ব্যুরো নিউজ ২০ নভেম্বর : ব্যুরো নিউজ ২০ নভেম্বর : শিবের বাসস্থান ‘মাউন্ট কৈলাস’—এই পর্বতটি নানা ধর্মের মানুষের কাছে পবিত্র। হিন্দুদের বিশ্বাস যে শিব তার পরিবারসহ এখানে বাস করেন। কৈলাস পর্বত ঘিরে নানা বিশ্বাস কাহিনি ও রহস্য জড়িয়ে আছে যা এখনও অধরা। মাউন্ট কৈলাসের চূড়ায় আজ পর্যন্ত কেউ উঠতে পারেননি। তবে কেন এই পর্বত এত রহস্যময় এবং কেন কেউ এখানে পৌঁছাতে পারেননি? চলুন জেনে নেওয়া যাক কৈলাস পর্বতের আসল রহস্য কই ।
কলকাতার রাস্তায় বেপরোয়া গতির বিপত্তি, তৃণমূল কাউন্সিলরের ছেলের গ্রেপ্তার
মাউন্ট কৈলাস যা তিব্বত মালভূমিতে ২২ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। শুধু হিন্দুদের নয় বৌদ্ধ এবং জৈনদেরও পবিত্র স্থান। বলা হয় এখানে দেব-দেবীরা বাস করেন তাই মানুষ এখানে উঠলে ঈশ্বরের রোষে পড়তে পারেন এবং এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা হয় কৈলাস পর্বত পৃথিবীর কেন্দ্র। তিব্বতি ঐতিহ্য অনুযায়ী ১১ শতকে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী মিলারেপা এই পর্বতের চূড়ায় ওঠার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তার পরেই তিনি সবাইকে সাবধান করেছিলেন। এরপরেও অনেকেই ওঠার চেষ্টা করেছিলেন তবে তারা কেউ সফল হননি বিপজ্জনক আবহাওয়া বা পথ হারিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
জানা যায় মিলরেপা একমাত্র ব্যক্তি, যিনি কৈলাস পর্বতের চূড়ায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিলেন।মিলরেপা ছিলেন ১১ শতকের এক তিব্বতি ঋষী। যিনি বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করেছিলেন এবং পর্বত চূড়ায় পৌঁছানোর অলৌকিক অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন সাধারণ মানুষের পক্ষে এই পবিত্র স্থানে পৌঁছানো সম্ভব নয়।তাই তিনি অন্যদেরও এই জায়গায় ওঠার চেষ্টা না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এর পরেই বহু পর্বতারোহী এই চূড়ায় পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু বেশিরভাগই ব্যর্থ হয়েছে। কিছু পর্বতারোহী মারা গেছেন, কিছু নিখোঁজ হয়ে গেছেন, এবং কিছু রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে গেছেন। তাদের কি হয়েছিল, তা আজও অজানা।
‘পুষ্পা ২’ ট্রেলার ঝড় মুক্তির অপেক্ষায় উত্তেজনার শিখরে আল্লু অর্জুন ভক্তরা!
কৈলাস পর্বতের আরও একটি রহস্য হল সেখানে সময় স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত চলে। নখ ও চুল দ্রুত বেড়ে যায় এবং আবহাওয়া তীব্রভাবে পরিবর্তিত হয়। বাতাসের পরিবর্তন তাড়াতাড়ি ঘটে । এই রহস্যময় পর্বতের আরোহণের চেষ্টা করেছেন আরও অনেক নামী পর্বতারোহী কিন্তু সাফল্য পাননি।যারা কৈলাস পর্বত চূড়ায় উঠতে গিয়েছিলেন ফিরে এসে তারা বুঝতে পারেন যে তাদের বয়স হঠাৎ কয়েক দশক বেড়ে গেছে। এই ঘটনার পর তারা কয়েক মাসের মধ্যে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। এই সমস্ত অভিজ্ঞতা এবং রহস্য আজও কৈলাস পর্বতকে একটি অলৌকিক স্থান হিসেবে চিহ্নিত করে রেখেছে।
কৈলাস পর্বতে উঠতে না পারা্র দুটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তব কারন
বিজ্ঞানীদের মতে
কৈলাসের রহস্যের পেছনে কিছু বাস্তব কারণও রয়েছে। প্রথমত মাউন্ট কৈলাসের উচ্চতা ৬,৬৩৮ মিটার, যা মানুষের শারীরিক ক্ষমতার জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং। অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকায় শ্বাসকষ্ট ও শারীরিক দুর্বলতা হতে পারে।এছাড়াও পর্বতটি চুম্বকীয় শক্তি দিয়ে পূর্ণ বলে মনে করা হয়। এ কারণে কম্পাস এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করতে সমস্যা হয়।যা আরোহণকারীদের দিকনির্দেশনায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। কৈলাসের খাড়া এবং অনমনীয় গঠনও অভিযাত্রীদের জন্য এক কঠিন বাধা। বরফে ঢাকা এবং দুর্গম পথে ওঠা এক বড় চ্যালেঞ্জ।আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন আরোহণকারীদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। যে কোনো মুহূর্তে ঝড়, তুষারপাত বা তাপমাত্রার হঠাৎ পরিবর্তন প্রাণঘাতী হতে পারে।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে
কৈলাস পর্বত পবিত্র স্থান এবং এই কারণে বহু মানুষ এ পর্বতে ওঠার চেষ্টা করেননি। হিন্দু, বৌদ্ধ এবং বোন ধর্ম অনুসারীরা বিশ্বাস করেন মাউন্ট কৈলাসে ওঠা ঈশ্বরের বাসস্থানকে অপমান করার সমান। সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা হল কৈলাস পর্বতকে পৃথিবীর কেন্দ্র বলে মনে করা হয়। বহু মানুষ একে ‘কসমিক অ্যাক্সিস’ বা ‘বিশ্বস্তম্ভ’ বলে অভিহিত করে থাকেন। বিশ্বাস করা হয় কৈলাসের চূড়া থেকে ফেরার পর মানুষের বয়স নাকি কয়েক দশক বেড়ে যায়।মাউন্ট কৈলাসের চারপাশে রয়েছে মনোরম দৃশ্য এবং এর পাদদেশে অবস্থিত মানস সরোবর। যা বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চতম মিষ্টি জলহ্রদ। এই হ্রদের জল সবসময় অশান্ত থাকেো এর বিপরীতে রাক্ষসতালের জল সবসময়ই অশান্ত থাকে। যা স্থানীয় বিশ্বাস অনুযায়ী শিবকে সন্তুষ্ট করার জন্য রাবণের তপস্যার ফলস্বরূপ তৈরি হয়েছিল।