ব্যুরো নিউজ ২০ জুন: চিংড়ি, বাঙালির রান্নাঘরের এক অতি পরিচিত এবং প্রিয় উপাদান। আর এই চিংড়ি যখন সরষে আর নারকেলের গন্ধে ম ম করে ওঠে, তখন তার স্বাদ হয় সত্যিই অসাধারণ! আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি “নারকেল সরষে চিংড়ি”-এর এক সহজ এবং সুস্বাদু রেসিপি, যা আপনার হেঁশেলে নিয়ে আসবে পুরোদস্তুর বাঙালি স্বাদ আর পরিবারের মুখে ফোটাবে তৃপ্তির হাসি।
উপকরণ:
- চিংড়ি মাছ: ২৫০ গ্রাম (মাঝারি বা বড় আকারের, খোসা ছাড়ানো ও শিরা ফেলে দেওয়া)
- সর্ষে বাটা: ২ টেবিল চামচ (সাদা ও কালো সর্ষে মিশিয়ে বাটলে স্বাদ ভালো আসে)
- নারকেল বাটা বা দুধ: ১/২ কাপ (তাজা নারকেল বেটে বাটা ব্যবহার করলে স্বাদ আরও ভালো হয়)
- হলুদ গুঁড়ো: ১ চা চামচ
- লঙ্কা গুঁড়ো: ১/২ চা চামচ (স্বাদমতো)
- কাঁচা লঙ্কা: ৪-৫টি (স্বাদমতো চেরা বা চিরে দেওয়া)
- কালো জিরে: ১/২ চা চামচ
- সর্ষের তেল: ৩-৪ টেবিল চামচ
- লবণ: স্বাদমতো
- চিনি: ১/২ চা চামচ (ঐচ্ছিক, স্বাদের ভারসাম্য রক্ষার জন্য)
- জল: ১/৪ কাপ (প্রয়োজন অনুযায়ী)
- সাদা ভাত বা পোলাওয়ের সেরা সঙ্গী ভাজা মশলায় চিংড়ি
প্রস্তুত প্রণালী:
১. চিংড়ি প্রস্তুত: প্রথমে চিংড়ি মাছগুলো ভালো করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিন। এরপর মাছের উপর ১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো ও পরিমাণ মতো লবণ মাখিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন। এতে চিংড়ি নরম থাকবে এবং মসলা ভালোভাবে ঢুকবে।
২. সর্ষে ও নারকেল বাটা: সাদা ও কালো সর্ষে একসাথেই বেটে নিন। বাটার সময় সামান্য লবণ ও ২-৩টি কাঁচা লঙ্কা যোগ করলে সর্ষের তেতো স্বাদ কমে আসবে। নারকেলও মিহি করে বেটে আলাদা করে রাখুন। এই দুই বাটা মসলা একসাথে মেশাবেন না, রান্নার সময় আলাদাভাবে ব্যবহার করবেন।
৩. তেল গরম করা ও ফোড়ন: একটি কড়াই বা প্যানে সর্ষের তেল গরম করুন। তেল ভালোভাবে গরম হলে কালো জিরে ফোড়ন দিন। কালো জিরে ফুটতে শুরু করলে এবং সুগন্ধ বেরোলে পরবর্তী ধাপে যান।
৪. মসলা কষানো: এবার তেলের মধ্যে বাকি হলুদ গুঁড়ো ও লঙ্কা গুঁড়ো দিয়ে হালকা নাড়ুন। আঁচ কমিয়ে রাখুন যাতে মসলা পুড়ে না যায়। এরপর বেটে রাখা সর্ষে যোগ করুন। অল্প জল দিয়ে সর্ষে ভালো করে কষিয়ে নিন, যতক্ষণ না মসলা থেকে তেল ছাড়তে শুরু করে। এই ধাপে ২-৩টি চেরা কাঁচা লঙ্কাও যোগ করতে পারেন।
৫. চিংড়ি ও নারকেল যোগ: সর্ষে কষানো হয়ে গেলে মাখিয়ে রাখা চিংড়ি মাছগুলো কড়াইয়ে দিয়ে হালকা হাতে নাড়াচাড়া করুন। চিংড়ি দ্রুত রান্না হয়, তাই খুব বেশি কষাবেন না। চিংড়ির রঙ হালকা গোলাপি হয়ে এলে নারকেল বাটা বা নারকেলের দুধ যোগ করুন। এই সময় সামান্য চিনি (ঐচ্ছিক) এবং স্বাদমতো লবণ যোগ করুন।
৬. রান্না করা: সব উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে দিন। অল্প জল (প্রায় ১/৪ কাপ) যোগ করুন, কারণ এই পদটি সাধারণত মাখা মাখা হয়, খুব বেশি ঝোল থাকে না। কড়াইটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ৩-৫ মিনিটের জন্য মাঝারি আঁচে রান্না করুন। চিংড়ি বেশি সময় ধরে রান্না করলে শক্ত হয়ে যায়, তাই সাবধানে থাকবেন।
৭. পরিবেশন: ঝোল ঘন হয়ে তেল উপরে উঠে এলে আঁচ বন্ধ করে দিন। উপর থেকে ২-৩টি চেরা কাঁচা লঙ্কা এবং এক টেবিল চামচ কাঁচা সর্ষের তেল ছড়িয়ে দিন। এতে সরষে চিংড়ির স্বাদ ও গন্ধ আরও ম ম করবে। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন এই জিভে জল আনা “নারকেল সরষে চিংড়ি”!
বাঙালির ‘মিক্সেড ভেজিটেবিল ‘ – পাঁচমিশালি তরকারি তৈরির পদ্ধতি , সাবেকি উপক্রমে
কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
- সর্ষে বাটার সময় অল্প লবণ ও কাঁচা লঙ্কা ব্যবহার করলে সর্ষের ঝাঁঝালো ভাবটা কমে আসে।
- চিংড়ি মাছ বেশি ভাজবেন না বা বেশি সময় ধরে রান্না করবেন না, এতে চিংড়ি শক্ত হয়ে যাবে।
- এই পদে পেঁয়াজ বা রসুন ব্যবহার না করাই ভালো, কারণ তাতে চিংড়ি ও সরষে-নারকেলের আসল স্বাদ চাপা পড়ে যেতে পারে।
- যারা নারকেলের মিষ্টি গন্ধ পছন্দ করেন, তারা নারকেল বাটার পরিমাণ সামান্য বাড়াতে পারেন।
এই “নারকেল সরষে চিংড়ি” রেসিপিটি আপনার ছুটির দুপুরের খাবারকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে। বাড়িতে একবার বানিয়ে দেখুন, এর অসাধারণ স্বাদে মুগ্ধ হবেনই!