ব্যুরো নিউজ, ১৮ সেপ্টেম্বর: রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ টোটো চালকদের। পঞ্চায়েতের টোটো শহরে প্রবেশ করতে না দেওয়ার নির্দেশিকায় দুমকা রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ।
১৬ সেপ্টেম্বর থেকে রামপুরহাট শহর এলাকায় পঞ্চায়েতের কোনও টোটো প্রবেশ করবে না। এমনই নির্দেশিকা জারি করে রামপুরহাট পুরসভা। তারই জেড়ে রবিবার রামপুরহাট শহর সংলগ্ন আশেপাশের প্রায় ২৫-৩০টি গ্রামের হাজার খানের টোটো চালকরা রামপুরহাটের বর্ডার ঝনঝনিয়া মোড়ের কাছে রামপুরহাট দুমকা রোড অবরোধ করে।
মাছের তেলেই মাছ ভাঁজছে প্রশাসন?
পঞ্চায়েতের টোটো চালকদের দাবি, এই ধরনের নির্দেশিকা জারি করার আগে পঞ্চায়েত এলাকার টোটো চালকদের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা করেনি প্রশাসন। পাশাপাশি আমরা দীর্ঘদিন ধরে পঞ্চায়েত ও পুরএলাকায় টোটো চালিয়ে জীবন চালাই। আজকে হঠাৎ করে পুরসভা ও মহকুমা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে আমরা চরম বিপদের সম্মুখীন হচ্ছি। প্রতিটি টোটো চালক ব্যাঙ্কের মাধ্যমে লোন নিয়ে গাড়ি কিনে টোটো চালাচ্ছে। এমতবস্থায় পুরসভা ও মহকুমা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে প্রায় হাজার খানে টোটো চালকের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাই আমরা সকল টোটো চালক মিলে পুরসভা ও পঞ্চায়েতের বর্ডার ঝনঝনিয়া সাঁকো অবরোধ করেছি।
বর্ষাকালে ছ’মাস হাঁটু জল থাকে!
বীরভূমের সঙ্গে দুমকা যাবার একমাত্র রাস্তা টোটো চালকদের দ্বারা অবরোধের জন্য রামপুরহাট ধুমকারুটের সমস্ত বাস ও পাথর শিল্পাঞ্চলের সমস্ত গাড়ি অবরুদ্ধ। রামপুরহাট থানার পক্ষ থেকে সেখানে পুলিশ পাঠানো হলেও তাদের অবরোধ তোলা সম্ভব হয়নি। ওই রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। আটকে পরে রুটের বাস থেকে শুরু করে পাথর শিল্পাঞ্চলে যাওয়া বিভিন্ন গাড়ি, টোটো, অটো এমনকি যাত্রীবোঝাই বিভিন্ন গাড়িও।
পঞ্চায়েত এলাকার টোটো চালক রিন্টু আলী জানান, আমরা দীর্ঘদিন ধরে পুরএলাকায় টোটো চালিয়ে আসছি। পুরসভার তরফ থেকে যে সমস্ত নিয়ম কানুন আছে তা আমরা সব কিছুই মেনে চলি। কিন্তু হঠাৎ করে মহকুমা প্রশাসন ও পুরপ্রশাসনের পক্ষ থেকে যে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে তা আমরা মানতে নারাজ। কারণ, আমরা পঞ্চায়েত এলাকা থেকে প্যাসেঞ্জার নিয়ে পুরএলাকার বিভিন্ন অফিস, আদালত, হাসপাতাল সবকিছুতে যাত্রীদের নিয়ে যাই। তাতে আমাদের জীবন জীবিকা নির্বাহিত হয়। এখন যদি পুরসভার নির্দেশিকা অনুযায়ী পঞ্চায়েত এলাকার কোনও টোটো পুরসভায় প্রবেশ না করে তাহলে আমাদের এক বা দুই কিলোমিটার রাস্তা আমরা টোটো চালাতে পারব। এতে আমাদের যাত্রী সংখ্যা কমে যাবে। পাশাপাশি কমে যাবে রোজগারও। তাই যদি পুরসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পঞ্চায়েত এলাকার কোনও টোটো পুরসভায় প্রবেশ না করে তাহলে আমরাও পঞ্চায়েতে এলাকার টোটো চালকরা এভাবেই রাস্তা অবরোধ করে রাখবো। রামপুরহাট পুরসভার কোনও গাড়ি পঞ্চায়েত এলাকার রাস্তার ওপর দিয়ে যেতে দেব না। এমনকি পুরসভার ভাগাড় রয়েছে পঞ্চায়েত এলাকায়। সেখানেও পুরসভার কোনও গাড়ি আমরা প্রবেশ করতে দেবো না। পুরসভার পানীয় জলের ব্যবস্থা রয়েছে পঞ্চায়েত এলাকায় সেখানেও আমরা অবস্থান-বিক্ষোভে বসবো। যাতে পঞ্চায়েত এলাকা থেকে পুরসভার পানীয় জলের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
প্রায় দেড় মাস বন্ধ পোস্ট অফিস | ভোগান্তির শিকার সাধারণ মানুষ
অন্য টোটো চালক সালাউদ্দিন শেখ জানান, পুরসভা ও মহকুমা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছি। আমরা পঞ্চায়েত এলাকার টোটো চালকরা সকলেই বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে টোটো কিনে জীবিকা নির্বাহ করছিলাম। এই নির্দেশিকার ফলে আমরা কর্মহীন হয়ে পড়বো। আমাদের রোজগারেও টান পড়বে। এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের ডেপুটি স্পিকার আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রশাসনিক এই মিটিংয়ে ছিলেন, তিনি কেনো এই ধরনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেননি সে ব্যাপারেও মন্তব্য করেন সালাউদ্দিন শেখ। আশেপাশে প্রতিটি গ্রামেরই পঞ্চায়েতগুলি তৃণমূলের দখলে। আমরা প্রত্যেকটা টোটো চালকই তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত তবুও বিধায়ক ও পুরপতির এই ধরনের সিদ্ধান্ত আশা করা যায়নি।
সালাউদ্দিন রনি শাহ অন্যান্য টোটো চালকরা একসাথে দাবি করেন, যেভাবে আগে জোড় বিজোর টোটো শহরে চলত সেইভাবে পঞ্চায়েত এলাকার টোটো চালকদের নিয়ে টোটো চালাতে হবে। পাশাপাশি যে সমস্ত নিয়ম কানুন প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে সেগুলি সবই মেনে চলবে পঞ্চায়েত এলাকার টোটো চালকরা তা না হলে আগামীদিনে আমরা পুরএলাকার কোনও গাড়ি যানবাহন পঞ্চায়েত এলাকার উপর দিয়ে চলাচল করতে দেব না। আন্দোলন আরও বৃহত্তর হবে। আমরা টোটো না চালিয়ে সারাদিন এভাবেই রাস্তা অবরোধ করে রাখবো দিনের পর দিন পুরপরিষেবাকে ব্যাহত করে দেব।
পুরসভার ভাগারে মাল ফেলতে দেবো না পুরসভার পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ করে দেব। আগামীকাল সোমবার আমরা আমাদের দাবি নিয়ে মহকুমা শাসকের দফতরে যাব। যদি সেখানে কোনওরকম কোনও উত্তর না পাওয়া যায় তাহলে আমাদের এই আন্দোলন আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।
টোটো চালকদের এই আন্দোলনের জেরে প্রায় ৫-৬ ঘন্টা ধরে রামপুরহাট দমকা রোডের যান চলাচল ব্যাহত হয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে পুলিশ এলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যার্থ হন। টোটো চালকরা দাবি করেন ৪-৫ ঘণ্টা অবরোধ করার পরেও প্রশাসনিক তরফে কোনওরকম আশ্বাস আমাদের দেওয়া হয়নি। ঊর্ধ্বতন কোনও প্রশাসনিক আধিকারিক আমাদের সঙ্গে এসে কথা বলেননি। তাই আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রশাসনের তরফ থেকে কেউ আমাদের সঙ্গে এসে কথা বলে আমাদের দাবি মেনে নেয়।
এ ব্যাপারে রামপুরহাট মহকুমা শাসক সাদ্দাম নাভাসকে ঘটনার বিষয় জানিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ব্যাপারটি শুনলাম। এবং ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি। ইভিএম নিউজ