ব্যুরো নিউজ ৬ আগস্ট ২০২৫ : ভোটার তালিকা তৈরির সময় গুরুতর গাফিলতি এবং তথ্য সুরক্ষায় লঙ্ঘনের অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের ৪ সরকারি আধিকারিক ও ১ ক্যাজুয়াল কর্মীকে সাসপেন্ড করল নির্বাচন কমিশন। এদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে FIR দায়ের করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর পূর্ব এবং পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না বিধানসভা কেন্দ্রে এই অনিয়ম ধরা পড়েছে।
সাসপেন্ড হওয়া কর্মীদের নাম ও অভিযোগ
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বারুইপুর পূর্বের দুই ইলেকটোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ERO) দেবোত্তম দত্ত চৌধুরী ও তথাগত মণ্ডল এবং ময়নার দুই অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেকটোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (AERO) বিপ্লব সরকার ও সুদীপ্ত দাসকে অবিলম্বে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই চারজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। এদের পাশাপাশি ডেটা এন্ট্রি অপারেটর সুরজিৎ হালদারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নির্বাচন কমিশনের লগইন ক্রেডেনশিয়াল অননুমোদিত ব্যক্তির সঙ্গে শেয়ার করে ভোটার তালিকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেছেন।
Election Commission ; নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা সংশোধনের বিরোধিতায় সরব ইন্দিজোট !
রাজনৈতিক চাপ ও কারচুপির অভিযোগ
বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য এই ঘটনাকে ” intentional and carried out under pressure from the ruling Trinamool Congress” বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর দাবি, রাজনৈতিক স্বার্থে তৃণমূল কংগ্রেস দ্বারা ভোটার তালিকা বিকৃত করা হচ্ছিল। এই বিষয়ে, নির্বাচন কমিশনের সচিব সুজিত কুমার মিশ্র পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিব মনোজ পান্তকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন, যেখানে তিনি জানিয়েছেন যে, মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক রিপোর্ট দিয়েছেন যে বারুইপুর পূর্ব ও ময়নার ইআরও ও এইআরওরা ভোটার তালিকায় ভুলভাবে নাম যুক্ত করেছেন। এর আগেও রাজারহাট ও গোপালপুরের দুই ইআরও-র বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ উঠেছিল।
আইনের ধারা ও শাস্তি
কমিশনের পক্ষ থেকে মুখ্য সচিবকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত আধিকারিকরা ভোটার তালিকা তৈরির প্রক্রিয়ায় নির্বাচনী অনিয়মে জড়িত ছিলেন। জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, ভোটার তালিকা তৈরি, সংশোধন ও সংযোজনের কাজে নিযুক্ত আধিকারিকরা এই সময়ের জন্য কমিশনের অধীনে প্রেষণে থাকেন। এই ধরনের কোনও কাজে গাফিলতি বা ত্রুটি দেখা গেলে, সেই আধিকারিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কমিশন স্পষ্ট করে জানিয়েছে, এই ধরনের কর্তব্যে অবহেলার জন্য দোষী সাব্যস্ত হলে কমপক্ষে তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানার বিধান রয়েছে।
রাজ্য পুলিশের ভূমিকার ওপর সন্দেহ
যদিও কমিশন রাজ্য পুলিশকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে FIR দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে, তবে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই নির্দেশের ন্যায্য বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে থাকা রাজ্য পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন। অনেকে মনে করছেন, কমিশনকেই সম্ভবত সরাসরি এফআইআর দায়ের করতে হবে, কারণ রাজ্য পুলিশের ওপর আস্থা রাখা কঠিন হতে পারে।