জাহাঙ্গীর বাদশা, তমলুকঃ স্কুল আছে, কিন্তু পড়ুয়া মাত্র একজন। সেই ছাত্রটির অভিভাবকদের আবার একটাই শর্ত, জোর জবরদস্তি করে তাঁদের ছেলেকে স্কুলে আটকে রাখা যাবে না। আর উপায় না থাকায় সেই শর্তেই রাজি হয়েছেন, স্কুলের বর্তমান তিন শিক্ষক। অতএব সপ্তাহে মেরেকেটে দু’ তিন দিন স্কুলে আসে, সবেধন নীলমণি বই পড়ুয়া। আর শুধু সেই দিনগুলোতেই স্কুলের মিড ডে মিলের উনুন জ্বলে।
শিক্ষার উন্নয়ন নিয়ে গত ১০ বছর ধরে শোনা রাজ্যের সরকার তথা শাসকদলের গালভরা প্রচারের মাঝে, এমনই এক টুকরো বাস্তব ছবি ধরা পড়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের আলুয়াচক জুনিয়র হাইস্কুলের অন্দরমহলে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টমশ্রেণী পর্যন্ত এখানে পড়ানোর কথা। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা আবার হাতের কাছে এই স্কুল থাকতেও, ছেলেমেয়েদের একটু দূরের হাইস্কুলে ভর্তি করেছেন।
কেন? স্থানীয় বাসিন্দা থেকে স্কুলের শিক্ষক, সকলেরই একটাই অভিযোগ, রাস্তার পাশের মাঠসংলগ্ন এই স্কুলটির আশপাশের পরিবেশ পড়ুয়াদের লেখাপড়ার পক্ষে একেবারেই উপযুক্ত নয়। সূর্যের আলো ফিকে হয়ে গেলেই, এই মাঠটিতে শুরু হয়ে যায়, নানা অসামাজিক কাজকর্ম। প্রায় প্রতিদিনই সকালে স্কুলে এসে আশপাশ থেকে মদের বোতলসহ পরিত্যক্ত নেশার সামগ্রী পরিষ্কার করতে হয়, খোদ শিক্ষকদেরকেই।
যদিও বিষয়টি নিয়ে তমলুকের জেলা শিক্ষাদফতর এবং শহীদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বিডিওকে প্রশ্ন করা হলেও, কোনও উত্তর মেলেনি। স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার মত একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে জেলা শিক্ষাদফতরের এই উদাসীনতায়, সমালোচনায় সরব হয়েছেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব।
অন্যদিকে বর্তমান তিন শিক্ষকের সাফ দাবি, হয় স্কুলটি নতুন কোনও জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হোক। নয়তো তাঁদের অন্য কোনও স্কুলে বদলি করে দিক, জেলা শিক্ষাদফতর।
এই যখন স্কুলের অবস্থা, তখন বিদ্যার দেবীর আরাধনা কার জন্য করা হবে, সেই সঙ্গত প্রশ্নটাই তুলেছিলেন স্কুলের শিক্ষকরা। আর সেই সঙ্গত কারণেই, বৃহস্পতিবার যখন গোটা রাজ্য “জয় জয় দেবী চরাচর সারে” মন্ত্রোচ্চারন করতে করতে হাতে ফুল নিয়ে মা সরস্বতীর পায়ে অঞ্জলি দিতে ব্যস্ত ছিল, তখন তমলুকের এক প্রত্যন্ত গ্রামের এই স্কুলে হয়নি দেবী বন্দনা। যদিও এত কিছু জানার পরেও ভোটের প্রচারে মত্ত শাসক যে এত বড় একটা ঘটনাকেও ‘ছোট্ট ঘটনা’ বলে উড়িয়ে দেবে না, তেমন গ্যারান্টি কিন্তু কেউ দিতে পারছেন না।



















