Rabindra Sarobar drowning incident

ব্যুরো নিউজ ১৬ জুন : রবিবার সকালে কলকাতার রবীন্দ্র সরোবরে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সাঁতার না জানা এক ১৬ বছরের কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। বর্ধমানের দশম শ্রেণির ছাত্র শিবম কুমার সিং তার বন্ধুদের সাথে সরোবর ঘুরতে এসে পাবলিক সুইমিং পুলে নেমে ডুবে যায়। এই ঘটনা রবীন্দ্র সরোবরের উন্মুক্ত জলাশয়গুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

ঘটনার বিবরণ

 ঘটনাটি ঘটে বালিগঞ্জ প্লেসের কাছে রবীন্দ্র সরোবরের একটি পাবলিক সুইমিং পুলে। পুলিশ জানিয়েছে, শিবম তার আত্মীয়ের বাড়িতে এসেছিল এবং রবিবার সকালে তার দুই বন্ধু অভিষেক ও নিখিলকে নিয়ে সরোবর ঘুরতে যায়। ওই দিন সকালে শিবম ও অভিষেক দু’জনেই জলে নামে, যদিও তাদের কেউই সাঁতার জানত না। নিখিলকেও জলে নামতে নিষেধ করা হয়, কারণ সেও সাঁতারু ছিল না।
এক প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা অনুযায়ী, প্রথমে অভিষেক ডুবে যেতে শুরু করলে, এক স্থানীয় সাঁতারু দ্রুত ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে উদ্ধার করেন। কিন্তু ততক্ষণে শিবম নিখোঁজ হয়। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে খোঁজাখুঁজির পর শিবমকে জল থেকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, তার পা জলজ আগাছা ও কচুরিপানায় জড়িয়ে ছিল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।

আলিপুরদুয়ারের জনসভায় মোদীর বার্তা : ‘নির্মম সরকার’কে উপড়ে ফেলে ‘অপারেশন পশ্চিমবঙ্গ’র ডাক!

পরিবারের অভিযোগ ও মামলার দায়ের

এই ঘটনার পরেই শোরগোল পড়ে যায়। শিবমের পরিবার ও স্থানীয়দের তরফে অভিযোগ ওঠে যে, পাবলিক সুইমিং পুলে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না এবং কোনো লাইফগার্ড পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন না। এই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ কেএমডিএ-র (কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি) নিরাপত্তারক্ষী ও কর্মীদের বিরুদ্ধে “অবহেলার ফলে মৃত্যু” ধারায় মামলা রুজু করেছে।
মৃত কিশোরের বাবা অশোক কুমার সিং বর্ধমান থেকে কলকাতায় ছুটে এসে বলেন, “আমার ছেলে দশম শ্রেণিতে পড়ত। শনিবার কিছু জিনিস সংগ্রহ করতে সে কলকাতায় এসেছিল। পরের দিনই ওর ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। জানি না কীভাবে এই ঘটনা ঘটল। ও আমার সঙ্গেই থাকত।”

নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব

 কেএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন একজন দারোয়ান পুলের গেট খোলেন ও বন্ধ করেন, কিন্তু সাঁতারুদের দেখভালের জন্য কেউ নিযুক্ত নন। একজন আধিকারিক জানান যে এই পুলটি সবার জন্য খোলা এবং যারা আসেন, তাদের নিজ দায়িত্বেই সাঁতার কাটতে হয়। এখানে কোনো লাইফগার্ড নেই।
রবীন্দ্র সরোবরে ক্যালকাটা স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন, লেক ফ্রেন্ডস এবং ইন্ডিয়ান লাইফ সেভিং সোসাইটি (ILSS)-এর মতো তিনটি নামী সাঁতার ক্লাব রয়েছে। তারা জলাশয়ের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করলেও, যে অংশটি সাধারণ মানুষের জন্য খোলা, সেখানেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।

মোদী, শুভেন্দু এবং মমতার তরজা : ‘নির্মম সরকার’ এবং ‘সিঁদুর’ রাজনীতিতে উত্তাল বাংলা

পূর্ববর্তী দুর্ঘটনা ও নতুন করে প্রশ্ন

 এখানে আরও একটি জলাশয় রয়েছে, যেটি রোয়িং অনুশীলনের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রায় তিন বছর আগে, আন্তঃস্কুল রেগাটার প্রস্তুতির সময় ঝড়ো আবহাওয়ায় দুই প্রশিক্ষিত ছাত্র—পুষণ সাধুখা ও সৌরদীপ চ্যাটার্জী—ডুবে মারা গিয়েছিলেন। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের এই মৃত্যু নতুন করে খোলা জলাশয়গুলিতে সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর