জন্মকুণ্ডলী

ডঃ জয়ন্ত তপাদার, ১ অক্টোবর: জন্মকুণ্ডলীতেই লুকিয়ে সমস্যা মুক্তির চাবিকাঠি


একটি প্রবচন আছে যা আমরা কমবেশি প্রায় সবাই জানি। ‘সেটা হল জিভ দিয়েছেন যিনি আহার যোগাবেন তিনি’, অর্থাৎ যিনি (সর্বশক্তিমান ঈশ্বর) আমাদের এই জীবন দান করেছেন তিনি আমাদের সমস্ত চাহিদা পূরণ করবেন। তাই আপনার জন্ম কুন্ডলীতে বেশ কিছু অশুভ গ্রহ নক্ষত্রের সংযোগ থাকতেই পারে, তাতে আপনার ঘাবড়ে যাওয়ার কিছুই নেই। কারণ গত জন্মের শুভাশুভ কর্মের ফলেই হচ্ছে আপনার বর্তমান জন্মে তৈরি হওয়া জন্ম কুণ্ডলী আপনার নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।

কিন্তু আপনি আপনার নিজের জন্মছক নিয়ে কোনও ভালো, সৎ, প্রকৃত পন্ডিতের কাছে যেতেই পারেন। সেটা তো সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে সেই জ্যোতিষী আপনার জন্ম ছকের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করে যে যে সমস্যা খুঁজে পাবেন সেগুলির প্রতিকার করার জন্য যা যা শাস্ত্রীয় ক্রিয়া কর্ম করার প্রয়োজন হবে, তিনি সেটাই নিয়মনিষ্ঠা ভরে সম্পন্ন করবেন।

এবার আলোচনা করব যে, কীভাবে জন্ম ছকের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে সমস্যা সমাধানের উপায়। বিষয়টিকে ঠিক এক কথায় বলে বোঝানো যাবে না। যাই হোক আমি কিছু সূত্র দিচ্ছি যাতে সাধারণত বুঝতে সুবিধা হয়। যে কোনও মানুষের জন্ম কুণ্ডলীতে লগ্ন-সহ ১২টি ঘর থাকে। লগ্নকে প্রথম ঘর, প্রথম ভাব ধরে ঘড়ির কাটার বিপরীতে গণনা করলে যে ১২টি ঘর পাওয়া যায়, তাতে ৯টি গ্রহ ভিন্ন ভিন্ন ডিগ্রীগত ভাবে অবস্থান করে ২৭টি নক্ষত্রের মধ্যে, ভিন্ন ভিন্ন নক্ষত্রে।

একজন জ্যোতিষীর কাছে কেন যাব? আদৌ কি লাভ হবে?

এক্ষেত্রে নক্ষত্ররা ওইসব গ্রহদের পরিচালিত করে। কারণ, আমরা ভূগোলে পড়েছি যে, কোনও গ্রহের নিজস্ব আলো নেই, নক্ষত্ররা উজ্জ্বল। গ্রহদের অবস্থান যদি ০ডিগ্রি থেকে ৬ ডিগ্রীর মধ্যে হয়। তাকে বলে গ্রহের বলিষ্ঠ অবস্থা। এই ডিগ্রিতে অবস্থান করা গ্রহ না শুভ, না অশুভ। কোনও ফলই ভালোভাবে দিতে পারেনা।

গ্রহটি যদি ৬ ডিগ্রী থেকে ১২ ডিগ্রিতে অবস্থান করে তবে তাকে বলে কুমার অবস্থা। এই অবস্থানে গ্রহরাজ কিছুটা ফল দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে। ১২ ডিগ্রী থেকে ১৮ ডিগ্রিতে অবস্থান করা গ্রহকে বলা হয় যুবা অবস্থা। এই অবস্থায় থাকা গ্রহরা ভীষণ শক্তিশালী হয়। তাই ওই গ্রহটি শুভভাবে থাকলে ভীষণ ভালো ফল প্রদান করে, ঠিক তেমনি অশুভ ভাবে থাকলে অত্যন্ত ক্ষতিকারক ফল দিয়ে থাকে। ১৮ডিগ্রি থেকে ২৪ ডিগ্রিতে কোনও গ্রহ অবস্থান করলে তখন বলা হয় যে, গ্রহটি বৃদ্ধাবস্থা প্রাপ্ত হয়েছে। এই অবস্থায় অবস্থান করা গ্রহ অত্যন্ত অল্পমাত্রায় ফল প্রদান করতে সমর্থ হয়। ২৪ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রিতে থাকা গ্রহকে বলা হয় যে এটি মৃতাবস্থা প্রাপ্ত হয়েছে। এই অবস্থায় গ্রহরা প্রায় কোনও ফলই দিতে পারেনা। এতক্ষন যে হিসাব দিলাম সেটা তখনই প্রযোজ্য হবে যখন গ্রহরা বিষম রাশিতে (১,৩,৫,৭,৯,১১তম রাশিতে) অবস্থান করে। যদি গ্রহরা সমরাশিতে (২,৪,৬,৮,১০,১২ তম রাশিতে) অবস্থান করে তাহলে গ্রহদের যে অবস্থা হবে তা পর্যায়ক্রমে দেওয়া হল-
০ডিগ্রি থেকে ৬ডিগ্রি- মৃতাবস্থা
৬ডিগ্রি থেকে ১২ডিগ্রি- বৃদ্ধাবস্থা
১২ডিগ্রি থেকে ১৮ডিগ্রি- যুবা বস্থা
১৮ডিগ্রি থেকে ২৪ডিগ্রি- বৃদ্ধাবস্থা
২৪ডিগ্রি থেকে ৩০ডিগ্রি- মৃতাবস্থা

এতক্ষন গ্রহদের ডিগ্রি নিয়ে যে আলোচনা করলাম তার কারণ ব্যাখ্যা করব। লগ্ন অর্থাৎ প্রথমভাব হল মানুষের দেহভাব, শক্তি, জীবনের সাফল্য, বাধা। এসব কিছুর নির্দেশক। দ্বিতীয়ভাব ধন, সঞ্চয়, বংশবৃদ্ধির ভাব। তৃতীয় ভাগ যোগাযোগের ভাব। চতুর্থ ভাব বাসস্থান, ভূ-সম্পত্তি ও প্রাথমিক বিদ্যাশিক্ষার ভাব। আর পঞ্চমভাব মনের বিকাশ, গান, আঁকা, নৃত্য, খেলাধুলা ইত্যাদি-সহ সন্তানের ভাবও নির্দেশ করে। নবমভাব হল ভাগ্যের ভাব, আপনার ভাগ্য কতটা সহায় হবে তার বিচার করা হয় এই ভাব থেকে। দশম ভাব হল কর্মের অর্থাৎ জীবিকার নির্দেশক। আর একাদশভাব হল সমস্ত বিষয়ের সাফল্য বা প্রাপ্তি কতটুকু হবে তার মূল্যায়নের নির্দেশক ভাব।

এবার একজন প্রকৃত পণ্ডিত জ্যোতিষী ঠিক কী করে থাকেন এই জায়গায়?

যদি উপরি উক্ত ভাব গুলির কোনও ভাবে কোন গ্রহ বাল্য বা বৃদ্ধাবস্থায় থাকে তবে সেই গ্রহকে বলবান করার বা শক্তিশালী করার শাস্ত্রীয় উপায় নির্দেশ করে থাকেন। সেটা কোন দৈব কবজ বা গ্রহরত্ন কিম্বা সেই গ্রহের বীজ মন্ত্র জপ ইত্যাদি হতে পারে, যা সেই জাতক বা জাতিকার জন্য শুভ হবে। ঠিক তেমনি কোনও মানুষের তার ব্যক্তিগত জন্মছকের রাজযোগকারী গ্রহ যদি দুঃস্থানে অবস্থান করে। সেই গ্রহের যুবা অবস্থায় (১২°-১৮°) তবে তা অত্যন্ত অশুভ ফল প্রদান করে। যেমন বৃষ লগ্নের রাজ্যকারী গ্রহ শনি যদি ষষ্ঠে, অষ্টমে বা দ্বাদশে (দ্বাদশ অর্থাৎ মেষ রাশিতে শনি নীচস্থ হয়) অবস্থান করে তার যুবা অবস্থায়, তবে তা অত্যন্ত খারাপ ফল প্রদান করে।

ঠিক তেমনি সিংহ লগ্নের রাজযোগকারী গ্রহ মঙ্গল যদি কর্কট, মীন রাশিতে অবস্থান করে ১২°-১৮° এর মধ্যে, তবে তা ভীষণ ক্ষতিকারক হয়ে থাকে। এই অবস্থায় কোনও বিচক্ষণ জ্যোতিষী গ্রহরত্ন ধারণ করবার পরামর্শ দেন না। কারণ ধারণ করলে সেই গ্রহের বলবত্তা বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ সেই গ্রহ যদি শুভ অবস্থানে থাকে তবে তার শুভ ভাব বৃদ্ধি পাবে, আর যদি অশুভ অবস্থানে অবস্থান করে তবে তার ক্ষতিকারক ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে। তাই এ ক্ষেত্রে প্রকৃত শাস্ত্রজ্ঞ জ্যোতিষী গ্রহরত্ন না দিয়ে মহাশক্তিশালী দৈব কবচ, গ্রহের বীজমন্ত্র জপ কিংবা বিভিন্ন দান ইত্যাদি নির্দেশ দিয়ে থাকেন।

আমরা এতদিন জেনে গিয়েছি যে, রাশিচক্রে অবস্থান করা ৯টি গ্রহকে নিয়ন্ত্রণ করে ২৭টি নক্ষত্র। মজার ব্যাপার, আবার ওই নক্ষত্রদের প্রত্যেকের এক একটি অধিপতি গ্রহ রয়েছে। তাহলে বিষয়টি দাঁড়ালো যে গ্রহ-নক্ষত্র-গ্রহ। ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন কি?

যেকোনও রাশিচক্রের ষষ্ঠ (রোগ, ঋণ ,শত্রু) অষ্টম (মৃত্যু, বাধা,ছেদ) দ্বাদশ (হাসপাতাল বা নার্সিংহোম জেল বা কারাবাস, বিদেশ) ভাব বা ঘরগুলোকে অশুভ বলে বিবেচনা করা হয় সেই কারণে দ্বিতীয় (ধন), চতুর্থ (প্রাথমিক শিক্ষা), পঞ্চম (সন্তান), সপ্তম (বিবাহ), নবম (উচ্চ শিক্ষা), দশম (জীবিকা), একাদশ (যেকোনও প্রাপ্তি বা সাফল্য) ভাব বা ঘরের অধিপতি গ্রহ বা গ্রহসকলের অধিপতি নক্ষত্র বা নক্ষত্ররা কোনওভাবে যদি ষষ্ঠ, অষ্টম বা দ্বাদশ ভাবের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে তবে সেই গ্রহ তো ভালো ফল দেবেই না, উল্টে ওই অশুভ ভাবের ফল প্রদান করবে।

এক্ষেত্রে সঠিক প্রতিকার নির্ধারণ করতে পারবেন একমাত্র প্রচুর পাণ্ডিত্যসম্পন্ন জ্যোতিষী। এবার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব তা হল জন্ম কুণ্ডলীতে দেখতে হবে কেন্দ্রপতি ও কোণপতিরা ঠিক কি কি অবস্থানে রয়েছে।

লগ্ন অর্থাৎ প্রথম ঘর বা ভাব, পঞ্চম ভাব ও নবম ভাব হল কোণ। আর লগ্ন, চতুর্থ, সপ্তম, দশম হচ্ছে কেন্দ্র। এই কোণ বা কেন্দ্রপ্রতি কোনও গ্রহ যদি দুঃস্থান বা নীচস্থ কিংবা ডিগ্রীগত ভাবে দুর্বল থাকে তবে তার যথাযথ শাস্ত্রীয় প্রতিকার করা হলে সেই জাতক জাতিকার জীবনে আমল পরিবর্তন হয়ে থাকে।

আবার কোনও মানুষের লগ্ন যদি দুর্বল হয় তবে সে শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হবে। শিক্ষা, কর্ম, বিবাহ সব বিষয়েই সমস্যা হবে। উদাহরণস্বরূপ তুলা লগ্নের লগ্নপতি শুক্র যদি কন্যা রাশিতে অবস্থান করে তবে তার লগ্ন দুর্বল বলে বিবেচনা করা হয়। কারণ এক্ষেত্রে শুক্র তুলা লগ্নে দ্বাদশ ভাবে নীচস্থ অবস্থায় অবস্থান করছে। ঠিক তেমনই মিঠুন লগ্ন সাপেক্ষে সপ্তমপতি গ্রহ বৃহস্পতি যদি মকরে অবস্থান করে তবে এটা বিবাহিত জীবন বা ব্যবসার জন্য অত্যন্ত খারাপ ফল দেবে। কারণ এক্ষেত্রে সপ্তম অর্থাৎ কেন্দ্রপতি গ্রহ বৃহস্পতি নীচস্থ অবস্থায় মকরে অর্থাৎ মিথুন লগ্ন সাপেক্ষে অষ্টমে (মকর স্থানে) অবস্থান করছে।

আবার লগ্ন যদি সিংহ হয়, তবে চতুর্থপতি (বিদ্যা শিক্ষ্যা )তথা (ভাগ্যপতি) নবমপতি গ্রহ মঙ্গল যদি কর্কট রাশিতে অবস্থান করে তবে সেই জাতকের বিদ্যা শিক্ষায় বাধা অর্থাৎ উচ্চশিক্ষা থেকে শুরু করে সমস্ত বিষয়েই ভাগ্য বিলম্বনা ঘটবে। কারণ এক্ষেত্রে সিংহ লগ্নের রাজ্যযোগকারী গ্রহ মঙ্গল দ্বাদশ ঘরে (কর্কট রাশি) অর্থাৎ দুঃস্থানে নীচস্থ অবস্থায় অবস্থান করছে। এক্ষেত্রে এই গুরুত্বপূর্ণ গ্রহগুলির বলাবল বৃদ্ধি করতে গ্রহরত্ন ধারণ বা দৈব কবচ কিংবা গ্রহের বীজমন্ত্র জপ অথবা কোনও দেবদেবীর পূজা কিংবা কোনও দান ইত্যাদির মধ্যে কোনটি সবচেয়ে উপযোগী হবে তা নির্ধারণ করতে সক্ষম একমাত্র প্রকৃত শাস্ত্রজ্ঞ জ্যোতিষী।
তাই যারা প্রকৃত সমস্যায় জর্জরিত তারা মনে বিশ্বাস নিয়ে প্রকৃত পাণ্ডিত্যসম্পন্ন জ্যোতিষীর শরণাপন্ন হোন, সমাধান মিলবে।

ডঃ জয়ন্ত তপাদার (জ্যোতিষ রত্ন উপাধি) যোগাযোগ- ৮২৫০৬২৭২০৩/ ৯৪৭৪৭৩২৯০১। ইভিএম নিউজ

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর