টাকা

ব্যুরো নিউজ, ২৮ অক্টোবর: চাঞ্চল্যকর তথ্য! রেশন দুর্নীতির টাকা বিনিয়োগ হয়েছে সিনেমা তৈরিতে!

রেশন বন্টনে দুর্নীতি কাণ্ডে বকিবুর রহমানকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক চৈতালি ব্যানার্জি।

জেলার গর্ব! চন্দ্রযান ৩-এর বিজ্ঞানীকে সংবর্ধনা
বৃহস্পতিবার আদালতে ইডির তরফে বাকিবুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি চাওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করারও অনুমতি চাওয়া হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির তরফে। বাকিবুরের আইনজীবী আদালতে প্রশ্ন তোলেন, এই মামলায় যাঁরা মূল অভিযুক্ত, তাঁদের কাউকে কি ধরা হয়েছে? বাকিবুরের আইনজীবী এই প্রশ্নও তোলেন যে, তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে যুক্ত থাকার কোনও প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে কি না? উত্তরে ইডির আইনজীবী জানান, সব তথ্যপ্রমাণই পাওয়া গিয়েছে।

ইডির আইনজীবী জানান, আগে কিছু হয়নি। কারণ বাকিবুরের মাথার উপরে কারও আশীর্বাদের হাত ছিল। দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার প্রমাণ শুক্রবারের রিম্যান্ড কপিতে উল্লেখ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন ইডির কৌঁসুলি।

ইডির তরফে আগেই দাবি করা হয়েছিল যে, পেশায় ব্যবসায়ী বাকিবুর মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের ‘ঘনিষ্ঠ’। রেশন দুর্নীতি মামলায় বাকিবুরের গ্রেফতারির পরেই এই মামলায় বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের নাম উঠে এসেছে।

কীভাবে আটা নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে, তার একটা ধারণা মিলেছে ইডির নথি থেকে। ইডির নথিতে বলা হয়েছে, মিল মালিকেরা সরকারি অর্থ মিলিয়ে নিতেন কড়ায়-গণ্ডায়। কিন্তু তার বিনিময়ে সরবরাহকৃত রেশনের হিসাব মিলত না। প্রতি ১ কেজি আটার দামে অন্তত ২০০ গ্রাম কম আটা দিতেন আটা কলের মালিকেরা। বাংলার রেশন দুর্নীতির তদন্তে নেমে এমনই তথ্য উঠে এসেছে ইডির হাতে।

ইডি সূত্রে খবর, এই সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে জ্যোতিপ্রিয় ও বাকিবুরকে। পাশাপাশি, তাঁরা একে অপরকে কীভাবে চেনেন, দু’জনের সম্পর্ক কী, সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। রেশন নিয়ে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে আর কে কে জড়িত, টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা কী ভাবে হয়েছে, তা নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে।

রেশন বণ্টন দুর্নীতির টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল সিনেমা তৈরির কাজেও। এই মামলার তদন্তে প্রাথমিক ভাবে তেমনই জানতে পেরেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। তবে এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছেন তদন্তকারীরা।

ইডি সূত্রে খবর, ২০১৪ সালে একটি বাংলা সিনেমা প্রযোজনা করেন বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ‘ঘনিষ্ঠ’, অধুনা ইডির হাতে ধৃত বাকিবুর রহমান। এই সিনেমাতেই অভিনয় করেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। ইডি সূত্রের খবর, সিনেমার পোস্টারে প্রযোজক হিসাবে বাকিবুরের নাম ছিল বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। প্রসঙ্গত, জ্যোতিপ্রিয় ‘বালু’ নামেও সমধিক পরিচিত।

ইডি সূত্রের জানা গিয়েছে, সিনেমাটিতে টলিউডের বেশ কয়েকজন অভিনেতা ও কলা-কুশলী কাজ করেছিলেন। সিনেমার একটি ছোট দৃশ্যে দেখা গিয়েছিল বলিউডের এক অভিনেত্রীকেও। রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলার তদন্তে ইডি সূত্রে আগেই খবর মিলেছিল যে, অবৈধ উপায়ে কালো টাকা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে সাদা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। খোলা হয়েছিল বেশ কিছু ভুয়ো সংস্থাও।

ইডি সূত্রে খবর, ২৬ অক্টোবর জ্যোতিপ্রিয়ের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর সময় তাঁকে এবং তাঁর স্ত্রী-কন্যাকে তিনটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তদন্তকারীদের ধারণা, ওই তিনটি সংস্থার মাধ্যমে ‘কালো টাকা’ লেনদেন হয়েছে। তিন জনেই ওই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ খারিজ করেন। যদিও বাড়িতে তল্লাশির সময় ওই তিন সংস্থার স্ট্যাম্প উদ্ধার করে বাজেয়াপ্ত করেছে বলে দাবি ইডির।

সহযোগীরা দাবি করেছেন, ওই তিন সংস্থার মালিকানা রয়েছে জ্যোতিপ্রিয়র হাতে। অন্য দিকে ইডির দাবি, দু’দফায় রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীকে মোট ৮০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত ব্যবসায়ী বাকিবুর।

 

ইডি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, বাকিবুরের সঙ্গে তাঁর কর্মীদের হোয়াট্‌সঅ্যাপ চ্যাটে এই টাকা লেনদেনের কথা উঠে এসেছে। তিনি যে তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রীকে টাকা দিয়েছিলেন, ইডির জিজ্ঞাসাবাদের সময়, তেমনটা নাকি স্বীকারও করে নিয়েছেন বাকিবুর। ইডি জানিয়েছে, বাকিবুরকে গ্রেফতারির সময় যে মোবাইলগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল, তা ঘেঁটেই লেনদেনের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। প্রকাশ্যে এসেছে ‘এমআইসি’ নামক এক ব্যক্তিকে একাধিক বার টাকা দেওয়ার তথ্যও। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, এই ‘এমআইসি’-র অর্থ ‘মিনিস্টার ইন চার্জ’ এবং সেই মন্ত্রী আর কেউ নন, খোদ প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়।

ইডির তরফে আগেই দাবি করা হয়েছিল, বাকিবুর মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের ‘ঘনিষ্ঠ’। রেশন দুর্নীতি মামলায় পেশায় ব্যবসায়ী বাকিবুরের গ্রেফতারির পরেই এই মামলায় জ্যোতিপ্রিয়র নাম উঠে এসেছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর।

ইডি সূত্রে খবর, পার্ক স্ট্রিট, নিউ টাউন-রাজারহাট এলাকায় ফ্ল্যাট রয়েছে বাকিবুরের। এছাড়াও আরও একাধিক জায়গায় মোট ৮ থেকে ৯টি ফ্ল্যাটের হদিস মিলেছে। বিভিন্ন সংস্থায় বাকিবুরের শেয়ার রয়েছে। এমন মোট ৬ টি সংস্থার কথা জানতে পেরেছেন ইডি আধিকারিকেরা।

কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ছ’টি সংস্থায় বাকিবুরের শেয়ারের পরিমাণ সাড়ে ৫০ কোটি টাকার বেশি। হোটেল, পানশালা ছাড়াও একটি হাসপাতাল গড়ার পরিকল্পনা ছিল বাকিবুরের। সব মিলিয়ে তাঁর মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ৯০টির বেশি সম্পত্তি বর্তমানে ইডির আতশকাচের নীচে। এগুলি দুর্নীতির টাকায় গড়া কি না, এর সঙ্গে দুর্নীতির কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দায়িত্ব নিতে চাইছে না কমান্ড হাসপাতাল। কারণ, তাদের অত্যাধিক রোগীর চাপ রয়েছে। সেই কারণেই শনিবার আদালতে আবেদন জানায় কমান্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে, সেই আর্জি নাকচ করে দিয়েছে আদালত। শুক্রবার, যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেটাই বজায় থাকবে। যদি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আবেদন করতে চায়, তাহলে তাদের অন্য আদালতে যেতে হবে।

রেশন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার মন্ত্রীকে অন্য কোনও হাসপাতালে শিফট করার জন্য আবেদন করে কমান্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের আইনজীবীর দাবি, ‘আমরা ওভার বার্ডেনড’।

বিচারককে কমান্ড হাসপাতালের কর্নেল বলেন, “কমান্ড হাসপাতাল নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির জন্য বেঁধে দেওয়া আছে। এই হাসপাতাল সেনাবাহিনী ও তার পরিবারের জন্য চিহ্নিত।” তবে, এদিন ব্যাঙ্কশাল আদালতের বিচারক জানান, এই নির্দেশ বদলানো যাবে না। তিনি বলেন, জ্যোতিপ্রিয়র শারীরিক পরিস্থিতি দেখেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। সে ক্ষেত্রে আগে থেকেই কেন কমান্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই ধরনের আবেদন করছে! অভিযুক্তর শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও জানতে চান বিচারক।

সূত্রের খবর, এদিন সরকারী হাসপাতালের দুজন চিকিৎসক বাইপাসের ধারে বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে জ্যোতিপ্রিয়কে দেখে আসেন। ইভিএম নিউজ

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর