tulasi pujan 25th december

ব্যুরো নিউজ, ২৫শে ডিসেম্বর ২০২৫ : ভারতবর্ষের মাটি ও মানুষের আত্মায় তুলসী কেবল একটি গাছ নয়, বরং সজীব ঐতিহ্যের প্রতীক। যুগ যুগ ধরে তুলসী আমাদের আঙিনায় নিঃশব্দ প্রহরীর মতো অবস্থান করছে। আজ ২৫শে ডিসেম্বর, বিশ্ব যখন বাহ্যিক উদ্‌যাপন আর ভোগবিলাসে মগ্ন, তখন ভারতীয় সংস্কৃতি আমাদের ডাক দিচ্ছে প্রকৃতির কোলে ফেরার—’তুলসী দিবস’ পালনের মাধ্যমে।

কেন ২৫শে ডিসেম্বর তুলসী দিবস?

প্রতি বছর ২৫শে ডিসেম্বর দিনটি নির্দিষ্ট করা হয়েছে আধুনিক সমাজকে পুনরায় নিজেদের আধ্যাত্মিক ও বৈজ্ঞানিক শিকড়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। যখন চারদিকে বস্তুবাদী জাঁকজমক তুঙ্গে, ঠিক সেই সময়ে তুলসী দিবস আমাদের শেখায় সংযম, সেবা এবং পরিবেশ সংরক্ষণের পাঠ। এটি বাহ্যিক চাকচিক্য ত্যাগ করে অন্তরের শুদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করার এক শুভ প্রয়াস।

Tulsi : শালীগ্রাম ও তুলসী: প্রেম, ধর্ম ও ত্যাগের এক অনন্ত বন্ধন।

ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক প্রেক্ষাপট: স্বয়ং দেবীর রূপ

হিন্দু শাস্ত্র মতে, তুলসী দেবী বিষ্ণুপ্রিয়া। ভগবান বিষ্ণুর আরাধনা তুলসী ছাড়া অপূর্ণ। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, যেখানে তুলসী মঞ্চ থাকে, সেখানে নেতিবাচক শক্তি প্রবেশ করতে পারে না। তুলসীর সান্নিধ্যে ধ্যান করলে মন স্থির হয় এবং আত্মার শান্তি মেলে। এই দিবসটি তাই কেবল পুজোর দিন নয়, বরং আধ্যাত্মিক আত্মশুদ্ধির একটি উৎসব।

পৌরাণিক উপাখ্যান: বৃন্দার ত্যাগ ও নিষ্ঠা

পুরাণের কাহিনী অনুসারে, পরম সতী বৃন্দার তপস্যা ও পবিত্রতায় মুগ্ধ হয়ে ভগবান বিষ্ণু তাঁকে আশীর্বাদ করেছিলেন। সেই বৃন্দাই মর্ত্যে তুলসী রূপে আবির্ভূত হন। কলিযুগে তিনি শ্রীবিষ্ণুর সমতুল্য পূজিতা। এই কাহিনী আসলে নারীশক্তি, ত্যাগ এবং আত্মিক পবিত্রতার জয়গান গায়, যা তুলসী দিবসের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।

শুদ্ধিকরণ ও সাত্ত্বিকতা:

হিন্দুধর্মে তুলসীকে পরম পবিত্র বলে মনে করা হয়। মনে করা হয়, রান্না করা বা অর্পণ করা খাদ্যে যদি কোনো ত্রুটি থাকে, তবে একটি তুলসী পাতা তাতে স্পর্শ করামাত্র সেই খাদ্যটি সমস্ত অপবিত্রতা মুক্ত হয়ে ‘মহাপ্রসাদে’ পরিণত হয়। এটি ভোগের মধ্যে সাত্ত্বিক গুণ সঞ্চার করে।

বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে তুলসী: একটি জীবন্ত ঔষধালয়

আধুনিক বিজ্ঞানও আজ মেনে নিয়েছে যে তুলসী একটি শক্তিশালী ভেষজ উদ্ভিদ। আয়ুর্বেদে একে ‘রসায়ন’ বলা হয়, যা শরীর ও মনের ভারসাম্য রক্ষা করে।

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: তুলসী শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Immunity) বাড়াতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

  • মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষা: বর্তমানে দুশ্চিন্তা ও অবসাদগ্রস্ত জীবনে তুলসীর সুগন্ধ এবং তার সান্নিধ্য স্নায়ুকে শান্ত করে। এটি কোনও অন্ধবিশ্বাস নয়, বরং এক জৈবিক প্রক্রিয়া।

পরিবেশগত গুরুত্ব

তুলসী কেবল আধ্যাত্মিক নয়, বরং পরিবেশের এক মহান বন্ধু। নিচে এর উপকারিতাগুলি দেওয়া হলো:

বিষয়বিবরণ
বায়ু শোধনবাতাস থেকে ক্ষতিকারক উপাদান দূর করতে সাহায্য করে।
অক্সিজেনের ভারসাম্যপরিবেশে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করে।
জীববৈচিত্র্যপরাগায়নে সাহায্যকারী পতঙ্গদের আকর্ষণ করে ভারসাম্য বজায় রাখে।

Vishnu Mohini : হরির মোহিনী রূপ: মোহ নয়, এ হলো সৃষ্টির রহস্য

উপসংহার

তুলসী দিবস আমাদের শেখায় যে প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রাখাই হলো প্রকৃত উন্নতি। আজকের এই বিশেষ দিনে একটি তুলসী চারা রোপণ করা কেবল প্রথা নয়, বরং সুস্থ আগামীর অঙ্গীকার। আসুন, এই ২৫শে ডিসেম্বর আমরা ভোগবাদ থেকে বেরিয়ে জীবনের ভারসাম্য ও আধ্যাত্মিক চেতনার জয়গান গাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর