Suvendu Adhikari Bidhan Sabha West Bengal

ব্যুরো নিউজ ২৩ জুন : সপ্তাহের শুরুতেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হলো। বিরোধী বিধায়কদের উপর ‘অত্যাচার’ এবং ‘গণতন্ত্রের কন্ঠরোধ’-এর অভিযোগ তুলে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছে বিজেপি। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় কর্তৃক ৪ জন বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ড করা এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তাঁর উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়—সব মিলিয়ে বিধানসভার পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে। মার্সালদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে বিজেপি বিধায়কদের চশমা, ঘড়ি ভাঙার ঘটনা তৃণমূলের ‘স্বৈরাচারী’ শাসনের নগ্ন উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরছে বিরোধীরা।

ঘটনার সূত্রপাত: বাকরুদ্ধ করার অভিযোগ

সোমবার বিধানসভা অধিবেশন শুরু হতেই বিশৃঙ্খলার সূত্রপাত হয়। এক বিল পেশের সময় বিজেপি বিধায়করা লাগাতার স্লোগান দিতে শুরু করেন। এর প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য মন্তব্য করেন যে, বিধানসভায় বিরোধীরা কিছু বললে শাসকদলের সদস্যরা চুপ করে শোনেন, কিন্তু শাসক দলের কেউ বলতে উঠলেই বিরোধীরা বাধা দেন বা ওয়াকআউট করেন। এর পরেই বিজেপি বিধায়কদের বিক্ষোভ আরও তীব্র হয় এবং তাঁরা স্লোগান দিতে দিতে ওয়েলে নেমে আসেন।
এই পরিস্থিতিতে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় চার বিধায়ক – শংকর ঘোষ, মনোজ ওঁরাও, দীপক বর্মন ও অগ্নিমিত্রা পলকে অধিবেশনের বাকি সময়ের জন্য সাসপেন্ড করার নির্দেশ দেন।

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে

মার্শাল ডেকে ‘জোরপূর্বক’ বের করে দেওয়া: ‘গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ’

স্পিকারের সাসপেনশনের নির্দেশের পরও বিধায়করা কক্ষত্যাগ করতে অস্বীকার করলে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। স্পিকার রীতিমতো মার্শাল ডেকে তাঁদের বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বাধা দিলে তাঁকে বলপূর্বক বের করে দেওয়া হয়। শঙ্কর ঘোষ অভিযোগ করেন যে, এই ধাক্কাধাক্কির সময় তাঁর চশমা এবং ঘড়ি ভেঙে যায়। এই ঘটনাকে বিজেপি ‘গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ’ এবং শাসকদলের ‘নির্মম স্বৈরাচার’-এর প্রতিফলন বলে আখ্যায়িত করেছে। তাদের দাবি, যেভাবে মার্শাল ডেকে বিধায়কদের বের করা হলো, তা গণতন্ত্রের পক্ষে লজ্জার।

স্পিকার-শুভেন্দু বাকযুদ্ধ: ভাঙা জিনিসে প্রতিবাদ

ঘটনার সময় বিধানসভায় উপস্থিত ছিলেন না বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি বিধানসভায় পৌঁছন। সাসপেন্ড হওয়া বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলার পর, শঙ্কর ঘোষ তাঁকে নিজের ভাঙা চশমা ও ঘড়ি দেখান। সেই ভাঙা জিনিসগুলি নিয়ে ক্ষুব্ধ শুভেন্দু অধিকারী সরাসরি অধ্যক্ষের ঘরে যান। সেখানে তিনি অধ্যক্ষকে বলেন, “আমাদের বিধায়কদের গায়ে হাত উঠছে, তাঁরা মার খাচ্ছেন, এটা চলতে পারে না!”
অধ্যক্ষ পাল্টা অভিযোগ করেন যে, বিজেপি বিধায়করাই ভাঙচুর করেছেন এবং মার্শালদের ধাক্কা দিয়েছেন। এরপর দু’জনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুরু হয়। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে, অধ্যক্ষ শুভেন্দুকে বলেন, “আপনি এখানে কী করছেন? দয়া করে এখান থেকে চলে যান।” এই সময় ঘরে রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন। অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গেও তর্কে জড়িয়ে পড়েন শুভেন্দু। পরে শুভেন্দু সেই ভাঙা জিনিসগুলি অধ্যক্ষের টেবিলের উপর রেখে আসেন।

আলিপুরদুয়ারের জনসভায় মোদীর বার্তা : ‘নির্মম সরকার’কে উপড়ে ফেলে ‘অপারেশন পশ্চিমবঙ্গ’র ডাক!

বিধানসভার বাইরে বিক্ষোভ ও শাসকদলের ‘অহংকার’

অধিবেশনের পর বিধানসভার বাইরে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভে নামে বিজেপি। তাদের হাতে ছিল ‘চুপ’ লেখা প্ল্যাকার্ড। তাদের দাবি, বিধানসভায় তাদের কিছু বলতে দেওয়া হচ্ছে না এবং বাকরুদ্ধ করা হচ্ছে। চলতে থাকে বিক্ষোভ ও স্লোগান। অন্যদিকে, অধ্যক্ষ স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন যে, ‘কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে’, যা শাসকদলের ‘অহংকার’ হিসেবেই দেখছে বিরোধীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর