ব্যুরো নিউজ ,৫ মে: কাশ্মীর উপত্যকার পহেলগাঁও এলাকায় লশকর-এ-তইবা জঙ্গিদের সাম্প্রতিক হামলার নেপথ্যে ছিল একটি সক্রিয় স্থানীয় স্লিপার সেল এমনটাই বিস্ফোরক দাবি করলেন এক প্রাক্তন কাশ্মীরি জঙ্গি, যিনি বর্তমানে আত্মসমর্পণ করেছেন। ‘ইন্ডিয়া টুডে’-কে দেওয়া এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে ওই যুবক বলেন, স্থানীয় স্লিপার সেলের সাহায্য ছাড়া এই হামলা অসম্ভব ছিল।
কিভাবে কাজ করেছে স্লিপার সেল
জঙ্গিদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও, স্লিপার সেলের সদস্যরা কার্যত তাদের ছায়া হয়ে কাজ করে। এই সেলের সদস্যরা নিরাপত্তাবাহিনীর গতিবিধি নজরে রাখে এবং প্রয়োজনীয় সব তথ্য পৌঁছে দেয় জঙ্গিদের কাছে। শুধু তাই নয়, অস্ত্র, খাবার এবং যোগাযোগের ব্যবস্থাও করে তারা। ওই যুবক জানান, হামলার কমপক্ষে এক মাস আগে থেকেই পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল। বৈসরন উপত্যকায় হামলার আগে পুরো এলাকা রেকি করে তথ্য সরবরাহ করেছিল এই সেল।
কাশ্মীর হামলার পর উত্তপ্ত ভারত-পাক সম্পর্ক, রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছে পাকিস্তান
এই প্রাক্তন জঙ্গির দাবি, ‘‘আমি যদি শ্রীনগরে হামলা করতাম, তা হলে তো জানতেই হত কত জন জওয়ান কোথায় রয়েছে। সেটা সম্ভব হত না স্থানীয়দের সাহায্য ছাড়া।’’ তিনি বলেন, পহেলগাঁওয়ের মতো উচ্চ সুরক্ষা বিশিষ্ট এলাকায় সফল হামলার জন্য জঙ্গিদের প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল সুনির্দিষ্ট এবং পূর্বপরিকল্পিত, যার মূল কারিগর ছিল এই স্লিপার সেল।এনআইএ সূত্রে জানা গেছে, এই হামলার পেছনে ছিল লশকর কমান্ডার ফারুক আহমেদের নেটওয়ার্ক। তদন্তকারীদের সন্দেহ, এই নেটওয়ার্কের অন্তত পাঁচ থেকে ছয় জন সক্রিয় সদস্য হামলাকারীদের সাহায্য করেছিলেন।
এই যুবকের বক্তব্যে উঠে আসে আরও অনেক ভয়ানক তথ্য। ২০১৫ সালে মাত্র নাবালক বয়সে ফেসবুকের মাধ্যমে তার স্লিপার সেলে অন্তর্ভুক্তি ঘটে। প্রথমে তাকে জঙ্গলে খাদ্য পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পরে, অস্ত্র ও অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহের কাজেও ব্যবহৃত হয় সে। ধরা পড়ে গেলে, নাবালক হওয়ায় আইনি রেহাই পেয়েছিল সে। তবে, আড়াই বছর জেলে কাটাতে হয়েছিল তাকে।‘‘একসময় ১৩-১৪ জন বন্ধু এনকাউন্টারে মারা গিয়েছিল। আমিও ধরা পড়েছিলাম, তবে এখন বুঝতে পারি, ১১০ শতাংশ ভুল করেছিলাম,’’ স্বীকারোক্তি দেন ওই যুবক।তিনি বলেন, ‘‘এই রকম বহু হামলায় আমি জড়িত ছিলাম। এখন অনুতপ্ত।’’ তার এই বক্তব্য জঙ্গি কার্যকলাপে স্থানীয়দের ভূমিকা ও বাস্তব চিত্র উন্মোচন করছে, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এখন গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পহেলগাঁও হামলার মতো ঘটনা থেকে স্পষ্ট, সীমান্তের ওপার থেকে জঙ্গি অনুপ্রবেশ রুখলেও, যদি স্থানীয়ভাবে জঙ্গিদের সাহায্য করার এই নেটওয়ার্ক কার্যকর থাকে, তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব। এনআইএ এখন ওই স্লিপার সেলের অন্যান্য সদস্যদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, শুধুমাত্র অস্ত্র নয়—তথ্যই যুদ্ধের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। আর সেই তথ্য যদি এলাকার লোকরাই জঙ্গিদের হাতে তুলে দেয়, তাহলে সংকট আরও গভীর হয়।



















