ব্যুরো নিউজ, ৯ জানুয়ারি: নেতাজির রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন টানাপড়েন
মহান দেশপ্রেমিক, শতকোটির বীরপুত্র, যুব সমাজের অনুপ্রেরণা যাই বলে সম্মোধন করা হোক না কেন, মনে পড়ে শুধু একটাই নাম। তিনি আর কেউ নন। তিনি হলেন দেশবাসীর অমর সন্তান, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।
“স্বাধীনতা কেউ দেয় না ,ছিনিয়ে নিতে হয়”।
১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নেতাজির ইরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই আরও জোরদার হতে শুরু করে। ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলাপচারিতার মাধ্যমে যে স্বাধীনতা পাওয়া যাবে না, তা বুঝে গিয়েছিলেন তিনি। তাই তিনি মানুষের একজোট হওয়ার শক্তি ও অস্ত্রবল জোগাড় করতে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার কথা ভাবেন। আর ঠিক সেই সমই তাঁর সঙ্গে জওহরলাল নেহেরু ও মহাত্মা গান্ধির মতবিরোধ ঘটে।
মহাত্মা গান্ধির সঙ্গে মতবিরোধ:
মহাত্মা গান্ধির আদর্শের সঙ্গে সহমত ছিলেন না নেতাজি। এর প্রমান পাওয়া গিয়েছিল ত্রিপুরি কংগ্রেসে। কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনে মহাত্মা গান্ধীর পছন্দের প্রার্থী ছিলেন পট্টভি সীতারামাইয়া। তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়ে জয়ী হন সুভাষ। মহাত্মা আক্ষেপ করে বলেছিলেন সীতারামাইয়ার পরাজয় মানে আমার পরাজয়। যদিও দুজনেরই লক্ষ্য একই ছিল। তা হলো ব্রিটিশ শাসন থেকে পরাধীন ভারতকে মুক্ত করা। নেতাজি ব্রিটিশ শক্তির উপর আভ্যন্তরীণ চাপের পাসাপাশি বহিরশক্তির চাপ জরুরী বলে মনে করেছিলেন। আর সেই জন্যই ব্রিটিশ বিরোধী অক্ষ শক্তির (রোম, বার্লিন, টোকিও) সাহায্য নিয়েছিলেন। কিন্তু গান্ধীজি যেখানে উদারপন্থী মনোভাবের সাথে অহিংস আন্দোলনে বিশ্বাস করতেন, সেখানে ইংরেজদের সঙ্গে বারবার আলাপ-আলোচনা ও অহিংস প্রতিবাদে স্বাধীনতা আসা সম্ভব নয় বলে মনে করতেন নেতাজি।
সুভাষচন্দ্র মনে করতেন, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর অহিংসা ও সত্যাগ্রহের নীতি ভারতের স্বাধীনতা লাভের জন্য যথেষ্ট নয়। এই কারণে তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছিলেন।
রাষ্ট্রনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর শিক্ষাজীবন
বসুর দেশত্যাগ:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির প্রবল চাপে ব্রিটিশরা এক অভাবনীয় পরিস্থিতির মুখে পড়ে। নেতাজি সেই পরিস্থিতির লাভ ওঠাতে পারে ভেবে ব্রিটিশ সরকার ১৯৪০ সালের ৪ জুলাই নেতাজিকে কলকাতায় গৃহবন্দী করে। কিন্তু তিনি ১৯৪১ সালের ১৭ই জানুয়ারি সকলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ছদ্মবেশ ধারন করে দেশ ত্যাগ করেন। প্রথমে কাবুল ও তারপর রাশিয়ার মস্কো হয়ে জার্মানির বার্লিনে উপস্থিত হন তিনি।
আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন ও নেতাজি অ্যাখ্যা:
স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে তাঁর একটি বিশেষ উক্তি আমাদের মনে ঘোরাফেরা করে। আর এই উক্তিটি হলো “তোমরা আমাকে রক্ত দাও,আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো”। ব্রিটিশদের সমস্ত চক্রান্তকে বানচাল করে নেতাজির কণ্ঠে শোনা গিয়েছিল এই মহান বাণী। ১৯৪৩ সালে রাসবিহারী বসুর অনুরাধে সুভাষচন্দ্র বসু সাবমেরিনে করে জার্মানি থেকে জাপানে আসেন। আর সেখানেই তিনি আজাদ হিন্দ বাহিনীর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনার পূর্ণ দায়িত্ব নেন। এরপর সুভাষ আজাদ হিন্দ বাহিনীর পুনর্গঠন করেন ও সেনাবাহিনীর উন্নতিতে আরও বেশি জোর দেন। আজাদ হিন্দ বাহিনীর সৈন্যরাই তাঁকে ‘নেতাজি’ আখ্যায় ভূষিত করেন। নেতাজির ‘দিল্লি চলো’-র ডাকে উদ্ধুদ্ধ হয় সেনাবাহিনী। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে ভারতের স্বাধীনতার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান রয়েছে নেতাজির নেতৃত্বাধীন আজাদ হিন্দ বাহিনীর।
বৃটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই
১৯৪৩ সালে আজাদ হিন্দ ফৌজ নেতাজির নেতৃত্বে ইংরেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ঠিক এর পরের বছর ভারতের কোহিমা ও ইম্ফলের কাছে ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল নেতাজির সেনা দল। ১৯৪৪ সালে আজাদ হিন্দ ফৌজ ভারতের মাটি ইম্ফলে প্রথমবার স্বাধীন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে। তবে জাপানের পরাজয়ে, জার্মানির আত্মসমর্পণ শেষদিকে আজাদ হিন্দ বাহিনীকে দুর্বল করে তুলেছিল। ইভিএম নিউজ