ব্যুরো নিউজ ১৭ জুন : ফের একবার বিধ্বংসী আগুনের শিকার হল কলকাতা। রবিবার রাতে খিদিরপুর বাজারে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বাজারের অধিকাংশ দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, যার মধ্যে একটি তেলের গুদামও সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছে। দমকলের ২০টি ইঞ্জিন রাতভর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও সোমবার সকালেও পকেট ফায়ার জ্বলছিল। এই ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অগ্নিকাণ্ডের বিবরণ ও দমকলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
রবিবার গভীর রাতে খিদিরপুর বাজারে আগুন লাগে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী, রাত ১টা নাগাদ আগুনের খবর দেওয়া হলেও দমকল দেরিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। শুধু তাই নয়, ঘটনাস্থলে আসার পরও ট্যাঙ্কারে জল না থাকায় দীর্ঘক্ষণ আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা যায়নি। ততক্ষণে বাজারের প্রায় ১৩০০ দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন।একজন ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আগুন লাগার ১ থেকে দেড় ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে এসেছে দমকল। পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত খারাপ। ওয়াটগঞ্জ থানার থেকে কোনও সাহায্য মেলেনি।
“আগুন লাগার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তবে দোকানগুলিতে একাধিক দাহ্য পদার্থ মজুত থাকায় দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বাজারের অ্যাসবেস্টাসের ছাউনিগুলো আগুনের তীব্রতায় বেঁকে গিয়েছে।
তৃনমূল সরকারের ভূমিকা : শুভেন্দু অধিকারীর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ ও দামী জমিগুলিতে “পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়ে সেগুলি গরিব ব্যবসায়ীদের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বড় বড় প্রোমোটারদের হাতে তুলে দিচ্ছে সরকার।”
শুভেন্দু অধিকারী নাম করে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং সুজিত বসুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি বলেন, “রাত ১টায় আগুন লাগে, দমকল আসে ভোর ৪টেয়। মুখ্যমন্ত্রী সব জানতেন। কিন্তু আগুন নেভাতে নয়, পুলিশ ও দমকলকে বলেছেন ঘর ভেঙে দাও। গোটা খিদিরপুর বেচে দিয়েছে সরকার। আলিপুর সেন্ট্রাল জেল বেচে দিয়েছে, চিড়িয়াখানা বেচে দিয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়েও তিনি কটাক্ষ করেন। শুভেন্দু বলেন, “আপনারা তো বলেছিলেন, বাংলার মেয়ে মুখ্যমন্ত্রী হোক। তাহলে কেন তাঁকে হাজার পুলিশ দিয়ে আপনাদের ধমকাতে হয়েছে? তিনি গরিব ব্যবসায়ীদের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেননি। জমি রক্ষার আন্দোলনে আমি ডক্টরেট। আমি সিপিএমকে হারিয়ে দিয়েছিলাম নন্দীগ্রামে। মমতাকে হারিয়ে ভবানীপুরে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
‘আগুন লাগিয়ে জমি বিক্রি’: বিজেপি নেতার দাবি
বিজেপি নেতা অর্জুন সিংও খিদিরপুর বাজারে আগুন লাগার ঘটনায় ষড়যন্ত্র দেখছেন। তাঁর দাবি, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির পাশের জেলটার মতো বেসরকারি সংস্থার হাতে এই বাজারটাকেও তুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অর্জুন সিং বলেন, “কলকাতায় সেঞ্চুরি করল আগুন লাগার সংখ্যা। ফিরহাদ হাকিম-সুজিত বসু এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টাইআপ করে এই বাজারগুলোতে আগুন ধরাচ্ছে। বহুদিন ধরে এই বাজারটাকে খালি করানোর চেষ্টা চলছে। কারণ ওখানে বেশিরভাগ সনাতনী হিন্দুদের দোকান আছে।”
‘আমি আপনাদের সঙ্গে আছি’: ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে শুভেন্দু
বগটুই থেকে ঢাকুরিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার উল্লেখ করে শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেন, সরকারি ভ্রান্তনীতির কারণেই আগুন লাগছে। তিনি বলেন, “সরকারি কোনও পদক্ষেপ নেই, সিস্টেম ভেঙে পড়েছে। টালিগঞ্জ-ঢাকুরিয়ার জমিও বিক্রি করে দিচ্ছে। খালি শপিং মল, ফ্ল্যাট, আর গরিব মানুষের উচ্ছেদ।”
তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, “আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। জমি রক্ষার লড়াইয়ে যা যা করার করব।” তিনি জমি ও গরিব ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় আন্দোলনের বার্তাও দেন।
এই বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড খিদিরপুরের অর্থনীতিতে বড়সড় আঘাত হানবে বলে মনে করা হচ্ছে। একইসাথে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।