The Solly Bhai Legacy

ব্যুরো নিউজ ১৯ জুন: সুলেমান ‘সলি’ অ্যাডাম, যিনি সকলের কাছে সলি ভাই নামেই পরিচিত, ক্রিকেট বিশ্বে এক কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব। বিশেষত ইংল্যান্ডে খেলা ভারতীয় ক্রিকেটারদের প্রতি তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তিনি গভীরভাবে সম্মানিত। তাঁর জীবনকাহিনী অসাধারণ সহনশীলতা, নিঃস্বার্থতা এবং খেলার প্রতি এক অটল আবেগের এক প্রতিচ্ছবি, যার ফলে তিনি সুনীল গাভাস্কারের মতো ক্রিকেট কিংবদন্তিদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন এবং শচীন টেন্ডুলকারকে ইয়র্কশায়ারে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

ভারতের গুজরাটে জন্মগ্রহণ করা সলির বাল্যকাল ছিল কঠিন। দেশভাগের সময় থর মরুভূমি পেরিয়ে এক বিপজ্জনক যাত্রা তাঁর জীবনে গভীর ছাপ ফেলেছিল। তিন পাউন্ড পকেটে নিয়ে কিশোর বয়সে তিনি ইংল্যান্ডে আসেন এবং দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মী হিসেবে বিনয়ী জীবন শুরু করেন। অদম্য সংকল্প ও ব্যবসায়িক acumen-এর মাধ্যমে তিনি পেট্রোল পাম্প এবং সুপারমার্কেটসহ একটি সফল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। তবে তাঁর আসল ভালোবাসা ছিল ক্রিকেটকে ঘিরে।

বিরাট কোহলির টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পরে প্রেমানন্দ জি মহারাজের সাথে আধ্যাত্মিক মুহূর্ত।

ক্রিকেটারদের জন্য এক ঘরোয়া আশ্রয়

কয়েক দশক ধরে, লিডসে সলি ভাইয়ের বাড়ি ইংল্যান্ডে ক্লাব বা কাউন্টি ক্রিকেট খেলা শত শত ভারতীয় ও পাকিস্তানি ক্রিকেটারের জন্য এক আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিল। তিনি তাঁদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করতেন, গরম ভারতীয় খাবার পরিবেশন করতেন এবং এমন একটি পারিবারিক পরিবেশ তৈরি করতেন, যেখানে খেলোয়াড়রা নিজেদের বাড়ি থেকে দূরে থেকেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। রক্ষণশীল অনুমান অনুযায়ী, তিনি সুনীল গাভাস্কার, দিলীপ ভেঙ্গসরকার এবং শচীন টেন্ডুলকারের মতো ৪ শতাধিক ক্রিকেটারকে আতিথ্য দিয়েছেন। আর্থিকভাবে সংগ্রামরত এই খেলোয়াড়দের অনেকেই অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের জন্য তাঁর পেট্রোল পাম্পেও কাজ করতেন।

টেন্ডুলকার-ইয়র্কশায়ার সংযোগ

সলি ভাইয়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোর মধ্যে একটি ছিল ১৯৯২ সালে শচীন টেন্ডুলকারকে ইয়র্কশায়ারে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা। ইয়র্কশায়ার, ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একটি কাউন্টি, এক শতাব্দীর পুরনো নিয়ম মেনে চলতো যে তারা ইয়র্কশায়ারের বাইরে জন্মগ্রহণকারী খেলোয়াড়দের চুক্তি করবে না। তাদের প্রাথমিক বিদেশী খেলোয়াড় ক্রেগ ম্যাকডারমট আহত হওয়ার পর যখন একটি সুযোগ তৈরি হয়, তখন সলি, একজন উৎসাহী ইয়র্কশায়ার সিসি সদস্য হিসেবে, এই ঐতিহ্য ভাঙার একটি সুযোগ দেখতে পান। তিনি সাহসিকতার সাথে কমিটির কাছে শচীন টেন্ডুলকারের নাম প্রস্তাব করেন।

টেন্ডুলকারের ঠাসা আন্তর্জাতিক সময়সূচীর কারণে প্রাথমিকভাবে তিনি দ্বিধাগ্রস্ত থাকলেও, সলি ভাইয়ের প্ররোচনামূলক দক্ষতা এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু সুনীল গাভাস্কারের সাহায্য নেন, যিনি ব্যক্তিগতভাবে টেন্ডুলকারকে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য বোঝান। ইয়র্কশায়ারে টেন্ডুলকারের মেয়াদ ছিল ঐতিহাসিক, কারণ তিনি এই মর্যাদাপূর্ণ ক্লাবের প্রথম বিদেশী খেলোয়াড় হয়েছিলেন, যা তাঁর বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি স্থাপন করেছিল। সলি ভাই টেন্ডুলকারের স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে কাজ করতেন, যাতে তিনি আরামদায়ক এবং ভালোভাবে যত্নপ্রাপ্ত হন তা নিশ্চিত করতেন।

দিল্লিতে দাবা খেলাতে গুপ্তার সাথে শীর্ষে নিকিটেঙ্কো।


একজন এজেন্টের চেয়েও বেশি – একজন প্রকৃত উপকারী

সলি ভাই কখনোই একজন বাণিজ্যিক এজেন্ট হিসেবে কাজ করেননি; তাঁর উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র ক্রিকেটারদের সাহায্য করা। তিনি তরুণ ভারতীয় ও পাকিস্তানি প্রতিভাদের জন্য অসংখ্য সুযোগ করে দিয়েছিলেন, তাঁদের ইংলিশ ক্লাব ক্রিকেটে খেলার ব্যবস্থা করতেন, আর্থিক সহায়তা দিতেন এবং এমনকি স্পনসরশিপ চুক্তিও নিশ্চিত করতেন। একসময় ভারতীয় দলের নয়জন ক্রিকেটার তাঁর ব্যবস্থার মাধ্যমে উপকৃত হয়েছিলেন। ক্রিকেটাররা তাঁকে একজন উপকারী, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং তাঁদের “ম্যান ফ্রাইডে” হিসেবে দেখতেন।

সুনীল গাভাস্কার নিজেও সলি ভাইয়ের উদারতার গল্প শেয়ার করেছেন, স্মরণ করেছেন কিভাবে ইংল্যান্ড সফরে সলি তাঁকে একটি সিঙ্গারা অফার করার মাধ্যমে তাঁদের বন্ধুত্ব শুরু হয়েছিল। গাভাস্কার নিয়মিতভাবে সলি এবং তাঁর পরিবারকে “পরিবার” হিসেবে উল্লেখ করেন, যা তাঁদের গভীর বন্ধন এবং সলির খেলার প্রতি নিঃস্বার্থ অবদানকে তুলে ধরে।

ভারা vantapati-র লেখা “সলি অ্যাডাম – বিয়ন্ড বাউন্ডারিস” নামক জীবনীতে সলি ভাইয়ের জীবনকাহিনী সম্প্রতি বর্ণিত হয়েছে, যা আবেগ, সম্প্রদায় এবং ফিরে দেওয়ার চিরন্তন চেতনার শক্তির এক প্রমাণ। মাঠে এবং মাঠের বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ক্রিকেটারদের উপর তাঁর প্রভাব অপরিসীম, যা তাঁকে ক্রিকেট ইতিহাসের এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে তাঁর উত্তরাধিকারকে সুদৃঢ় করেছে।


আপনার কি সলি ভাই সম্পর্কে আরও কিছু জানতে চান?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর