রত্না দাসঃ দিদির নয়া কুটির শিল্প। মুখ্যমন্ত্রীর গলায় বারবারই কুটির শিল্পের মাধ্যমে স্বনির্ভর হওয়ার কথা বলতে শোনা গেছে। বর্তমানে নিষিদ্ধ শব্দবাজি তৈরি করা যে কুটির শিল্পের মধ্যে পড়ছে সেটাও বুঝিয়ে দিচ্ছে পশ্চিমবাংলার সাম্প্রতিক কিছু ভয়াবহ ঘটনা। কয়েক মাস আগেই মেদিনীপুরের এগড়ায় বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকজনের। এরপর মুখ্যমন্ত্রী সেখানে গিয়ে বাজি তৈরি করার একটি বিজ্ঞানসম্মত এবং নিরাপদ পদ্ধতির কথা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, পরিবেশবান্ধব বাজি তৈরি করার একটি নির্দিষ্ট জায়গা করে দেবেন এবং সমস্ত বেআইনি বাজি কারখানাকে বন্ধ করে দেবেন। এরপরই আগুন লাগে বজবজ ,মহেশতলা বাজি কারখানায়।
আর এবার দত্তপুকুরের নীলগঞ্জে যে নারকীয় ভয়াবহ ঘটনা ঘটল তা পশ্চিমবাংলায় বাজির আড়ালে বোমা কারখানা চলছিল, এমনটা বলছেন বিরোধীরা। তিনটি বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বহুবাড়ি। ঘটনা স্থলের ছয় থেকে সাত কিলোমিটার পর্যন্ত কম্পন অনুভব করেন বাসিন্দারা। যত্রতত্র দেহাংশ ছিটকে পড়ে থাকতেও দেখা যায়।
রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে বাজি কারখানা। কাঠুরিয়া, মোচপোল এরূপ বিভিন্ন জায়গায় বাঁশ বাগান, আম বাগান, কলাবাগান তৈরি করে ,আবার বিশাল জায়গা পাচিল দিয়ে ঘেরা ইট ভাটার আড়ালে তৈরি হয় শব্দবাজি থেকে বিভিন্ন নিষিদ্ধ বাজি কারখানা। কারখানার ভেতর দেখা গেছে ল্যাবরেটরি। হদিস পাওয়া গেছে রাসায়নিক ভর্তি গুদামের।
জানা যায়, এই সব রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হতো কলকাতার ল্যাবে। এইসব কারখানা গুলি দেখে মনে হবে যেনও কোন এক গবেষণাগার। তথ্য লোপাটের জন্য মাটি খুঁড়ে বিপুল সংখ্যক বাজি মাটিতে পুঁতে দিয়ে তার ওপর কলা গাছ লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলছে এলাকার বাসিন্দারা। টনটন বাজি পাচার করার পরিকল্পনা ছিল বিস্ফোরণের আগের দিন।
ইতিমধ্যেই কয়েকটি বাজির ট্রাক বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। দেখা গেছে, ট্রাকের সামনে রাখা রয়েছে পিঁয়াজ-আলুর বস্তা এবং ঠিক তার পিছনে রয়েছে বাজি তৈরির বিস্ফোরকের বস্তা। এলাকার প্রত্যেকটি বাড়িতে মহিলাদের বরাত দেওয়া হতো বাজি তৈরীর। এইসব কারখানায় কাজ করতে আসতো মালদা, মুর্শিদাবাদ ও অন্যান্য জেলার শ্রমিকরা।
বিধায়ক তথা খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ এবং এলাকার প্রশাসন এই বাজি কারখানাগুলি থেকে নিয়মিত টাকা তুলতেন, এমনটাই অভিযোগ বিরোধীদের। ইতিমধ্যেই নীলগঞ্জ থানার ওসি এবং আইসিকে ক্লোজড করে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বিরোধীদের বক্তব্য তৃণমূলের ছত্রছায়ায় এত বড় বাজি কারবার গড়ে উঠেছে এলাকায়। গ্যাসের দাম কমালো মোদী সরকার, সুর চড়ালেন ফিরহাদ
এলাকার এমপি থেকে বিধায়ক ও নিচুতলার নেতারা সকলেই এই কারখানার খবর জানতেন। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ঘটনায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এনআইএ তদন্তের দাবি করেছেন। সর্বোপরি মুখ্যমন্ত্রীর কোনও নির্দেশ নিচু তলা পর্যন্ত যে পৌঁছচ্ছে না, তা এই বাজি বিস্ফোরণের মাধ্যমেই সামনে উঠে আসছে। ইভিএম নিউজ