ব্যুরো নিউজ, ২৩ জানুয়ারি: কিসের উপর ভিত্তি করে শীর্ষ আদালত অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরির ঐতিহাসিক রায় দিয়েছিলেন
২২ জানুয়ারি অর্থাৎ সোমবার অযোধ্যায় রাম মন্দিরে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়। বছরের পর বছর চলে বিতর্ক। শেষে এলাহাবাদ হাইকোর্ট প্রথমবার এএসআই-কে সার্ভে করার নির্দেশ দেয়। দীর্ঘ দিনের আইনি জটিলতা কাটিয়ে ২০১৯ সালে রাম মন্দির মামলায় ঐতিহাসিক রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। রাম মন্দির তৈরির জন্য বিতর্কিত জমি তুলে দেওয়া হয় ট্রাস্টের হাতে। এরপরই শুরু হয় রাম মন্দির তৈরির প্রস্তুতি। যে সব তথ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে সুপ্রিম কোর্ট ওই রায় দিয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল এএসআই বা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার রিপোর্ট। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রথমে করা হয় গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং র্যাডার সার্ভে। এই পদ্ধতিতে মাটি খনন না করেই সমীক্ষা করা যায়। মাটির নীচে কোনও নির্মাণ আছে কি না, আর যদি নির্মাণ থাকে তবে তা কতো বড় তা জানতেই এই সার্ভে করা হয়। কী কী থাকতে পারে, তার একটা আন্দাজও পাওয়া যায় এই সার্ভের দ্বারা। এক বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে সেই সার্ভে করায় এএসআই। সেই রিপোর্ট দেখে হাইকোর্ট খনন কাজ শুরু করার নির্দেশ দেয়। কাটা হয় ৯টি পরিখা। এরপর শুরু হয় খননকার্য।
এএসআই- এর রিপোর্টে কী কী পাওয়া গিয়েছিলো:
এএসআই- এর দাবি, একটি নির্দিষ্ট সময়ে নয়, মাটির তলায় যে নির্মাণ পাওয়া গিয়েছিল, তা তৈরি হয়েছিল বিভিন্ন সময় ধরে, বলা ভাল বিভিন্ন যুগে এই নির্মাণকার্য সম্পন্ন করা হয়েছিলো। সেই রিপোর্টের দশম অধ্যায়ের উপসংহারে উল্লেখ করা হয়েছে, মাটির নীচে ৫০ মিটার লম্বা দৈর্ঘ্য ও ৩০ মিটার প্রস্থ সহ এক বিশালাকার নির্মাণকাজ পাওয়া গিয়েছিলো। এছাড়াও সেখানে পাওয়া গিয়েছে ৫০টি স্তম্ভ, ইট দিয়ে তৈরি ভিত্তি ও বালু পাথরের ব্লক। নৃতত্ত্ববিদেরা জানতে পেরেছিলেন যে, সেখানে এক বিশাল দেওয়াল ছিল। দেব-দেবীর ভাঙাচোরা মূর্তিও সেখান থেকে পাওয়া গিয়েছিলো।
রিপোর্টের আরও উল্লেখ্য বিষয় ছিল, মাটির তলার সেই ভবনের ভিতর একটি উঁচু জায়গায় দেখা গিয়েছিল, যা দেখে বোঝা যায় গুরুত্বপূর্ণ কোনও জিনিস সেখানে রাখা ছিল। কাটা পরিখাগুলিতে মিলেছিল টেরাকোটা ল্যাম্প। মানুষের হাড় ও মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছিল বেশ কয়েকটি স্তরে। সেগুলি বিভিন্ন সময়ের বলে দাবি করেছেন নৃতত্ত্ববিদরা।
রিপোর্টে সুঙ্গ ও গুপ্ত যুগের এমন কিছু নির্মাণের খোঁজ মিলেছিল, যার প্রয়োজনীয়তার কারণ জানা যায়নি। তবে ওই জায়গায় যে মুঘল যুগ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের যাতায়াত ছিল, সেটাই বলা হয়েছে এএসআই-এর রিপোর্টে। শুধু এই নয়। ত্রয়োদশ শতকে ওই ভবনে সাধারণ মানুষও যাতায়াত করতো বলে অনুমান করা হয়েছে। বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ওই সময়কাল বের করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে সেই রিপোর্টে। তবে ভবনের নির্মাণ বলে দেয়, দশম শতক থেকেই তার অস্তিত্ব ছিল। তারপর ধাপে ধাপে এগিয়েছে নির্মাণকাজ। রিপোর্টের একেবারে শেষের দিকে উল্লেখ করা রয়েছে আমলাকা, কপোতাপলি, প্রানালা নামক কিছু স্থাপত্যের নিদর্শণের কথা। পদ্ম ফুলের আকারের কারুকার্য সহ আরও অনেক নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিলো এএসআই- এর রিপোর্টে। ইভিএম নিউজ