INS Arnala Indian Navy

ব্যুরো নিউজ ১৯ জুন : ভারতের উপকূলীয় প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে ভারতীয় নৌবাহিনী বুধবার (১৯ জুন, ২০২৫) আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আইএনএস আরনালা’-কে কমিশন করেছে। এটি অ্যান্টি-সাবমেরিন ( ডুবজাহাজ বিরোধী ) ওয়ারফেয়ার শ্যালো ওয়াটার ( স্বল্প গভীরতায় ) ক্রাফট (ASW-SWC) সিরিজের প্রথম যুদ্ধজাহাজ। প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল অনিল চৌহানের উপস্থিতিতে বিশাখাপত্তনমের নৌডকইয়ার্ডে, ইস্টার্ন নেভাল কমান্ডের অধীনে এই কমিশন লাভ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

আরনালা: বহুমুখী সক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ

আইএনএস আরনালা বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন অ্যান্টি-সাবমেরিন যুদ্ধ অভিযান পরিচালনার জন্য, যার মধ্যে রয়েছে সাব-সারফেস নজরদারি এবং প্রতিরোধ। এছাড়াও জাহাজটি অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান এবং নিম্ন-তীব্রতার সামুদ্রিক অভিযানের (LIMO) জন্য সজ্জিত, যা এটিকে নৌবহরের একটি বহুমুখী সংযোজন করে তুলেছে। ৭৭ মিটার দীর্ঘ এবং ১,৪৯০ টনের বেশি ওজনের আইএনএস আরনালা হলো ভারতীয় নৌবাহিনীর বৃহত্তম যুদ্ধজাহাজ, যা একটি অনন্য ডিজেল ইঞ্জিন-ওয়াটারজেট প্রপালশন সিস্টেম দ্বারা চালিত। এটি অগভীর জলে তার তত্পরতা এবং কার্যকারিতা উভয়ই বৃদ্ধি করে।

আইএনএস আরনালার কমিশন লাভ শুধুমাত্র ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে শক্তিশালী করে না, এটি দেশীয় নকশা, প্রকৌশল এবং উত্পাদনের বিজয়কেও তুলে ধরে। ভারত যখন বৃহত্তর আত্মনির্ভরতার দিকে তার সমুদ্র যাত্রা অব্যাহত রেখেছে, তখন আইএনএস আরনালা জাতীয় শক্তি, শিল্প অংশীদারিত্ব এবং নৌ শ্রেষ্ঠত্বের একটি গর্বিত প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে

‘ক্রেতার নৌবাহিনী’ থেকে ‘নির্মাতার নৌবাহিনী’তে ভারতের রূপান্তর

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জেনারেল অনিল চৌহান ভারতীয় নৌবাহিনীর ‘ক্রেতার নৌবাহিনী’ থেকে ‘নির্মাতার নৌবাহিনী’তে উল্লেখযোগ্য রূপান্তরের উপর জোর দেন। তিনি এটিকে দেশের ব্লু ওয়াটার আকাঙ্ক্ষার মেরুদণ্ড হিসেবে উল্লেখ করেন। ভারতে বর্তমানে প্রচুর সংখ্যক যুদ্ধজাহাজ – যার মধ্যে রয়েছে ক্যাপিটাল ওয়ারশিপ এবং অক্সিলিয়ারি – নির্মাণাধীন থাকায় ভারত জাহাজ নির্মাণে একটি শক্তিশালী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দেশীয় যুদ্ধজাহাজগুলিতে এখন অত্যাধুনিক দেশীয় সিস্টেম রয়েছে, যার মধ্যে স্টিলথ প্রযুক্তি থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার স্যুট এবং উন্নত সেন্সর রয়েছে, যা যুদ্ধ প্রস্তুতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করছে এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর স্বপ্নকে ক্রমশ বাস্তবায়িত করছে। সিডিএস দেশীয় পদ্ধতির মাধ্যমে কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিকে বাস্তব ফলাফলে রূপান্তরিত করার জন্য ভারতীয় নৌবাহিনীর অবিচল প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন।

নামকরণে ইতিহাসের ছোঁয়া

মহারাষ্ট্রের ঐতিহাসিক উপকূলীয় দুর্গের নামে নামকরণ করা হয়েছে আইএনএস আরনালা। এর অন্তর্ভুক্তি ভবিষ্যতের প্রতিকূলতা মোকাবিলায় বাহিনী স্তরের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নৌ সক্ষমতা গড়ে তোলার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

‘দক্ষিণায় পাক অধিকৃত কাশ্মির চাই’: সেনাপ্রধানকে জগদ্গুরু রামভদ্রাচার্য্যের স্পষ্ট বার্তা

অপারেশন সিঁদুর পরবর্তী নৌবাহিনীর প্রস্তুতি

এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রেক্ষাপটে ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের প্রস্তুতি আরও জোরদার করেছে। সম্প্রতি, তাদের দেশীয় গাইডেড-মিসাইল ডেস্ট্রয়ার আইএনএস সুরাত আরব সাগরে ৭০ কিলোমিটার পাল্লার একটি মাঝারি পাল্লার সারফেস-টু-এয়ার মিসাইলের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। নৌবাহিনী ব্রাহমোস এবং অন্যান্য উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ব্যবহার করে অ্যান্টি-শিপ ফায়ারিং মহড়াও চালিয়েছে, যা দীর্ঘ দূরত্বে নির্ভুল আঘাত হানার ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। ভারতের নৌবাহিনীর প্রতিরোধ ব্যবস্থায় আরও সংযোজিত হয়েছে বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রান্ত, যা এখন সম্পূর্ণ যুদ্ধ-প্রস্তুত এবং যেকোনো নিরাপত্তা হুমকির দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম। ভারতীয় নৌবাহিনীর সাম্প্রতিক অবস্থান একটি স্পষ্ট এবং শক্তিশালী বার্তা পাঠিয়েছে – এটি সতর্ক, তত্পর এবং পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীন এবং পরবর্তীতে ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের শক্তিশালী উপস্থিতি বজায় রেখেছে, যা শত্রুপক্ষের নৌবহরকে বন্দরে সীমাবদ্ধ রেখেছিল এবং সামগ্রিক যুদ্ধের পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করেছিল। এই কমিশন এবং সাম্প্রতিক সামরিক মহড়াগুলি প্রমাণ করে যে ভারতীয় নৌবাহিনী দেশের সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সম্পূর্ণরূপে সক্ষম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর