ইভিএম নিউজ ব্যুরো, ১৫ মার্চঃ একদল দিনের পর দিন রাস্তায় পড়ে থেকে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, জানাচ্ছেন নিয়োগের দাবি। আর একদল ভীত-সন্ত্রস্ত। গ্রুপ ডি ও গ্রুপ সি তে নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে তাদের অনেকের চাকরি গেছে। বেআইনিভাবে চাকরি পাওয়া আরও যদি কেউ থাকেন তাদেরও চাকরি যেতে পারে যে কোন সময়। সেই আশঙ্কায় দিন গুনছেন তারা।

হাইকোর্টের রায়ে যাদের চাকরি গেছে, সেই তালিকায় চোখ রাখলে চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার উপক্রম। রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মীর নাম যেমন আছে সে তালিকায়, তেমনি রয়েছে তাদের ঘনিষ্ঠ লোকজনের নাম। বিধায়কের ছেলেমেয়ে, কাউন্সিলর, প্রাক্তন কাউন্সিলর, তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির আত্মীয়-স্বজন – তালিকাটা বেশ লম্বা।

অন্তত দুজন বিধায়কের ছেলে মেয়ের নাম রয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজারের বিধায়ক জয়দেব হালদারের ছেলে ২০১৮ সালে চাকরি পেয়েছিলেন। স্থানীয় একটি স্কুলে ক্লার্কের পদে রয়েছেন। শুক্রবার থেকেই তিনি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেছেন।

উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁর বিধায়ক উষারাণী মন্ডলের মেয়ে বেলঘরিয়ার এক স্কুলে কর্মরতা। তার নাম রয়েছে তালিকায়। তিনিও স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেছেন। যদিও ঊষারানীর স্বামী, এলাকার তৃণমূলের দাপুটে নেতা মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল বলেছেন, তার মেয়ের চাকরির জন্য কোনও সুপারিশের প্রয়োজন হয়নি। তিনি আদালতে পাল্টা মামলা ঠোকার হুমকিও দিয়েছেন। তবে কোথাও সুপারিশ না করে থাকলেও, ‘বিধায়কের মেয়ে’ – শুধুমাত্র এই তথ্যটুকুই তথাকথিত সুপারিশ হিসেবে যথেষ্ট কিনা, সে বিষয়ে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

বালুরঘাট পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দীপান্বিতা দেব সিংহ-রও নাম রয়েছে ওই তালিকায়।

রাজপুর সোনারপুরের তিনবারের কাউন্সিলর কুহেলি ঘোষ। যিনি গতবার জয়ী হয়েছিলেন ১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। তারও নাম রয়েছে বাতিলদের তালিকায়

ভাঙ্গড় ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শাজাহান মোল্লা। ভাঙ্গড়ের আরেক প্রতাপশালী ও প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা। তার মেয়ের চাকরিও বাতিল হয়েছে। তিনি ভাঙ্গর ১ ব্লকের একটি হাইস্কুলে কর্মরতা ছিলেন। এক্ষেত্রে অবশ্য জল আরো গভীরে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। শাহজাহানের মেয়ে চাকরি পেয়েছিলেন ক্যানিং ২ ব্লকের একটি স্কুলে। সেখান থেকে শাজাহান-ই নাকি বেআইনিভাবে নিজের প্রতিপত্তি খাটিয়ে মেয়েকে ঘরের কাছের স্কুলে নিয়ে এসেছিলেন।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষর স্বামীও বেআইনি নিয়োগ প্রক্রিয়াতেই চাকরি পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ। তার নামও রয়েছে তালিকায়।   তিনি কাজ করতেন বামনগাছি এলাকার একটি স্কুলে।

মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের চেয়ারম্যান প্রকাশ দাস। অবশ্যই তৃণমূলের। তার দুই মেয়ে এমনকি জামাইয়েরও চাকরি হয়েছিল এইভাবেই। এক মেয়ে মাম্পি দাস হরিশ্চন্দ্রপুর হাই স্কুলে, আরেক মেয়ে শম্পা দাস হরিশ্চন্দ্রপুর কিরণবালা বালিকা বিদ্যালয়ে কর্মরতা। আর জামাই বিপ্লব দাস কাজ করতেন ভবানীপুর হাই স্কুলে। তিনজনেরই নাম রয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশিত তালিকায়।

কোচবিহারের মাথাভাঙ্গা দু’নম্বর ব্লকের তৃণমূল যুব সহ সভাপতি মদন বর্মনের নাম পাওয়া যাচ্ছে এই তালিকায়। তবে মদন দাবি করেছেন, তিনি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেই চাকরি পেয়েছেন। মিনাখাঁর বিধায়কের মেয়ের মত তিনিও আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন।

বারাসত পুরসভার এক প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর ২০১৭ সালে চাকরি পান। বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দির স্কুলে চাকরি করছিলেন তিনি। হাইকোর্টের রায়ে চাকরি গেছে তারও।

তবে তালিকায় সবচেয়ে চমকে দেওয়ার মতো নামটি বোধহয় বৃষ্টি মুখার্জির। বীরভূমের মেয়ে। বোলপুর আপার প্রাইমারি স্কুলে গ্রুপ সি স্টাফ ছিলেন। হাইকোর্টের রায় চাকরি গেছে। চমকে ওঠার মতোই, কারণ বৃষ্টি মুখারজি খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাগ্নি যে।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর