ব্যুরো নিউজ ১৪ অক্টোবর ২০২৫ : পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাড়োয়ার মোহনপুর-বাছারিপাড়া এলাকায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় জনপ্রিয় ইউটিউবার অরবিন্দ মণ্ডল (৪৮) এবং তার নাবালক ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে ১৫ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণ এবং ব্ল্যাকমেইল করার গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযুক্ত ইউটিউবারের নিজস্ব চ্যানেলে ৪.৫ মিলিয়নেরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে বলে জানা গেছে।
কীভাবে চলত ব্ল্যাকমেইল?
পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত বাবা-ছেলে নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীর প্রতিবেশী। কয়েক মাস আগে তারা মেয়েটির কাছে তাদের জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিও রিল তৈরিতে সহায়তার প্রস্তাব নিয়ে যায়। প্রতিবেশী হওয়ায় মেয়েটির পরিবার প্রথমে তাতে আপত্তি জানায়নি। মেয়েটি ভিডিও শুটের জন্য অভিযুক্তদের সাথে বিভিন্ন জায়গায় যেত।
পুলিশের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই সুযোগে অরবিন্দ মণ্ডল এবং তার ছেলে গোপনে মেয়েটির পোশাক পরিবর্তনের ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও রেকর্ড করে। পরে এই ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে তাকে ব্ল্যাকমেইল করা হয়। তারা ভয় দেখায়, যদি সে তাদের কথা না শোনে বা নির্যাতনের কথা প্রকাশ করে, তবে সমস্ত ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও অনলাইনে পোস্ট করে দেওয়া হবে। ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে তারা মেয়েটিকে মণ্ডলের বাড়িতে একাধিকবার ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।
পরিবারের অভিযোগ ও আইনি পদক্ষেপ
নির্যাতিতা মেয়েটি বেশ কয়েকদিন ধরে এই অত্যাচার সহ্য করার পর অবশেষে শনিবার তার পরিবারকে পুরো ঘটনা জানায়। মেয়েটির বাবা, যিনি কলকাতা পুলিশের একজন কর্মী, পরের দিন সকালেই হাড়োয়া থানায় একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যৌন নির্যাতনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগের ভিত্তিতে, হাড়োয়া পুলিশ রবিবার অরবিন্দ মণ্ডল ও তার ছেলেকে পকসো (Protection of Children from Sexual Offences) আইনের অধীনে গ্রেপ্তার করে। দুজনের বিরুদ্ধেই ধর্ষণ, অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন এবং ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির প্রাসঙ্গিক ধারায় মামলা করা হয়েছে।
আদালতে পেশ ও পুলিশি হেফাজত
গ্রেপ্তারের পর অভিযুক্ত ইউটিউবার মণ্ডলকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে। অন্যদিকে, তার নাবালক ছেলেকে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার জন্য জুভেনাইল কোর্টে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্তের স্বার্থে মণ্ডলের বাড়ি থেকে ফরেনসিক বিশ্লেষণের জন্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেট, ক্যামেরা এবং মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। একই পদ্ধতিতে অন্য কোনো অপরাধ করা হয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
এই ঘটনা মোহনপুর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রভাবশালীদের দ্বারা অপ্রাপ্তবয়স্কদের শোষণের বিষয়টি নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ বাড়িয়েছে। পুলিশ নির্যাতিতা ও তার পরিবারের জন্য কাউন্সেলিং এবং সহায়তার ব্যবস্থা করেছে।



















