দুর্গা
ব্যুরো নিউজ, ১৯ অক্টোবর: মেদিনীপুরে মা দুর্গার আরাধনায় চমক 

কাঁথি শহরের কিশোর নগর গড় রাজবাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও পশ্চিমমুখী ঘটে দেবী দুর্গার আরাধনা হয় না।      এটি হোল এখানকার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মা এখানে পূজিত হন পশ্চিমমুখী ঘটে। এর পিছনে রয়েছে চমকপ্রদ কাহিনী। স্বপ্নে দেখা দিয়ে মা দুর্গেশ নন্দিনী মর্ত্যলোকে তাঁর আরাধনার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে প্রায় ৩০০ বছর আগের কথা। মাতৃ আদেশ পেয়েই কাঁথির কিশোরনগরগড়ে দুর্গা পুজোর প্রচলন করেছিলেন চৌধুরী রাজবংশ। নিতান্ত এই পারিবারিক পুজো কালের হাত ধরে সার্বজনীন হয়ে উঠেছে। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার অন্যতম প্রাচীন পুজো এটি। রাজত্ব, আর্থিক প্রতিপত্তি সব কিছুই চৌধুরী পরিবারের কাছে অতীত। তবে তিন শতাব্দীর ইতিহাস সঙ্গে নিয়ে বদলায়নি পুজোর রীতিনীতি, আচার অনুষ্ঠান। প্রাচীন এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, এখানে মায়ের ঘট থাকে পশ্চিমমুখী।
পাহাড় ঘেরা ঘন জঙ্গলে রাজপ্রাসাদ | পুরনো রীতিতেই চলছে পুজো

জনশ্রুতি রয়েছে, এই রাজ বাড়ির পূর্বপুরুষ রাজা যাদবরাম রায়, দেবী মায়ের স্বপ্নাদেশে দুর্গাপুজোর প্রচলন শুরু করেন। রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্য দেবজ্যোতি রায় বলেন, ‘‘প্রায় ১৭২০ সালে প্রথম এই পুজো শুরু হয়। স্বর্গীয় রাজা যাদবরাম রায় দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশে পুজো শুরু করেন। প্রতি বছর মহিষ বলি দেওয়া হত। মহিষ বলি চালু ছিল প্রায় ২৬৫ বছর। ১৯৮৫ সালের বন্যায় রাজবাড়ির গোশালা ভেঙে পড়ে। গোশালায় দেবীর উৎসর্গীকৃত মহিষ দেওয়াল চাপা পড়ে মারা যায়। সে বছর থেকেই পশুবলি বন্ধ হয়ে যায়। পশু বলির পরিবর্তে আখ ও চাল কুমড়ো বলি শুরু হয় সেই বছর থেকে’’।

এই রাজপরিবারের সদস্য তথা প্রাক্তন পৌর প্রতিনিধি কৃষ্ণা মিত্র চৌধুরী বলেন, “দেবীর পুজোর শুরু থেকে পশ্চিমমুখী ঘট স্থাপন হতো না। পশ্চিম মুখী ঘট স্থাপন হয় পুজো শুরু হওয়ার আরও ২০-২৫ বছর পর। শোনা যায়, পুজোর চার দিন দেবী মায়ের আরাধনার পাশাপাশি, দেবী বন্দনা হতো। ব্রাহ্মণরা পুজোর চারদিন দেবী বন্দনা গান করতেন। সে দিন দেবীর চক্ষুদান করা হয়। নিয়ম মেনেই মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী সন্ধিপুজো, মহানবমী এবং দশমীর পুজো ও বিসর্জন হয়। মহাষ্টমীর দিন অঞ্জলি দেওয়ার জন্য মানুষজন

ভিড় করে আসে এই রাজ বাড়ির দালানে। নিয়ম মেনেই সন্ধিপুজো হয় ১০০টি প্রদীপ জ্বালিয়ে। দেবীকে কাজুবাদাম দিয়ে হাতে তৈরি এক প্রকার সন্দেশ ভোগ দেওয়া হয়। এই সন্দেশ ভোগ কাঁথির আর কোনও পুজোতে দেওয়া হয় না। সন্দেশ প্রসাদ লাভের জন্য মানুষের ভিড় জমে। বর্তমানে এই বিশেষ ভোগের জন্য টিকিটের ব্যবস্থা চালু হয়েছে। প্রাচীন বনেদি বাড়ি বা রাজপরিবারের পুজো মানেই পরিবারের মিলন উৎসব। পুজোর কটা দিন বাড়িতে হৈ হুল্লোড়ের সাথে সদস্যদের মধ্যে জমিয়ে আড্ডাতে মেতে ওঠে পরিবারের সদস্যরা। দিব্যজ্যোতি রায় এই রাজপরিবারের বর্তমান প্রজন্মদের একজন। তিনি বলেন, ‘‘পুজোর সময়ে পরিবারের সব সদস্যই বাড়িতে থাকে। কাজের সূত্রে ভিন্‌ রাজ্যে বা বিদেশে থাকা রাজ পরিবারের সদস্যরা ষষ্ঠীর আগেই বাড়িতে ফিরে আসে। পুজোর কটা দিন সবাই মেতে ওঠে আনন্দে’’। ইভিএম নিউজ 

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর