ব্যুরো নিউজ ২৮ মে : প্রতি বছর ২৮শে মে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় নারী স্বাস্থ্যের আন্তর্জাতিক কর্মদিবস, যার মূল উদ্দেশ্য হলো নারীর স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া এবং রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা। বর্তমান সময়ে, উন্নত প্রযুক্তি এবং নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা আমাদের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে, কিন্তু এর সাথে সাথে একটি গুরুতর সমস্যাও সৃষ্টি হয়েছে – নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন (Sedentary Lifestyle)। বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে এই জীবনযাপন তাদের শক্তি এবং স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। নিষ্ক্রিয় জীবনযাপনের কারণে অল্প বয়সেই নারীরা নানা রোগের শিকার হচ্ছেন। এই প্রসঙ্গে মুম্বাইয়ের Alyve Health-এর পুষ্টিবিদ ও যোগ প্রশিক্ষক তানিয়া খান্না ব্যাখ্যা করেছেন কিভাবে নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন মহিলাদের স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।


নিষ্ক্রিয় জীবনযাপনের কারণে হতে পারে যে সমস্যাগুলি:

  • হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং পিরিয়ডের সমস্যা: নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন শরীরের বিপাক প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়, যা হরমোনের ভারসাম্যহীনতার দিকে নিয়ে যায়। এর ফলে অনিয়মিত পিরিয়ড, PCOS, থাইরয়েড সমস্যা এবং মেজাজ পরিবর্তনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

  • ক্লান্তি এবং শক্তির অভাব: একটানা বসে থাকার কারণে শরীরে রক্ত ​​সঞ্চালন ধীর হয়ে যায়। এতে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়, যার ফলে সারাদিন ক্লান্তি, অলসতা এবং ঝিমুনি অনুভব হয়। মহিলাদের বাড়ি ও কাজ উভয়ই সামলাতে হয়, তাই কম শক্তি তাদের কর্মদক্ষতা কমিয়ে দেয়।

  • অধিক ওজন এবং মেটাবলিক ডিসঅর্ডারের ঝুঁকি: যখন শরীরের ক্যালরি খরচ কম হয়, তখন ওজন বৃদ্ধি পায়। এটি পেটের মেদ, কোমরের চারপাশে চর্বি এবং ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ায়, যা মহিলাদের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যার মূল কারণ হতে পারে।

  • হাড় ও পেশীর দুর্বলতা: একটানা বসে থাকলে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায় এবং পেশী শিথিল হতে শুরু করে। মহিলাদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে অস্টিওপরোসিস (হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া) এর ঝুঁকি বাড়ে। শারীরিক কার্যকলাপ না থাকলে এই প্রক্রিয়া দ্রুত হয়।

    গরমকালে ঘাম ও দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে ৬টি জরুরি স্বাস্থ্য সম্মত উপায়

  • মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব: নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন হতাশা, উদ্বেগ এবং আত্মবিশ্বাসের অভাবের কারণ হতে পারে। শারীরিক কার্যকলাপ কেবল শরীরকেই নয়, মনকেও সক্রিয় করে এবং ইতিবাচক হরমোন বৃদ্ধি করে।

  • ঘুম কমে যাওয়া: শারীরিক কার্যকলাপের অভাবে ঘুমের হরমোন (মেলাটোনিন) কমে যায়, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। ঘুমের অভাব হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং ক্লান্তি আরও বাড়িয়ে তোলে।

  • প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস: যে মহিলারা দীর্ঘক্ষণ নিষ্ক্রিয় থাকেন, তাদের প্রজনন সম্পর্কিত হরমোনে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। এর ফলে গর্ভধারণে অসুবিধা হতে পারে।


নিজেকে সুস্থ রাখবেন যেভাবে:

মহিলাদের শক্তি, আত্মবিশ্বাস এবং কর্মদক্ষতা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে। তাই একটি সক্রিয় জীবনযাপন গ্রহণ করলে কেবল রোগ প্রতিরোধ করা যায় না, বরং জীবনে নতুন শক্তি এবং ইতিবাচকতাও আনা যায়।

  • প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা যোগব্যায়াম করুন।
  • দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা এড়িয়ে চলুন – প্রতি ১ ঘণ্টা অন্তর ৫ মিনিটের জন্য হাঁটুন।
  • কাজে থাকাকালীন স্ট্রেচিং বা ডেস্ক ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
  • নাচ, গৃহস্থালীর কাজ, সিঁড়ি ব্যবহার করা ইত্যাদির মাধ্যমে শরীরকে সক্রিয় রাখুন।
  • মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ধ্যান, প্রাণায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুমের প্রতি গুরুত্ব দিন।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর