ব্যুরো নিউজ ২০ জুন : উত্তরপ্রদেশকে ‘এক্সপ্রেসওয়ে প্রদেশ’-এ রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আজ আজমগড়ে ৭,২৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৯১.৩৫২ কিলোমিটার দীর্ঘ গোরক্ষপুর লিঙ্ক এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেছেন। এই উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে তিনি একদিকে যেমন রাজ্যের উন্নয়ন যাত্রার চিত্র তুলে ধরেছেন, তেমনি পূর্ববর্তী সরকারগুলির বিরুদ্ধে কঠোর আক্রমণ শানিয়েছেন। এই এক্সপ্রেসওয়েটি আঞ্চলিক সংযোগ, বিশেষ করে নেপালগামী যাত্রীদের জন্য, এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
উন্নয়নের বার্তা ও বিরোধীদের আক্রমণ
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ পূর্ববর্তী সরকারগুলির বিরুদ্ধে উন্নয়নকে অবহেলা করে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাথে হাত মেলানোর অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, “তারা ডি-কোম্পানি এবং দাউদের গ্যাংয়ের সাথে হাত মিলিয়েছিল, রাজ্যের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে আজমগড়কে সন্ত্রাসের কেন্দ্রে পরিণত করেছিল।” তিনি ২০০৭-০৮ সালে শিবলি ন্যাশনাল কলেজে ‘বন্দে মাতরম’-এর পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য অজিত রাইয়ের হত্যার কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, এখন আর কেউ এমন কাজ করার সাহস করবে না।
যোগী দৃঢ়ভাবে বলেন, “আজ, যদি কেউ রাজ্যের নিরাপত্তা নিয়ে খেলতে চেষ্টা করে, তবে তাদের জন্য ‘যমরাজের টিকিট’ ইতিমধ্যেই বুক করা আছে।” তিনি জাতীয় ও রাজ্য নিরাপত্তা কোনো পরিস্থিতিতেই বিঘ্নিত হবে না বলে দৃঢ়ভাবে জানান। অপারেশন সিন্দুর, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এবং এয়ার স্ট্রাইকের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এগুলো ‘নতুন ভারত’-এর সংকল্পের উদাহরণ। তিনি ঘোষণা করেন, “যারা নিরাপত্তা লঙ্ঘন করার সাহস করবে, তাদের ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে।”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজমগড়, যা একসময় পরিচয় সংকটে ভুগছিল, এখন অদম্য সাহসের এক দুর্গে রূপান্তরিত হয়েছে। তিনি এই পরিবর্তনকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশনা এবং ডবল-ইঞ্জিন সরকারের প্রচেষ্টার ফল বলে উল্লেখ করেন, যার কারণে উত্তরপ্রদেশ একটি ‘বিমারু’ রাজ্য থেকে ‘এক্সপ্রেসওয়ে রাজ্য’-তে পরিণত হয়েছে।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
গোরক্ষপুর লিঙ্ক এক্সপ্রেসওয়ে: সংযোগ ও কৌশলগত গুরুত্ব
নতুন এই গোরক্ষপুর লিঙ্ক এক্সপ্রেসওয়ে আজমগড়কে আম্বেদকর নগর, সন্ত কবির নগর এবং গোরক্ষপুরের সঙ্গে বিশ্বমানের সংযোগ দেবে। এটি পূর্বাঞ্চলকে উন্নয়নের মূল স্রোতে যুক্ত করবে এবং পাটনা থেকে দিল্লি পর্যন্ত যাত্রা আরও সহজ করে তুলবে।
বিশেষ করে নেপাল থেকে আগত বা নেপালগামী যাত্রীদের জন্য এই এক্সপ্রেসওয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গোরক্ষপুর থেকে আজমগড় পর্যন্ত ৯১ কিলোমিটার বিস্তৃত এই চার লেনের এক্সপ্রেসওয়েটি ভারত-নেপাল সীমান্ত থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ, পাশাপাশি সীমান্ত পারাপারকে উল্লেখযোগ্যভাবে সহজ করবে। কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই এক্সপ্রেসওয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, পর্যটন এবং যাত্রী পরিবহনে ব্যাপক সুবিধা দেবে।
গোরক্ষপুর, মহারাজগঞ্জের সোনৌলি সীমান্ত দিয়ে নেপালের সাথে সংযুক্ত, দুই দেশের পর্যটক, তীর্থযাত্রী এবং রোগীদের জন্য একটি মূল প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে। নতুন এক্সপ্রেসওয়েটি এখন গোরক্ষপুর থেকে লখনউ পর্যন্ত মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় নিরবচ্ছিন্ন যাত্রা সম্ভব করবে, যা নেপালের মানুষকে উত্তরপ্রদেশের রাজধানী এবং সেখান থেকে দিল্লি ও আগ্রার মতো বড় শহরগুলিতে সহজে প্রবেশাধিকার দেবে। পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে মিলিত হয়ে এই রুটটি সোনৌলি হয়ে ভারত প্রবেশকারী বাস বা ট্যাক্সিতে আসা মানুষের জন্য দ্রুত, নিরাপদ এবং কার্যকর সংযোগ প্রদান করবে। এটি লুম্বিনি, পোখরা এবং কাঠমান্ডু থেকে আসা পর্যটকদের ভ্রমণের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেবে, যা পর্যটন ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানকে ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে তুলবে।
কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে, নেপাল সীমান্ত থেকে মাত্র ১০০ কিমি দূরে এক্সপ্রেসওয়ের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সামরিক গতিশীলতা এবং সম্পদ মোতায়েন সক্ষম করবে, যার ফলে জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার হবে। একই সময়ে, এটি নেপালের সাথে মসৃণ বাণিজ্য সহজতর করবে, যে দেশটি আমদানির জন্য ভারতের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
প্রবীণ নাগরিকদের জন্য কেন্দ্রের ঐতিহাসিক ঘোষণা: ১৫ জুন থেকে সারাদেশে বিনামূল্যে ভ্রমণের সুবিধাউত্তরপ্রদেশের অবকাঠামো বিপ্লব: ‘এক্সপ্রেসওয়ে প্রদেশ’
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ উল্লেখ করেন যে, ২০১৭ সালে মাত্র দুটি এক্সপ্রেসওয়ে – যমুনা এবং আগ্রা-লখনউ – চালু ছিল, যার মধ্যে আগ্রা-লখনউ বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার আগে অসম্পূর্ণ ছিল। আজ, রাজ্যে ৩৪০ কিমি দৈর্ঘ্যের পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ে, ৩০০ কিমি দৈর্ঘ্যের বুন্দেলখণ্ড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ৯১ কিমি দৈর্ঘ্যের গোরক্ষপুর লিঙ্ক এক্সপ্রেসওয়ে চালু রয়েছে।এছাড়াও, ৬০০ কিমি দৈর্ঘ্যের গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে, লখনউ-কানপুর এবং বল্লিয়া লিঙ্ক সহ আরও ছয়টি এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। দিল্লি-মিরাট এক্সপ্রেসওয়ে ইতিমধ্যেই ভ্রমণের সময় তিন ঘণ্টা থেকে মাত্র ৪০-৪৫ মিনিটে নামিয়ে এনেছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী এই বছরের শেষ নাগাদ গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করবেন, যা উত্তরপ্রদেশের অবকাঠামোকে এতটাই শক্তিশালী করবে যে সমৃদ্ধির পথে রাজ্যকে কেউ আটকাতে পারবে না।
গোরক্ষপুর লিঙ্ক এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধনের সাথে সাথে, দেশের মোট অ্যাক্সেস-কন্ট্রোলড এক্সপ্রেসওয়ে নেটওয়ার্কের ৪২% এখন উত্তরপ্রদেশে রয়েছে, যা পূর্বে ছিল ৩৮%। শুধু তাই নয়, মিরাট থেকে প্রয়াগরাজ পর্যন্ত নির্মিত গঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে (৫৯৪ কিমি) উদ্বোধনের পর, দেশের অ্যাক্সেস-কন্ট্রোলড নেটওয়ার্কের ৬২% একাই উত্তরপ্রদেশে থাকবে। অর্থাৎ, দেশে নির্মিত প্রতি ১০ কিমি এক্সপ্রেসওয়ের মধ্যে ৬ কিমি এক্সপ্রেসওয়ে উত্তরপ্রদেশে থাকবে। এছাড়াও, উত্তরপ্রদেশে আরও অনেক এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণাধীন রয়েছে, এবং সরকার আরও অনেক নতুন এক্সপ্রেসওয়ের অনুমোদন দিয়েছে।
যোগী আদিত্যনাথ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেন যে, ২০৪৭ সালের মধ্যে যখন ভারত একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে, তখন উত্তরপ্রদেশ একটি উন্নত ও আত্মনির্ভরশীল রাজ্য হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে, যা ডবল-ইঞ্জিন বিজেপি সরকারের প্রচেষ্টার ফল। গোরক্ষপুর লিঙ্ক এক্সপ্রেসওয়ে স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, শিল্প বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করবে, কৃষকদের উপকৃত করবে এবং ভারত-নেপাল অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে আরও গভীর করার নতুন অধ্যায় লিখবে।