ghatal flood fail master plan Dev

ব্যুরো নিউজ ২৩ জুন : ঘাটালে বর্ষা এল, আর তার সাথে এল সেই পুরনো পরিচিত মুখ—বন্যা! জলবন্দী মানুষ, ভাসমান ঘরবাড়ি, আর সেই চিরন্তন প্রশ্ন: ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান কেন বাস্তবায়িত হলো না? এই প্রশ্ন যখন রাজনৈতিক মহলে জালের মতো ঘুরছে, ঠিক তখনই ঘাটালের ‘জনপ্রতিনিধি’ সাংসদ দেব মুখ খুললেন। তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট একদিকে যেমন দায় ঠেলার চেষ্টা, তেমনই অন্যদিকে বিরোধীদের খোঁচায় আরও জমে উঠেছে এই ‘কৌতুকনাট্য’। তবে কি প্রতি ৪-৫ বছর অন্তর একই অজুহাত শোনা যাবে, আর ঘাটালবাসী ভুয়ো প্রতিশ্রুতির ভেলায় চড়ে প্রতারিত হতে থাকবে? চলুন, দেখে নেওয়া যাক এই প্রশ্নের ফাঁদে আটকে পড়া দেবের ‘অজুহাত মাস্টারপ্ল্যান’!


অজুহাত পর্ব ১: “কেন্দ্রীয় সরকার সাড়া দেয়নি, আমরা কী করব?”

দেবের ফেসবুক পোস্টের সারমর্ম হলো, “দেখুন মশাই, গত ১০ বছর ধরে আমি সংসদে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য চিৎকার করে গলা ফাটিয়েছি। কিন্তু কেন্দ্র সরকার কানে তুলো গুঁজে বসে ছিল। আমি তো আর জোর করে ওদের পকেট থেকে টাকা বের করতে পারি না, তাই না? রাজ্য সরকার অবশেষে দয়া করে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, কাজও নাকি শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু এটা তো ৪-৫ বছরের ব্যাপার! এত বড় প্রজেক্ট কি আর এক দিনে হয়ে যায়?”

প্রশ্ন: মাননীয় সাংসদ, আপনি যদি ১০ বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে আপনার এলাকার ন্যায্য পাওনা আদায় করতে না পারেন, তাহলে আপনাকে সাংসদ নির্বাচিত করার সার্থকতাটা ঠিক কোথায়? জনগণ আপনাকে মনোনীত করে কেন, যদি আপনার দলের প্রতিনিধিত্বে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে প্রাপ্য আদায় না হয়? নাকি এই ‘দায় ঠেলা’ রাজনীতিটাই এখন নতুন মাস্টারপ্ল্যান?

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে


অজুহাত পর্ব ২: “রাজ্য সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, এবার একটু ধৈর্য ধরুন!”

দেব আরও বলেছেন যে, এই ১৫০০-২০০০ কোটি টাকার প্রজেক্ট নাকি একা রাজ্য সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিল না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি তাঁকে কথা দিয়েছিলেন এবং কথা রেখেছেন! ফেব্রুয়ারি ২০২৫ থেকে কাজও শুরু হয়েছে—যার মধ্যে ৭৮ কিমি + ৫২ কিমি নদীর ড্রেজিং, বাঁধ, ব্রিজ, খাল কাটা, খালের সংস্করণ, কৃত্রিম নদী তৈরি, জমি অধিগ্রহণ—সবই আছে।

প্রশ্ন: যদি ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের সমস্ত দায়িত্ব শেষমেশ রাজ্য সরকারকেই নিতে হয়, তাহলে রাজ্যের শাসক দল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিকে মনোনীত করছে কেন? অর্থাৎ, যে কাজের জন্য কেন্দ্রের সাহায্য অপরিহার্য, সেই কাজ রাজ্যকে একাই সামলাতে হচ্ছে। তাহলে কি এটা জনগণের চোখে ধুলো দেওয়ার একটা কায়দা, যেখানে দায়ভার কেন্দ্র-রাজ্যর মধ্যে ফুটবলের মতো ছোটাছুটি করবে, আর আসল কাজটা অসম্পূর্ণই থাকবে?


অজুহাত পর্ব ৩: “মানুষের অভিমান তো জনপ্রতিনিধিদের উপরেই হবে!”

সাংসদ দেব অত্যন্ত দার্শনিক ভঙ্গিতে মেনে নিয়েছেন, “ঘাটাল-এ বন্যা হওয়ার পর মানুষের অভিমান যথারীতি জনপ্রতিনিধিদের উপরেই হবে।” একই সাথে আশ্বাস দিয়েছেন, “এই দুর্যোগের সময় সরকার এবং প্রশাসন আপনাদের পাশে সব সময় আছে।”

প্রশ্ন: প্রতি বছর যখন ঘাটাল ডোবে, তখন কি এই ‘পাশে থাকা’র আশ্বাসটাই একমাত্র সান্ত্বনা? এই ‘অভিমান’ শব্দটার আড়ালে কি জনপ্রতিনিধিদের ব্যর্থতার দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে না? নাকি এই ‘পাশে থাকার’ প্রতিশ্রুতিটা শুধু বন্যার জলের মতোই ক্ষণস্থায়ী? আর এই ৪-৫ বছরের হিসেবটা কি শুধু ভোট এলেই নতুন করে শুরু হয়?

আলিপুরদুয়ারের জনসভায় মোদীর বার্তা : ‘নির্মম সরকার’কে উপড়ে ফেলে ‘অপারেশন পশ্চিমবঙ্গ’র ডাক!


উপসংহার: বাস্তবের চিত্রনাট্য এবং ‘ঢপবাজি’র পুনরাবৃত্তি

ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে দেবের এই ‘ব্যাখ্যা’ শুনে বিজেপি বিধায়কের কটাক্ষ খুবই প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে। ‘পাগলু’ কি সত্যিই এবার ঘাটালে ‘শ্যুটিং’ করতে আসবেন, নাকি মানুষ তাঁকে ‘ঢপবাজ’ বলে ডাকবে? সিনেমা আর বাস্তবকে এক করে দেখার এই প্রবণতা কি আসলে জনপ্রতিনিধিদের ব্যর্থতার ঢাকনা? শেষ পর্যন্ত এটাই বোঝা যায়, প্রতি ৪-৫ বছর অন্তর নির্বাচনের সময় নতুন নতুন অজুহাত শোনা যাবে, কিন্তু কাজের কাজ কোনোকালেই পূরণ হবে না। একেই কি বলে ‘ভুয়ো প্রতিশ্রুতি’, যা ঘাটালের বসতকারীরা গ্রহণ করে প্রতি বছর প্রতারিত হন? যখন ঘাটালের মানুষ জবাব চাইছে, তখন শুধু ‘সময় লাগবে’ বলে দায় এড়ানোটা কি যথেষ্ট? নাকি এবার এই ‘অজুহাত মাস্টারপ্ল্যান’-এর বদলে আসল মাস্টারপ্ল্যানের প্রয়োজন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর