জাহাজ

ব্যুরো নিউজ, ২৭ নভেম্বর: জাহাজ একাশি

শতধা বিচ্ছিন্ন জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করার নায়ক ছিলেন অটো ফন বিসমার্ক। জার্মানির বিভিন্ন  অংশ দখল করে রাখা ৩টি দেশকে তিনি যুদ্ধে পরাস্ত করে ছিলেন। তাঁর অসাধারণ কূটনীতির কাছে হার মেনেছিল শ্লেজভিগ-হলস্তাইন- ইতালি, ফ্রান্সের মতো দেশগুলো। যখনই  এদের কোনও একটি দেশকে যুদ্ধে পরাস্ত করছে তখন বাকি দেশগুলিকে তিনি শত্রু হলেও, ‘শান্তির’ নীতিতে হয় নিরপেক্ষ অথবা নিজের পক্ষে রাখতে সমর্থ হয়েছিল। তিনি শীর্ষ পদ চ্যান্সেলার হিসাবে বসে জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। তবুও তাঁকে সরতে হয়েছিল। আর যে দিন তিনি চ্যান্সেলার পদ ছেড়েছিলেন, তখন সমকালীন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল একটি ছবি। ছবিতে দেখা গিয়েছিল জার্মানি নামক জাহাজ থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামছেন বিসমার্ক।  আর জাহাজটা ক্রমশ কাত হয়ে পড়ছে। বঙ্গে যখন সবে ইংরেজি একটু শিখতে শুরু করেছে বাঙ্গালী তখন, বাংলা ইংরেজি  মিলিয়ে জোড়া-তাপ্পি দিয়ে ইংরেজদের বোঝানোর সময় নাকি হেলে পড়া জাহাজকে বোঝানো হত ‘দ্য শিপ ইজ এইট্টিওয়ান’ বলে। আর তাতেই নাকি ইংরেজরা বুঝে যেত। সেই বেহাল ইংরেজি এখন আর শোনা যায় না। তবে আজও সেই ছবি তাৎপর্যপূর্ণ।

প্রয়াত বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অমল মুখোপাধ্যায় 

এবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দীর্ঘদিন সরকার চালিয়ে মুখ্যমন্ত্রীত্ব ছাড়েন জ্যোতি বসু। নিন্দুকেরা এমনকি দলের নেতারাও প্রমাদ গনেছিলেন যে, জ্যোতি বাবু নেমে গেলে সিপিএম পার্টি এবং বামফ্রন্ট সরকারের কি হাল হবে? সুভাষ চক্রবর্তীরা আগাম বলেই দিয়েছিলেন, সে ভাবে দল ও সরকার টানার লোক নেই। বাস্তবে হয়েছিলও তাই। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির বুদ্ধদের ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী পদে বসলেও সেই দক্ষতা বা ডিপ্লোম্যাটিক ক্যারিশ্মার অধিকারী ছিলেন না। তাই দলীয় কোন্দল, বিদ্রোহ, দলের মধ্যে উপ-দলীয় কার্যকলাপ বন্ধ করতে পারেননি। বামফ্রন্টের নেতারা যা মুখে এসেছে তাই বলে গেছেন। বিচারপতিকে দেখে কেউ বলেছেন, লালা বাংলা ছেড়ে পালা। বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এক নেতা বলেছিলেন অশালীন ভাষায় বাংলার মহিলারা নাকি ওনাকে পশ্চাদ্দেশ দেখাবে। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদের ভট্টাচার্য তাদের মুখে লাগাম দিতে পারেননি। জ্যোতি বসুর মতো ব্যক্তিত্ব নিয়ে কড়া কদক্ষেপ কারার ক্ষমতা দেখাতে পারেননি। তাই জ্যোতি বসু পদ ছাড়ার সময়ে জাহাজ একাশি হওয়ার ছবি নাকি অনেকে দেখেছিলেন। দল এবং ফ্রন্টে বহু বিরোধ মেটাতে পারেননি সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাস এবং ফ্রন্ট চ্যেয়ারম্যানও। সে সময় প্রায় ফ্রন্ট সরিফ, ফরওয়ার্ড ব্লক, সিপিআই ও আর এস পি নেতা ক্ষিতি গোস্বামী মানেনি ফ্রন্টের নিয়ম-কানুন।  সেই বিষবৃক্ষ ২০০৯ সালের লোকসভা ও ২০১১ সালে বিধান সভার ফলে মহীরূহ হিসাবে দেখা দিয়েছিল। আর সেই ভাঙন বিধানসভায় এনে দিয়েছে শূন্য সংখ্যাটি। এরাজ্য থেকে লোকসভার ফলও তাই।

কিন্তু এসব কথা কি মনে রাখবেন তৃণমূল নেতৃত্ব ও দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? দলের রাশ ক্রমেই যেন শিথিল হচ্ছে। দলের এক বিধায়ক আরএক সাংসদের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন। বিরোধী দলগুলিকে এড়িয়ে না গিয়ে, শূন্য হলেও কটাক্ষ করছেন। বলছেন অ-সংসদীয় ভাষা। সেই সঙ্গে, অপ্রয়োজনীয় তবুও বিরোধী দলের একজন বিধায়ক জিতে আসলেও তাঁকে দলে টেনে নেওয়ার মতো অবিমৃষ্যকারি আচরণ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ফলে বিরোধীদের ক্রোধ তৈরি হয়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিধানসভায় যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা তৃণমূলের আছে, তাতে অন্য দল ভাঙানোর দরকার আছে কি? সেই সঙ্গে জুটেছে নানান দুর্নীতির ঘটনা। একে একে শিক্ষা, পুরসভা, রেশন প্রভৃতি কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তের মুখে পড়ে মুখ পুড়ছে রাজ্য সরকারের। দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না জানলেও সব দায় পড়বে তাঁর ঘাড়েই। আর বিরোধীরা এখন তৃণমূলের হেড  কোয়ার্টারে বোমা ফেলা শুরু করেছেন। সবচেয়ে বেশি বোমা বর্ষণকারী তৃণমূলেরই তৈরি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বঙ্গের শাকের ক্ষেত দেখেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই। কিন্তু ক্ষমতা বড় আশ্চর্যের বিষয়। বোধহয়, ক্ষমতার গন্ধ পাচ্ছেন শুভেন্দু। অথবা তিনি লড়ছেন রাজনৈতিক মঞ্চে বাঁচার লড়াই।  তিনি এখন বসে পড়েছেন বাঘের পিঠে। বাঘ মরলে তবেই তিনি নামতে পারবেন। তবে তৃণমূল কি ঐক্যবদ্ধ? শেষ দিকের বাম নেতাদের মতো নিজেরা লড়াই করছেন না তো? সুযোগ পেলে নিজেদের প্রার্থীকেই ভোটে হারানোর ছক কষছেন না তো? যেভাবে দলীয় কর্মীরা ভাগ- বাটোয়ারা নিয়ে দলীয় নেতাদের হাতে খুন হচ্ছেন তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একা দলের রাশ কড়া হাতে নিজের নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে জাহাজ কিন্তু একাশি হইয়া পড়িতে পারে। আর তার আশায় ঝোপে ঝাড়ের আড়ালে ওৎ পেতে রয়েছে বিজেপি- সহ বিরোধী দলগুলি। ইভিএম নিউজ

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর