kedarnath flight suspended unavailable

ব্যুরো নিউজ ১৮ জুন : রুদ্রপ্রয়াগে রবিবার একটি মর্মান্তিক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পর কেদারনাথ উপত্যকায় হেলিকপ্টার পরিষেবা মঙ্গলবারও পুনরায় চালু করা যায়নি, যা গত দুই দিন ধরে মন্দির এলাকা থেকে ফেরার অপেক্ষায় থাকা তীর্থযাত্রীদের জন্য ব্যাপক অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। এই দুর্ঘটনায় ৭ জন যাত্রী, যার মধ্যে মহারাষ্ট্রের ২৩ মাস বয়সী এক শিশুও ছিল, প্রাণ হারান।

মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ও প্রাথমিকের কারণ

গত ১৫ জুন, রবিবার ভোরে প্রায় ৫টার দিকে কেদারনাথ থেকে গুপ্তকাশী ফেরার পথে গৌরীকুণ্ডের কাছে আরিয়ান অ্যাভিয়েশন লিমিটেডের একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় হেলিকপ্টারের পাইলট সহ ৭ জন আরোহীর সকলেই নিহত হন। নিহতদের মধ্যে মহারাষ্ট্রের এক দম্পতি ও তাদের ২৩ মাস বয়সী শিশুও ছিলেন। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, প্রতিকূল আবহাওয়া এবং কম দৃশ্যমানতা দুর্ঘটনার প্রধান কারণ ছিল। কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে যে, হেলিকপ্টারটি সম্ভবত ঘন কুয়াশার মধ্যে প্রবেশ করেছিল, যার ফলে পাইলটের দৃশ্যমানতা মারাত্মকভাবে কমে যায় এবং নিয়ন্ত্রণ হারানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়। রুদ্রপ্রয়াগের পার্বত্য অঞ্চলের সংকীর্ণ ভূখণ্ডও এই ধরনের পরিস্থিতিতে চালচলনের সুযোগ সীমিত করে, যা ঝুঁকি বাড়ায়। এই ঘটনায় পুরো জাতি স্তম্ভিত হয়েছে, এবং উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি শোক প্রকাশ করেছেন।

ফের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা কেদারনাথে: মৃত্যু ৬ জনের

দুর্ঘটনার পর পরিষেবা স্থগিত ও আইনি পদক্ষেপ

দুর্ঘটনার পরপরই উত্তরাখণ্ড সরকার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে ১৬ জুন পর্যন্ত হেলিকপ্টার পরিষেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। পুষ্কর সিং ধামি সরকার চারধাম তীর্থস্থান এবং অন্যান্য স্থানে সমস্ত হেলিকপ্টার পরিষেবা বন্ধ করার নির্দেশ জারি করে। সিভিল অ্যাভিয়েশন মন্ত্রকও ১৫ এবং ১৬ জুনের জন্য সমস্ত চার্টার এবং শাটল হেলিকপ্টার অপারেশন স্থগিত করে দেয়, এবং সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়। আরিয়ান অ্যাভিয়েশনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে; বিএনএস-এর ১০৫ ধারা এবং বিমান আইনের ১০ ধারায় কৌসিক পাঠক (অ্যাকাউন্টেবল ম্যানেজার) এবং বিকাশ তোমর (আরিয়ান অ্যাভিয়েশনের ম্যানেজার)-এর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে, এই দুর্ঘটনার পর চারধাম যাত্রার জন্য আরিয়ান অ্যাভিয়েশনের পরিষেবা অবিলম্বে স্থগিত করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ধামি হেলিকপ্টার পরিচালনার জন্য কঠোর SOP (Standard Operating Procedure) জারি করার নির্দেশ দিয়েছেন, যেখানে কঠোর প্রযুক্তিগত মান এবং উড্ডয়নের আগে সঠিক আবহাওয়ার তথ্য যাচাই করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

তীর্থযাত্রীদের দুর্ভোগ ও বর্তমান পরিস্থিতি

হেলিকপ্টার পরিষেবা বন্ধ থাকায় গত দুই দিন ধরে কেদারনাথ মন্দির এলাকা থেকে ফেরার অপেক্ষায় হাজার হাজার তীর্থযাত্রী আটকা পড়েছেন। ১৫ জুন দুপুর থেকে তারা আটকা পড়ে আছেন এবং তীব্র ঠান্ডা ও বৃষ্টির মধ্যেও তাদের পর্যাপ্ত আশ্রয় এবং ফিরে আসার উপায় না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেকেই হেঁটে বা ঘোড়া/খচ্চরের সাহায্যে কেদারনাথ পৌঁছালেও, যারা ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন, তাদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। শ্রী কেদারনাথ জি হেলিপ্যাড এলাকায়ও হেলিকপ্টার চালুর অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের ভিড় ক্রমাগত বাড়ছে। কেদারনাথের স্থানীয় পুরোহিতরা আশঙ্কা করছেন যে, যদি তীর্থযাত্রীদের নিরাপদে বের করে আনার জন্য সময়োচিত পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তবে ভিড় নিয়ন্ত্রণ একটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে। উত্তরাখণ্ড সিভিল অ্যাভিয়েশন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (UCADA) এর কর্মকর্তারা সোমবার জানিয়েছিলেন যে মঙ্গলবার থেকে পরিষেবা আবার শুরু হবে, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।

ধ্বংসস্তূপের মাঝে একমাত্র আশার আলো, বেঁচে ফেরা বিশ্বাস রমেশের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা

সম্ভাব্য পরিষেবা চালু এবং আধ্যাত্মিক গুরুত্ব

অফিসিয়াল বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, উত্তরাখণ্ডের পবিত্র কেদারনাথ ধামে হেলিকপ্টার পরিষেবা ১৭ জুন থেকে পুনরায় শুরু হবে। উত্তরাখণ্ড সিভিল অ্যাভিয়েশন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (UCADA) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিকা এই ঘোষণা দিয়েছেন। আবহাওয়ার উন্নতি সাপেক্ষে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত হওয়ার পরই উড়ান শুরু হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

রুদ্রপ্রয়াগ জেলার হিমালয় পর্বতমালায় অবস্থিত কেদারনাথ ধাম হিন্দু ধর্মে গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বহন করে। এটি ভগবান শিবের ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম এবং এটি এমন একটি স্থান যেখানে শিবলিঙ্গ স্বয়ম্ভু (স্ব-প্রকাশিত) রূপে আবির্ভূত হয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়। কেদারনাথ বদ্রীনাথ, গঙ্গোত্রী এবং যমুনোত্রীর পাশাপাশি চারটি ধাম তীর্থস্থানগুলির মধ্যে একটি। ভক্তরা আধ্যাত্মিক মুক্তি (মোক্ষ) এবং ঐশ্বরিক আশীর্বাদ লাভের জন্য এই পবিত্র যাত্রা করেন। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, মহাভারত যুদ্ধের পর পান্ডবরা ভগবান শিবের কাছে ক্ষমা চাইতে কেদারনাথে এসেছিলেন। শিব একটি ষাঁড়ের রূপে আবির্ভূত হয়ে এই স্থানে তাদের দর্শন দিয়েছিলেন। এই মন্দির প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রীকে আকর্ষণ করে, যারা ভগবান শিবের কৃপা এবং আধ্যাত্মিক শান্তি লাভের জন্য দুর্গম পথ অতিক্রম করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর