ডঃ জয়ন্ত তপাদার, ২৬ সেপ্টেম্বর: একজন জ্যোতিষীর কাছে কেন যাব? আদৌ কি লাভ হবে?
সকলেরই এটা মনে আশা স্বাভাবিক যে ডাক্তার ,উকিল, শিক্ষক, মুচি, ধোপা, কাঠের মিস্ত্রি, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইত্যাদি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের কাছে আমরা যাই নানা প্রয়োজনে। কিন্তু একজন জ্যোতিষীর কাছে আমরা কেন যাব? আদৌ কি লাভ হবে? কখন যাব?
জন্ম ছকের কোন কোন ত্রুটির জন্য কী কী সমস্যা হতে পারে ব্যবসায়?
এই লাখ টাকার প্রশ্নের উত্তরটা আজকে এই লেখার মাধ্যমে দেব। আমরা আমাদের সন্তানদের নিয়ে বহু স্বপ্ন দেখি যে আমার ছেলে বা মেয়ে বড় হয়ে নামি ডাক্তার হবে ব্যারিস্টার হবে আইএ এস, ডব্লিউ বি সিএস হবে, প্রফেসর হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু একবারও ভেবে দেখেছেন কি যাকে নিয়ে এত স্বপ্নের জাল বুনছেন তার আয়ু কত? কোনও কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক আগেই এই পৃথিবী ত্যাগ করতে হবে না তো? কোনও ভয়ানক দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি যোগ বা অকাল মৃত্যুর সম্ভাবনা আছে কি?
এই অতি মূল্যবান প্রশ্নের উত্তর কোনও ডাক্তার বা বুদ্ধিমান ব্যক্তিও দিতে পারবে না। যখন আপনি রোগাক্রান্ত হবেন তখনই ডাক্তার নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বলবেন এই রোগ হয়েছে, ওই রোগ হয়েছে। কিন্তু ঘটনা ঘটার আগে তারা কোনও পূর্বাভাস করতে অক্ষম। এইখানেই রয়েছে জ্যোতিষ শাস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
একটি ছেলে বা মেয়ের জন্ম গ্রহনের পর তার জন্ম তারিখ, জন্ম সময় ও জন্ম সময়কে নিয়ে যে হরোস্কোপ বা জন্ম ছক তৈরি করা হয় তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত ভাবে সাল, মাস পর্যন্ত বলে দেওয়া যায় যে কবে জাতক বা জাতিকা দুর্ঘটনা গ্রস্থ হবে বা আদৌ হবে কিনা। হোস্টেলে পড়াশোনার প্রয়োজনে বসবাসকালীন অবস্থায় সে কোনওভাবে অসৎ বন্ধুর পাল্লায় পড়ে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়বে কিনা। এইসবই নিখুঁতভাবে ভবিষ্যৎবাণী করতে সক্ষম একজন পন্ডিত জ্যোতিষী।
হরোস্কোপের লগ্ন হল জাতক বা জাতিকা নিজে এবং লগ্ন কে প্রথম ভাব (ঘর) ধরে নিয়ে ঘড়ির কাটার বিপরীতে বারটি ভাব (ঘর) কে গণনা করব। এই বারটি ঘরে ন’টি গ্রহ কোথায় বসে আছে, কোন গ্রহ তাকে দৃষ্টি দিচ্ছে ও এই ন’টি গ্রহ ৭০০টি নক্ষত্রের মধ্যে কোন কোন নক্ষত্রে অবস্থান করে কী কী শুভ যোগ তৈরি করেছে তার অতি সুখ্যাতিসূক্ষ্ম বিচার করে সঠিক ভবিষ্যৎবাণী করেন একজন বিদগ্ধ পন্ডিত জ্যোতিষ ব্যক্তিত্ব।
একজন জাতক বা জাতিকার লগ্ন ভাব দুর্বল হলে স্বাস্থ্য কখনোই ভালো যাবে না। লগ্নপতি যদি দুঃ যেমন ষষ্ঠ, অষ্টম, দ্বাদশ ভাবে অবস্থিত হয় বা লগ্নে রাহু, কেতু ,শনির মতো পাপ গ্রহের অবস্থান হয় তখন এরূপ হয়। যদি পঞ্চম ভাবপ্রতি দুঃস্থান গত হয় অথবা পঞ্চমে রাহু অথবা নিজ অস্ত্র মঙ্গল অথবা কেতু অথবা শুক্র অথবা পঞ্চম ভাবের অধিপতি গ্রহ রাহু, শনি, মঙ্গল কেতুর নক্ষত্রে অবস্থান করে তবে ওই জাতক নেশাগ্রস্থ হয় বা ধর্ষণ ইত্যাদির মতো অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ে।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই নানা বিষয়ে খরচ করার প্রয়োজনে আমাদের অর্থের প্রয়োজন হয় এবং লগ্ন সাপেক্ষে দ্বিতীয় ভাব প্রতি যদি দুস্থান গত হয় বা দ্বিতীয় ভাবের অধিপতি অশুভ নক্ষত্রে অবস্থান করে তবে জাতকের রোজগার যতই হোক না কেন সঞ্চয় মোটেই হবে না। ফলে প্রয়োজনের সময় অর্থাভাব দেখা দেবে।
তৃতীয় ভাবে অশুভ গ্রহের অবস্থান বা দৃষ্টি থাকলে তৃতীয় ভাব প্রতি দুস্থান গ্রস্ত বা পাপ মধ্যে গত হলে ভাই বা বোনেদের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ মামলা মোকদ্দমা পর্যন্ত পৌঁছবে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
চতুর্থ ভাবে রাহু কেতু শনির অবস্থান অথবা চতুর্থ ভাবপ্রতি দুস্থানে অবস্থান করলে বিদ্যা শিক্ষায় বাধা আসবে, মায়ের সঙ্গে বিরোধ, মায়ের শরীর স্বাস্থ্য ভালো যাবে না।
ষষ্ঠভাবে যদি অশুভ মঙ্গল শনি রাহু কেতু অবস্থান করে তবে প্রচন্ড শত্রুতা ভোগ করতে হয়। ষষ্ঠভাবে রাহু ও দ্বাদশে কেতু আর সব গ্রহ রাহু কেতুর একপাশে অবস্থান করে যে কালসর্প দোষের সৃষ্টি করে তা জাতক বা জাতিকাকে রোগে আক্রান্ত করে যা বহু চিকিৎসা করিয়েও নিরাময় করা দুঃসাধ্য হয়ে পরে যদি না ওই অশুভ যোগের যথাযথ শাস্ত্রীয় প্রতিকার করা হয়।
এরকম বহু ঘটনা আমরা ঘুরতে দেখি যেখানে দেখা যায় অতি সুন্দরী ভদ্র উত্তর-শিক্ষিতা মেয়েকে পাত্রপক্ষ একের পর এক দেখে যাচ্ছে প্লেট প্লেট মিষ্টি ধ্বংস করছে যাওয়ার সময় বলছে পরে জানাবে। ব্যাস ওই পর্যন্তই। আর কোনও খবর নেই। মেয়ের বয়স হয়ে যাচ্ছে। সে ব্যক্তিগতভাবে তো বটেই এমনকি বাড়ির লোকজন ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ছে। এরূপ হয় তখনই, যখন জাতক বা জাতিকার সপ্তম ভাবে রাহু, কেতু, শনির অবস্থান অথবা সপ্তম ভাবের অধিপতি গ্রহ দুঃস্থানে অথবা অশুভ নক্ষত্রে অবস্থান করে। এছাড়া মাঙ্গলিক দোষ হরোস্কপে থাকলে বিবাহ হতে চায় না বা বিবাহ হলেও স্বামী-স্ত্রীর অকাল মৃত্যু, অপ মৃত্যু বা বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
জন্ম ছকে মঙ্গল গ্রহটি যদি লগ্নে বা চতুর্থে বা সপ্তমে বা অষ্টমে বা দ্বাদশে অবস্থান করে তবে সেই জাতক বা জাতিকার মাঙ্গলিক দোষ বলে গণ্য হয়। এই দোষ বিবাহিত জীবনের জন্য অত্যন্ত অশুভ বলে মানা হয়।
অষ্টমী কেতু এবং মঙ্গল, রাহু এবং শনি, শনি এবং কেতু ,রবি, মঙ্গল ও রাহু-এই জোকগুলো জীবনে ভয়ানক দূর্ঘটনা ডেকে আনে যা আয়ুর পক্ষে ক্ষতিকর। আবার অষ্টম পতি কোনওভাবে ষষ্ঠ বা দ্বাদশ ভাবের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হলে মৃত্যুকে আরও ত্বরান্বিত করে।
অনেকে দেখি প্রচুর পরিশ্রম করছে তবু তেমন কিছু করে উঠতে পারছে না। বাবার সঙ্গে শত্রুতার সম্পর্ক, শিক্ষকের সাহায্য থেকে বঞ্চিত, টিচার সুনজরে দেখছে না, পরীক্ষায় ভালো মার্কস দিচ্ছে না ভালো লেখা সত্ত্বেও, এক্ষেত্রে বুঝতে হবে জন্ম ছকে নবম ভাব প্রতি গ্রহ নিজ অস্ত্র বা দুঃস্থান গত। যেমন সিংহ লগ্নের ভাগ্যবতী বা নবম প্রতি গ্রহ মঙ্গল কর্কটের ঘরে অবস্থান করলে ওই জাতক বা জাতিকাকে সারা জীবন ভাগ্য ও বিলম্বনার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
দশমভাবে বা কর্মভাবে রাহু, কেতু বা কোনও নিচস্থ গ্রহের অবস্থান হলে কর্ম বারে বারে পরিবর্তন হয় বা কর্মচুক্তি হয়। কাজে সন্তুষ্টি থাকে না। কর্মপতি গ্রহ নিচস্থ অথবা দুঃস্থান গত হলে কর্ম পেতে প্রচুর বাধার সম্মুখীন হতে হয় জাতক বা জাতিকাকে যা একজন যোগ্য কর্ম প্রার্থীর মনে চরম হতাশা ডেকে আনে।
দ্বাদশে যদি পাপ গ্রহ যেমন শনি থাকে হাড় সম্বন্ধীয় রোগ, কেতু থাকলে নার্ভের রোগ, রবি থাকলে চোখের রোগ, চন্দ্র থাকলে ব্রঙ্কাইটিস, সর্দিকাশি। মঙ্গল থাকলে জমি-জমা নিয়ে বিবাদ মামলা, বিবাহিত জীবনে অশান্তি ও রক্তঘটিত রোগ হয়। দ্বাদশে রাহু বিদেশে বিপদে ফেলে জাতককে। দ্বাদশে শত্রু বিদেশে যেমন নিয়ে যায় তেমন বহুগামী করে।
যাইহোক এতক্ষণে নিশ্চয়ই বোঝা গেল যে কেনও আমরা একজন জ্যোতিষীর কাছে যাব। অযথা সময় নষ্ট না করে সময় থাকতে থাকতে অশুভযোগের প্রতিকার করে জীবনকে সুস্থ, সুন্দর ও সুখী করে তুলুন।
ডঃ জয়ন্ত তপাদার (জ্যোতিষ রত্ন উপাধি) যোগাযোগ- ৮২৫০৬২৭২০৩/ ৯৪৭৪৭৩২৯০১। ইভিএম নিউজ