ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ২৯ এপ্রিলঃ (Latest News) মমতার তৈরি দাঁড়িপাল্লায় একদিকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আর অন্যদিকে নারীর ওপর অত্যাচার। মনীষীরা উপলব্ধি করেছিলেন নারী জাতির উন্নয়ন ব্যতিত রাষ্ট্রের উন্নতি সম্ভব নয়। বিদ্যাসাগর থেকে শুরু করে রাজা রামমোহন রায়, উদ্যোগী হয়েছেন নারীকেন্দ্রিক সামাজিক কুসংস্কার দূরীকরণে। যে বাংলা রানী রাসমণি, মাতঙ্গিনী হাজরা, ডঃ পূর্ণিমা সিনহা, ডঃ অসীমা চট্টোপাধ্যায়, সরলা দেবী চৌধুরানী, স্বর্ণকুমারী দেবী, ডঃকাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়, তরু দত্ত, অবলা বসু, সারদা দেবীদের হাত ধরে নারী সশক্তিকরণের চিত্র দেখেছে, দুর্ভাগ্যবশত সেই বাংলাই একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর শাসনকালে দেখেছে পার্কস্ট্রিট ধর্ষণ , কামদুনির ধর্ষণ কাণ্ডে প্রতিবাদী গৃহবধূকে মাওবাদী তকমা, বীরভূমের আদিবাসী কিশোরীকে সালিশি সভায় গণধর্ষণের নিদান, রানাঘাটে ৭৪ বছরের বৃদ্ধা সিস্টারকে ধর্ষণ, কোন্নগরে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধাকে ধর্ষণ এবং সম্প্রতি উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের মতো ঘটনা।

২০১১ সালে ৩৪ বছরের বাম সরকারের অবসান ঘটিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির ইতিহাসে প্রথমবার একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। ৮ থেকে ৮০ সকলে ভেবেছিলেন আর যাই হোক মহিলাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবেন রাজ্যের মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে ঠিক তার উল্টোটা।

সুজেট জর্ডন নামে পার্কস্ট্রিটের এক পানশালায় আলাপ হওয়া এক মহিলাকে নামিয়ে দেওয়ার অছিলায় গাড়িতে তুলে ধর্ষণ করে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ তথা টলিউড সুপারস্টার নুসরত জাহানের প্রাক্তন প্রেমিক কাদের এবং তার সঙ্গিরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন সবে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেছেন। কিন্তু সুজেট জর্ডনের এই ঘটনাকে তিনি ‘সাজানো’ বলে অভিহিত করেন। সে সময় শাসকদলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-নেত্রীরাও অসম্মানজনক কথা বলেছিলেন সুজেটকে। সে সময় পুলিশ অফিসার দময়ন্তী সেনকে গোটা ঘটনার সত্যতা সামনে আনার অপরাধে সরানো হয় তাঁর দায়িত্ব থেকেও।

২০১৩ সালের ৭ই জুন ২০ বছর বয়সী এক কলেজ ছাত্রীকে  অপহরণ, গণধর্ষণ ও খুন করা হয়। এই ঘটনায় দুই প্রতিবাদী গৃহবধূ টুম্পা কয়াল এবং মৌসুমি কয়াল মুখ্যমন্ত্রীকে ধর্ষকদের সাজার দাবী জানালে তাদের মাওবাদী তকমা জোটে। এই ঘটনার কারণ হিসেবে বারাসাতের তৃণমূল বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তী মেয়েদের পোশাক পড়াকে দায়ী করেছিলেন।বারাসতের বিধায়কের যুক্তি মেনে যদি পোশাকের সমস্যার কারণে মেয়েরা ধর্ষিত হয় তবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ৮ বছরের একটি শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছিল কি কারণে ?

২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি বীরভূম জেলার সুবলপুর গ্রামে একটি ২০ বছরের আদিবাসী কিশোরীকে অন্য সম্প্রদায়ের একটি ছেলের সাথে সম্পর্কে যুক্ত থাকার অভিযোগে সালিশি সভা ডেকে গণধর্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

নদীয়ার হাঁসখালি থানার গাজনা এলাকায় জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নাবালিকা প্রেমিকাকে আমন্ত্রণ করে মদ্যপান করিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল তার প্রেমিক যুবকের বিরুদ্ধে। পরে মৃত্যুও হয় ওই নাবালিকার। কিন্তু বিতর্ক তৈরি হয় মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে। তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি রেপড বলবেন নাকি লাভ অ্যাফেয়ার্স বলবেন’? প্রশ্ন উঠেছিল, তবে কি একজন প্রেমিক তার প্রেমিকাকে ধর্ষণ করে খুন করতে পারে?

সম্প্রতি উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় তো উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা কালিয়াগঞ্জ। ঘটনার প্রতিবাদে উন্মত্ত জনতাকে  থানাতেও অগ্নিসংযোগ ঘটাতেও দেখা যায়। মৃত্যু হয় এক ৩৩ বছর বয়সী এক যুবকেরও।

সত্তরোর্ধ বৃদ্ধাও ধর্ষণের শিকার হবে একটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও আমাদের রাজ্য এমন ঘটনার সাক্ষী থেকেছে। ২০১৫ সালে রানাঘাটের গাংনাপুরের একটি মিশনারি স্কুলে লুঠপাটে বাধা দিতে গেলে দুষ্কৃতীরা ৭৪ বছরের বৃদ্ধা সিস্টারকে ধর্ষণ করে। ২০১৬ সালে কোন্নগরে একটি বাড়িতে ডাকাতি করতে এসে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করা হয়। সে সময় এই ঘটনায় নজরে এসেছিল তদন্তে প্রশাসনের গাফিলতির ঘটনাও। ২০১৮ সালে বর্ধমানে এক ৭০ বছরের বৃদ্ধাকে প্রথমে মা বলে সম্বোধন করে চা খাওনোর ছল করে তাকে নির্জন এলাকায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছিল।

শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনাতেও কোন অংশে পিছিয়ে নেই বাংলা।  তথ্যের ভিত্তিতে বিগত এক দশকে নারীদের উপর অত্যাচারের তালিকা দেখলে বোঝা যাবে যে বেশিরভাগ নির্যাতিতা মহিলা, নাবালিকা বা শিশুরা সমাজের অনুন্নত শ্রেণীর লোক।

পশ্চিমবঙ্গ সরকার আর্থিক দিক থেকে অনগ্রসর পরিবারগুলির প্রধান মহিলা সদস্যের হাতে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা আর্থিক সাহায্য তুলে দেওয়ার জন্যে চালু করেছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প। যদিও বিরোধীরা এই উদ্যোগকে ভোটে জেতার রসদ বলে কটাক্ষ করে থাকে। আধুনিক যুগের মহিলারা বর্তমানে ঘরের ভিতরে বন্দী না থেকে বাইরে বেরিয়ে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছেন। মহিলারা আগের চেয়েও অনেক এগিয়ে চলেছেন সাফল্যের সঙ্গে। বহু মহিলাই রয়েছেন যারা কেবলমাত্র গৃহকর্ম সম্পাদন ছাড়াও কোন পেশার সঙ্গে যুক্ত হতে চান। কিন্তু তার জন্যে প্রয়োজন কর্মসংস্থান। কিন্তু সে ব্যবস্থা করেছেন রাজ্যের মহিলা মুখ্যমন্ত্রী? ইতিমধ্যেই বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সাধারণ মানুষের মনেও একই প্রশ্ন, যে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে পারেন না, ধর্ষণের ঘটনায় মহিলাদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, ছোট ঘটনা বলে উল্লেখ করেন, তাঁর জমানায় এরাজ্যে মহিলারা সত্যিই কি নিরাপদ? (EVM News)

আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে সম্ভাব্য ফলাফল কি হতে চলেছে উত্তর দিনাজপুরে ? EVM News -এর প্রাক পঞ্চায়েত সমীক্ষা দেখুন

আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে সম্ভাব্য ফলাফল কি হতে চলেছে শুভেন্দু অধিকারীর গড় বলে পরিচিত পূর্ব মেদিনীপুরে ? EVM News -এর প্রাক পঞ্চায়েত সমীক্ষা দেখুন

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর