা খুন নয়) এবং ৪৯ (প্ররোচনা) ধারা যুক্ত করা হয়েছে।
একাই নন জগন: অভিযুক্তের তালিকায় আরও ৫ জন
এই মামলায় জগন মোহন রেড্ডি ছাড়াও আরও পাঁচজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে:
- রামানা রেড্ডি (গাড়ির চালক)
- কে নাগেশ্বর রেড্ডি (ব্যক্তিগত সহকারী)
- ওয়াইভি সুব্বারেড্ডি (সিনিয়র ওয়াইএসআরসিপি নেতা)
- পেরনি ভেঙ্কটারামাইয়া (প্রাক্তন বিধায়ক)
- ভিদাদালা রজিনি (প্রাক্তন মন্ত্রী)
এসপি কুমার জানান, “এই ব্যক্তিদের নাম অভিযুক্তের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী এবং প্রাসঙ্গিক বিধান অনুসারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জগনের বিতর্কিত সফর ও রাজনৈতিক উত্তাপ
জগন মোহন রেড্ডির পালনাডু সফর এমনিতেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। তার কারণ, একজন ওয়াইএসআরসিপি সমর্থক একটি প্ল্যাকার্ড তুলে ধরেছিলেন যেখানে তেলেগুতে লেখা ছিল: “যখন ওয়াইএসআরসিপি ২০২৯ সালে ক্ষমতায় আসবে”, এবং তার নিচে লেখা ছিল “রাপা রাপা নারুকুটা” (অর্থ: তাদের এক এক করে কেটে ফেলব)। পুলিশ এই প্ল্যাকার্ড তুলে ধরা ওয়াইএসআরসিপি কর্মী টি রবিতেজ-এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
অন্ধ্রপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভি অনিতা জগনকে এমন “হিংসাত্মক” মন্তব্যে উৎসাহিত করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। যদিও জগন এই প্ল্যাকার্ডের পক্ষে সাফাই দিয়ে বলেছেন যে এটি হিংসাত্মক ছিল না এবং প্রশ্ন তুলেছেন, “তাহলে এখন কি সিনেমা থেকে একটি লাইনও উদ্ধৃত করা যাবে না?”
একই দিনে, জগন সমর্থকদের ভিড়ের মধ্যে সাথেনাপল্লি ক্লক টাওয়ারের কাছে ৩০ বছর বয়সী আরেক ওয়াইএসআরসিপি সমর্থক পি জয়বর্ধন রেড্ডি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পরে গুন্টুর সরকারি হাসপাতালে মৃত ঘোষিত হন। এই ঘটনাগুলি রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে এবং জগন রেড্ডির বিরুদ্ধে আনা খুনের অভিযোগ নিঃসন্দেহে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে আরও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেবে।
বলাই বাহুল্য , নেতানেত্রীদের এইরুপ দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ কে প্রশ্রয় দান করে সেই কর্মীদের আনুগত্য যারা লাঞ্ছিত হয়েও কোনও এক ব্যক্তিগত স্বার্থের জেরে চরণ বন্দনা করে যায় !