ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ৬ জুনঃ (Latest News)
শহরের জলবায়ুর ক্ষেত্রে বর্ধিত ঝুঁকির কথা স্বীকার করে, বিশ্ব পরিবেশ দিবসে কলকাতার জলবায়ু অ্যাকশন প্ল্যানের কাজ শুরু করার ঘোষণা করল কলকাতা পুরসভা। মুম্বাইয়ের পরে কলকাতা ভারতের দ্বিতীয় শহর যেখানে এই ধরনের প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
এই পরিকল্পনাটি আমাদের শহরকে প্যারিস চুক্তিতে নির্দিষ্ট কার্বন হ্রাসের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করছে পুরসভা। তবে এই পরিকল্পনার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই, কারণ এই পরিকল্পনা অনুসারে টানা কাজ চলবে। বছরখানেক আগেই কলকাতা পুরসভা জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে ক্রমশ পরিবেশবান্ধব জ্বালানি তৈরি করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যেও একটি বড় পদক্ষেপ নেবেই প্রকল্প।
বিশ্ব পরিবেশ দিবসে কলকাতা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, “আমরা প্ল্যানটি নিয়ে কাজ করা শুরু করেছি, যা সারাদেশের বেশ কয়েকটি বিশেষজ্ঞ সংস্থার সহযোগিতায় প্রস্তুত করা হয়েছে, এবং এটির বাস্তবায়নে প্রথম সারির জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিশেষজ্ঞদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে”। তিনি আরও বলেন, “এই পরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করব যে কলকাতা যতদূর সম্ভব তার প্রাকৃতিক ব্যবস্থা লঙ্ঘন না করে উন্নয়ন বজায় রাখে; এবং শহরের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণ কমিয়ে একটি স্থির-নিশ্চিত নগরায়নের পথে হাঁটে।”
এদিনের এই সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী জাভেদ আহমেদ খান, কলকাতা পৌরসভার মেয়র-ইন-কাউন্সিল দেবাশিস কুমার, কলকাতায় জার্মান কনস্যুলেট জেনারেল মিঃ ম্যানফ্রেড অউস্টার, কলকাতায় ব্রিটিশ ডেপুটি হাই কমিশনের ইয়েমি ওদানিয়ে, বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, ইউনিসেফ পশ্চিমবঙ্গের প্রধান ডঃ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, পশ্চিমবঙ্গ দূষণ পর্ষদের চেয়ারম্যান শ্রী কল্যাণ রুদ্র, কলকাতার প্রাক্তন শেরিফ দুলাল বোস, কলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি শ্রী স্নেহাশিস সুর প্রমুখ। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রায় ১০০ জন পরিবেশবিদ, শিক্ষাবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।
জলবায়ু অ্যাকশন প্ল্যান হল একটি বিস্তারিত কর্মসূচী যাতে নির্দিষ্ট কার্যক্রমের রূপরেখা আছে, যা নির্গমন কমাতে এবং প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য পূরণের জন্য অনুসরণ করা যেতে পারে। এই ঘোষণার মাধ্যমে কলকাতা – ভারতের প্রাচীনতম মেট্রোপলিটন শহরগুলির মধ্যে অন্যতম – বিশ্বব্যাপী সেইসব মেগাসিটিগুলির সাথে যোগদান করেছে, যেগুলিতে ইতিমধ্যেই নির্গমন হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মোকাবিলা করার পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে।
এনভায়রনমেন্ট গভর্নড ইন্টিগ্রেটেড অর্গানাইজেশন (ENGIO) এবং ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক সাউথ এশিয়া (CANSA)-র নেতৃত্বে বিশেষ সংস্থা এবং বিশেষজ্ঞদের জোটের প্রযুক্তিগত সহায়তায় কলকাতার জলবায়ু অ্যাকশন প্ল্যান (KCAP)-এর খসড়া আগামী ৬ মাসের মধ্যে কলকাতা পুরসভা তৈরি করবে। এই প্ল্যানটিতে কাজ করার জন্য জলবায়ু জোটের অংশ হল ORF কলকাতা, বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (BCCI), ক্লাইমেট ট্রেন্ডস এবং কলকাতা প্রেস ক্লাব।
জলবায়ু অ্যাকশন প্ল্যানটি ১৫টি ক্ষেত্রের উপর ফোকাস করবে, যা শহুরে বন্যা থেকে শক্তি পর্যন্ত মূল বিষয়গুলিকে কভার করবে। পরিকল্পনাটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জীববৈচিত্র্য, বন্যা, জল সংরক্ষণ, শক্তি দক্ষতা, বায়ুর গুণমান এবং দীর্ঘকালীন যাতায়াতের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে দীর্ঘসময়ের উন্নয়ন ব্যবস্থার মাধ্যমে মোকাবিলা করা ও কম করার উপরেও ফোকাস করবে।
বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন যে কলকাতা, বিশ্বব্যাপী বেঞ্চমার্ক অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। শহরবাসী ইতিমধ্যে ক্রমবর্ধমান তাপপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড় এবং তীব্র বৃষ্টিপাতের সাথে জলবায়ুর প্রভাবের ক্ষতি অনুভব করতে শুরু করেছে। বৈজ্ঞানিক ভবিষ্যদ্বাণী বলছে যে কলকাতার জলবায়ু ঝুঁকি ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
ENGIO থেকে শ্রী জয়ন্ত বসু বলেছেন, “আইআইটি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্যদের মতো প্রথম সারির প্রতিষ্ঠান সহ সারাদেশে অগ্রণী জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি এই পরিকল্পনার নির্দেশিকা তৈরি করবে”। বিধায়ক এবং শহরের মেয়র পরিষদের সদস্য, শ্রী দেবাশীষ কুমার বলেছেন, “আমি শারম এল শেখ সম্মেলনে শহরের প্রতিনিধিত্ব করেছি এবং দেখেছি যে কীভাবে বিশ্বব্যাপী শহরগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কাজ করছে; কলকাতা জলবায়ু অ্যাকশন প্ল্যান একবার প্রস্তুত হয়ে গেলে শহরের জন্য ঝুঁকি মোকাবেলায় একটি কার্যকরী হাতিয়ার হবে”। সুন্দরবনের ক্ষয়-ক্ষতির নির্ধারণ শুরু করা হয়েছে।
রাজ্যের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী জনাব জাভেদ আহমেদ খানও বৈঠকে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে একটি কাজ শুরু করেছেন। “আমরা সম্প্রতি সুন্দরবন পরিদর্শন করেছি এবং দেখেছি যে জলবায়ুর মাত্রা এই এলাকায় দুর্যোগের প্রভাব সৃষ্টি করেছে; যা বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সুন্দরবনের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন চালু করার প্রচেষ্টায় EnGIO-কে সমর্থন করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে, আমাদের মনে রাখতে হবে যদি না সুন্দরবনকে বাঁচানো যায়; কলকাতাও সমস্যায় পড়বে”, এই বৈঠকে জনাব খান বলেছেন।
CANSA-এর শ্রী সঞ্জয় বশিষ্ট বলেছেন, “আমরা আশা করি যে কলকাতা এবং সুন্দরবন সম্পর্কিত কাজগুলি একটি যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত হবে এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও কলকাতা পৌরসভাকে দুবাইতে পরবর্তী COP 28-এ সেগুলি তুলে ধরতে সাহায্য করার পরিকল্পনা করা হবে।”
“কলকাতা আজ বন্যা, তাপ ঝুঁকি এবং চরম আবহাওয়ার উচ্চ হুমকির সম্মুখীন, যে অ্যাকশন প্ল্যানটি তৈরি হচ্ছে এই ধরনের জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য, সেটির উচ্ত হবে একটি রূপরেখা প্রদান করা এবং হুমকির মধ্যে বসবাসকারী দুর্বল জনগোষ্ঠীর মতামতও তাতে যোগ করা। নির্গমন হ্রাস এবং সবুজ শক্তিতে স্থানান্তর করার উপরে ফোকাস করাও, রাজ্য এবং দেশের নেট-জিরো লক্ষ্যে অবদান রাখবে,” বলেছেন ক্লাইমেট ট্রেন্ডস-এর ডিরেক্টর শ্রীমতি আরতি খোসলা। (EVM News)