ব্যুরো নিউজ ১৯ জুন: চাঞ্চল্যকর রাজা রঘুবংশী মধুচন্দ্রিমা হত্যা মামলার রহস্য অবশেষে উন্মোচিত হয়েছে। পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে এই মামলার মূল অভিযুক্ত সোনম রঘুবংশীর কথিত প্রেমিক রাজ কুশওয়াহা-ই সেই রহস্যময় “সঞ্জয় বর্মা”, যার পরিচয় এতদিন ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে রেখেছিল। এই কিনারার মধ্য দিয়ে এক ভয়াবহ প্রেম ও প্রতারণার চিত্র সামনে উঠে এসেছে। তদন্তে নেমে পুলিশ সোনমের মোবাইল ফোনের কল ডেটা রেকর্ড খতিয়ে দেখে। সেখানেই দেখা যায়, বিয়ের আগে ও পরে, এমনকি হানিমুনে গিয়েও সোনম একটি নির্দিষ্ট নম্বরে ২০০ বারের বেশি কল করেছেন, যা তার ফোনে “সঞ্জয় বর্মা” নামে সেভ করা ছিল। সোনমের ভাই গোবিন্দ এই নামে কাউকে চিনতে অস্বীকার করায় প্রথম থেকেই তদন্তকারীদের মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে।
তবে, নিবিড় তদন্তের পর পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে যে, সোনম আসলে রাজ কুশওয়াহার নম্বরটিই “সঞ্জয় বর্মা” নামে সেভ করে রেখেছিলেন সন্দেহ এড়ানোর জন্য। রেকর্ড অনুযায়ী, ৩৯ দিনের মধ্যে সোনম এবং “সঞ্জয় বর্মা” নামে সেভ করা নম্বরটির মধ্যে প্রায় ২৩৯টি কল আদান-প্রদান হয়েছে। রাজ কুশওয়াহা, যিনি ইন্দোরে সোনমের পারিবারিক ফার্নিচার শীট ব্যবসায় হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করতেন, তাকেই রাজা’র নৃশংস হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় প্রশংসা পেল উত্তরপ্রদেশ: GeM (গভর্নমেন্ট ই-মার্কেটপ্লেস) ব্যবহার করে সরকারি ক্রয়ে শীর্ষে
যেভাবে ছক কষা হয়েছিল:
ইন্দোরের ব্যবসায়ী রাজা রঘুবংশীর সাথে সোনমের বিয়ে হয় গত ১১ মে, ২০২৫ তারিখে। মধুচন্দ্রিমার জন্য তারা ২০ মে মেঘালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এর মাত্র তিন দিন পরই, ২৩ মে, সোরা (চেরাপুঞ্জি)-এর কাছে এই দম্পতি নিখোঁজ হন। পরবর্তীতে ২ জুন উইসাওডং জলপ্রপাতের কাছে প্রায় ২০০ ফুট গভীর খাদ থেকে রাজা’র পচনশীল দেহ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তে তার দেহে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।
পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে যে, রাজ কুশওয়াহার সাথে সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও সোনম রাজাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলেন। মধুচন্দ্রিমা ভ্রমণের পরিকল্পনাটি ছিল রাজাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার এক সুনিপুণ ছক। জানা গেছে, সোনম তিন ভাড়াটে খুনি – আকাশ রাজপুত, বিশাল সিং চৌহান এবং আনন্দ কুর্মিকে – এই হত্যাকাণ্ডের জন্য নিয়োগ করেছিলেন। তার চাচাতো ভাই জিতেন্দ্র রঘুবংশীও এই খুনিদের কাছে প্রথম কিস্তির টাকা পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
গ্রেপ্তার ও স্বীকারোক্তি:
রাজা নিখোঁজ হওয়ার পর সোনম নিজেই ৮ জুন উত্তর প্রদেশের গাজিপুরে আত্মপ্রকাশ করেন এবং নন্দগঞ্জ থানায় আত্মসমর্পণ করেন। তার আত্মসমর্পণের কয়েক ঘণ্টা আগেই তিন ভাড়াটে খুনিকে উত্তর প্রদেশ, ইন্দোর এবং সাগর সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পরপরই মূল পরিকল্পনাকারী রাজ কুশওয়াহাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
১১ জুন, পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের সময় সোনম তার স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলটি পুনর্নির্মাণ করেছে, যেখানে রাজা’কে কীভাবে ফাঁদে ফেলে আক্রমণ করা হয়েছিল তার ভয়ংকর বিবরণ উঠে এসেছে। সোনম হামলার সময় উপস্থিত ছিলেন এবং রাজা রক্তক্ষরণ শুরু করলে তিনি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। রাজা’র মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরেই তিনি আবার ফিরে আসেন। প্রমাণ লোপাটের জন্য তিনি রাজা’র ফোনটিও নষ্ট করে দিয়েছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গে OBC সংরক্ষণ বিলে কলকাতা হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ
চলমান তদন্ত:
মামলার তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠন করা হয়েছে। তারা শুধু এই ত্রিকোণ প্রেমের দিকটিই নয়, আর্থিক বিষয়গুলিও খতিয়ে দেখছে, কারণ রাজা সম্প্রতি একটি বড় চুক্তি পেয়েছিলেন। পুলিশ দলগুলি ইন্দোর পরিদর্শন করেছে এবং সোনম ও রাজ কুশওয়াহার পরিবারের সদস্য এবং তাদের নিজ নিজ পারিবারিক ব্যবসার কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
এই ঘটনাটি তার প্রতারণামূলক প্রকৃতি, সুচিন্তিত পরিকল্পনা এবং শিকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের জড়িত থাকার কারণে সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। রাজা রঘুবংশীর পরিবার শোকাহত এবং ন্যায়বিচার দাবি করছে। তারা অভিযুক্তদের নার্কো-অ্যানালাইসিস পরীক্ষারও অনুরোধ জানিয়েছে, যাতে এই ঘটনার সম্পূর্ণ সত্য উন্মোচিত হয়।