ইভিএম নিউজ, ১৩ মার্চঃ আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু রীতিমতো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেছিলেন যে ‘গাছেরও প্রাণ আছে’। আর আধুনিক বিজ্ঞানীরা আরও একটু এগিয়ে প্রমাণ করেছেন যে কাছাকাছি থাকা গাছেরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং প্রতিবেশী কোনও গাছে খাদ্যাভাব দেখা দিলে নিজেরা শেকড়ের মাধ্যমে খাদ্য পাঠানোর চেষ্টা করে। আর এবার গবেষণায় জানা গেল কোনও বিপদে পড়লেও গাছেরা একে অপরকে সতর্ক করে দেয়। আফ্রিকার আকাসিয়া প্রজাতির গাছেদের ওপর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে এই তথ্য জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। আফ্রিকার বিখ্যাত সাভানা তৃণভূমি জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই আকাসিয়ার কান্ড কারখানা শুনলে অবাক হয়ে যেতে হয়।
কোনও প্রাণী বিপদে পরলে তখন সেই প্রাণীর আর্তনাদে অন্য প্রাণী ছুটে এসে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। তাছাড়া নানা ভঙ্গিমায় তারা বিপদ সম্বন্ধে আগে থেকেই সতর্ক করে দেয়। কিন্তু একটা উদ্ভিদ কি করে তার বিপদ সংকেত অন্য গাছেদের কাছে পৌঁছে দেবে? এও কি সম্ভব?
বিজ্ঞানীরা কিন্তু বলছেন, সম্ভব। আফ্রিকার জঙ্গলে থাকা কোনও হরিণ বা জিরাফ কিংবা অন্য কোনও তৃণভোজী প্রাণী এই আকাসিয়া গাছের পাতা খাওয়া শুরু করলে তখন গাছ তার পাতা রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। সেইসময় সে তার শরীরে থাকা ট্যানিন নামক একটি টক্সিক পদার্থ বেশী পরিমাণে তৈরি করতে শুরু করে নিজের শরীরে। উলেক্ষ্য, এই ট্যানিন মানুশ তার শরীরে গ্রহন করে চা খাওার সময়। কারণ চায়ে স্বল্প পরিমাণে ট্যানিন পাওয়া যায়। কিন্তু এই ট্যানিন কি? ট্যানিন হলো উদ্ভিদের নাইট্রোজেন বিহীন রেচন পদার্থ। আর এই টক্সিক পদার্থের জন্যই তৃণভোজী প্রাণীরা আকাসিয়া গাছ থেকে দূরে চলে যায়। এখানেই শেষ নয়। সেই আকাসিয়া গাছ আবার আশেপাশে থাকা অন্য আকাসিয়া গাছকেও আক্রমণ থেকে বাঁচতে সতর্ক করতে শুরু করে।
কোনও তৃণভোজী প্রাণী যে আকাসিয়া গাছের পাতা খেতে গিয়েছিল সেই গাছই ইথিলিন গ্যাস নির্গত করে বিপদ জানান দিতে শুরু করে। ফলে দ্রুত ইথিলিন গ্যাস বাতাসের সঙ্গে মিশে অন্যান্য আকাসিয়া গাছ পর্যন্ত সহজেই পৌঁছে যায়। তারপর এই ইথিলিন গ্যাস অন্যান্য আকাসিয়া গাছের সংস্পর্শে এলে সেই গাছগুলি বুঝে যায় যে কোনও বিপদ আসছে। তখন তারাও অত্যধিক মাত্রায় ট্যানিন উৎপাদন করতে থাকে।
এর ফলে তৃণভোজী প্রাণীরা এই অত্যধিক মাত্রার ট্যানিনের উপস্থিতি বুঝে দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়। এই পদ্ধতিতেই নিজেকে এবং আশেপাশে থাকা অন্যান্য গাছকে বিপদ থেকে রক্ষা করে আকাসিয়া।