Hare Krishna conquer your fears

ব্যুরো নিউজ ১৮ জুন : “অশোচ্যানন্বশোচস্ত্বং প্রজ্ঞাবাদাংশ্চ ভাষসে।” (গীতা ২.১১) – এর অর্থ হলো: “তুমি তাদের জন্য শোক করছ যাদের জন্য শোক করা উচিত নয়, অথচ পাণ্ডিত্যের কথা বলছ।” – এই উক্তিটি মনে রেখে, আমরা দেখি ভয় আসলে একটি ভ্রম। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন, ভয় আসক্তি থেকে জন্ম নেয়, আর পিছুটান ক্ষণিকের জন্য। তাই ভয় শুধু একটি অনুভূতি নয়—এটি অজ্ঞানতা, নিজের স্বরূপ সম্বন্ধে অজ্ঞানতা।

প্রতিকূলতাকে জয় করা: একটি আধ্যাত্মিক অনুশীলন

প্রাচীনকালে, বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ভয়কে দমন করা হত না—বরং তাকে আহ্বান জানানো হতো, এবং তারপর তাকে অতিক্রম করা হতো। ভগবত গীতা একটি ঈশ্বর এবং মানুষের মধ্যে কথোপকথন নয়, বরং একজন গুরু এবং একজন সাধকের মধ্যে বার্তা । কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ প্রতিটি নৈতিক বা আধ্যাত্মিক সংঘাতের প্রতীক, যেখানে একজনকে ভ্রম এবং সত্য, আরাম এবং ধর্মের মধ্যে বেছে নিতে হয়।
যখন কৃষ্ণ অর্জুনকে দাঁড়াতে এবং যুদ্ধ করতে বলছেন, তখন তিনি হিংসাকে মহিমান্বিত করছেন না। তিনি অর্জুনকে সচেতনভাবে ভয়ের মুখোমুখি হতে বলছেন, ধর্মরূপ অগ্নিকুণ্ডে ভয় পুড়িয়ে ফেলতে বলছেন যতক্ষণ না কেবল সত্য অবশিষ্ট থাকে।

একমাত্র ভারতেই কেন ঈশ্বরের আবির্ভাব ঘটে?

নিয়ন্ত্রণের মায়া: বৃহত্তর বুদ্ধিমত্তার কাছে আত্মসমর্পণ

আমরা কেন ভয় পাই? এর মূলে রয়েছে জীবনের উপর আমাদের কল্পিত নিয়ন্ত্রণের অভাব। আমরা নিশ্চয়তা, অনুমানযোগ্যতা এবং পরিচিত ফলাফলের আশ্বাস চাই। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন: “তোমার কর্মে অধিকার আছে, কিন্তু ফলে নয়।”
আমাদের কর্মের ফল নিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষাই আমাদের উদ্বেগ এবং কষ্টের উৎস। যখন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়, ভয় ঢুকে আসে। যখন আমরা নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন ত্যাগ করি, তখনই মুক্তির শুরু।

প্রতীকের ভাষা: রূপান্তরের অভ্যন্তরীণ স্থাপত্য

অর্জুন যখন কৃষ্ণের বিশ্বরূপ দেখেন—মহাজাগতিক রূপ—তখন তিনি আতঙ্কিত হন। কেন? কারণ প্রতীকের অহংকারের ভ্রম ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা আছে। কৃষ্ণের অসীম রূপ, তার অগণিত চোখ, মুখ এবং হাত, অস্তিত্বের সম্পূর্ণতা প্রকাশ করে—সৃষ্টি এবং ধ্বংস একে অপরের সাথে জড়িত।
গীতা প্রতীক, রূপক এবং ঐশ্বরিক রূপ ব্যবহার করে শেখায় যে আধ্যাত্মিক যাত্রা বুদ্ধিবৃত্তিক নয়। এটি মানসিক দর্শনের মাধ্যমে অগ্রসর হওয়া, আত্মার গভীরতম স্থাপত্যকে সক্রিয় করা।

ভয়ের বাইরে: অভ্যন্তরীণ অমরত্বের পথ

ভয়ের মুখোমুখি হওয়ার পরে পথ কোথায় নিয়ে যায়? গীতার চূড়ান্ত শিক্ষা কী?
“সমস্ত প্রকার ধর্ম ত্যাগ করে কেবল আমার কাছে আত্মসমর্পণ কর।”
এই শ্লোকটি আত্মসমর্পণের শিখর, আত্মার অমরত্বে প্রবেশ। ভয়কে অতিক্রম করা মানে অসাড় হয়ে যাওয়া নয়, বা জাগতিক অর্থে সাহসী হওয়া নয়। এর অর্থ হল এই উপলব্ধি জাগানো যে – যা সত্য , তা মরতে পারে না, ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে না, কেড়ে নেওয়া যায় না।
যে এটি জানে সে নির্ভীক হয়ে ওঠে, এই কারণে নয় যে কিছুই তাকে হুমকি দেয় না, বরং এই কারণে যে সে আর এই ভ্রমের মধ্যে বাস করে না যে তাকে ধ্বংস করা যায়। এটাই মুক্তি। এটাই মোক্ষ।

পুণ্যকর্ম কেন শাস্তি মনে হয়? গীতার আলোকে আত্মিক বিশ্লেষণ

উপসংহার

ভয়ে বাঁচা মানে ভ্রমের মধ্যে বেঁচে থাকা। কিন্তু অর্জুনের মতো ভয়কে মোকাবিলা করা মানে মায়ার পর্দা ভেদ করে নিজের প্রকৃত স্বরূপের জাগরণ ঘটানো। ভয় আধ্যাত্মিক পথের শুরু, তার শত্রু নয়। সাহস, জিজ্ঞাসা এবং আত্মসমর্পণের সাথে মিলিত হলে, ভয় একজন শিক্ষক হয়ে ওঠে। এটি মিথ্যাকে পুড়িয়ে ফেলে, কেবল সত্যকে রেখে যায়।
গীতা আমাদের মনে করিয়ে দেয়— মর্তলোকে আপনি নিরাপদে থাকতে আসেননি। আপনি এখানে মুক্ত হতে এসেছেন। আর মুক্তি আসে কষ্ট এড়ানোর মাধ্যমে নয়, বরং সেই ঈশ্বরের অংশে (আত্মা বিবেক) জেগে ওঠার মাধ্যমে, যার মধ্যে কষ্টের স্থান নেই ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর