ব্যুরো নিউজ, ৯ জানুয়ারি: রাষ্ট্রনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর শিক্ষাজীবন
সুভাষচন্দ্র বসু ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্গত বাংলা প্রদেশের উড়িষ্যার কটকে বিখ্যাত কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন তার মাতা প্রভাবতী দেবী ও পিতা জানকীনাথ বসুর চৌদ্দ সন্তানের মধ্যে নবম তথা ষষ্ঠ পুত্র। তাঁর বাবা জানকীনাথ বসু ছিলেন একজন সফল সরকারি আইনজীবী। তিনি ভাষা ও আইন সম্পর্কিত বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন।
ছোটবেলায় তিনি ষষ্ট শ্রেণী পর্যন্ত কটকের প্রোটেস্ট্যান্ট ইউরোপীয় স্কুলে পড়াশোনা করেন। বিদ্যালয়টিতে সমস্ত শিক্ষাদানের মাধ্যম ছিল ইংরেজিতে। সেই বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে লাতিন, বাইবেল, সহবত শিক্ষা, ব্রিটিশ ভূগোল ও ব্রিটিশ ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত থাকলেও, কোন ভারতীয় ভাষায় শিক্ষাদানের ব্যাবস্থা ছিল না। এই বিদ্যালয় তার পিতা জানকীনাথের পছন্দ ছিল। কারণ তিনি চেয়েছিলেন তার ছেলেরা যেন নির্দ্বিধায় ত্রুটিহীন ইংরেজি বলতে পারে। ভারতে ব্রিটিশদের মাঝে থাকার জন্য তিনি বাংলা ইংরেজি উভয় ভাষাকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করতেন। তাঁর বাড়িতে কেবলমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলা হত। বাড়িতে, তার মা হিন্দু দেবীর উপাসনা করতেন। মহাকাব্য থেকে গল্প বলতেন ও বাংলা ভক্তিগীতি গাইতেন। মায়ের কাছ থেকে সুভাষ একটি স্নেহশীল স্বভাব লাভ করেন। তিনি দুর্দশাগ্রস্ত লোকেদের সাহায্য করতেন ও প্রতিবেশী ছেলেদের সাথে খেলাধুলা করতে ভালোবাসতেন।
এরপর সুভাষচন্দ্র ১২ বছর বয়সে কটকের রাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুলে বাংলা ও সংস্কৃত শেখানো হত ও পাশাপাশি হিন্দু ধর্মগ্রন্থ যেমন বেদ ও উপনিষদ সম্পর্কে পড়ানো হতো। সেই সময় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রচলন থাকলেও, তিনি ভারতীয় পোশাক পরতেন। শত ব্যাস্ততা থাকা সত্ত্বেও, সুভাষচন্দ্র বসু পড়াশোনায় মনোযোগ , প্রতিযোগিতা ও পরীক্ষায় সফল হওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষতা প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি ১৯১২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত ম্যাট্রিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। এরপর তিনি ১৯১৩ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। তিনি দর্শনকে অধ্যয়ন বিষয় হিসাবে নির্বাচিত করেন।
সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেয়ে তিনি প্রায় নিয়োগপত্র পেয়েই গিয়েছিলেন। কিন্তু বিপ্লব-সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সেই নিয়োগ তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, “কোনো সরকারের সমাপ্তি ঘোষণা করার সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা হল তা থেকে (নিজেকে) প্রত্যাহার করে নেওয়া”। নেতাজীর শিক্ষাগুরু ছিলেন বেণীমাধব দাস। আবার রাজনৈতিক গুরু ছিলেন আমাদের সবার পরিচিত দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস। আর যদি আধ্যাত্মিক গুরুর নাম বলা যায় তাহলে স্বামী বিবেকানন্দের নাম বলতে হয়। যার প্রেরণা নেতাজীকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে উৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। সর্বোপরি তিনি ছিলেন এমন একজন দেশপ্রমিক ও নেতা, যাঁর জন্য প্রতিটি ভারতবাসী গর্ববোধ করেন ও এখনও আশায় বুক বেঁধে বসে আছে এই ভেবে একদিন “নেতাজী ফিরবে নেতার বেশেই”। ইভিএম নিউজ