ব্যুরো নিউজ ২১ মে : কলকাতা হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ শারীরিক শিক্ষা ও কর্মশিক্ষা শিক্ষকদের অতিরিক্ত শূন্যপদে নিয়োগের উপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছে। বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি স্মিতা দাস দে-র ডিভিশন বেঞ্চ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে, এই মুহূর্তে শিক্ষকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে।
মামলার পটভূমি: এই বিতর্কের শুরু ২০১৯ সালের ১৯ মে, যখন পশ্চিমবঙ্গ স্কুল শিক্ষা বিভাগ সহকারী শিক্ষক (শারীরিক শিক্ষা ও কর্মশিক্ষা সহ) এবং অশিক্ষক কর্মীদের জন্য ৬,৮৬১টি অতিরিক্ত পদ তৈরির নির্দেশ দেয়। এর উদ্দেশ্য ছিল অপেক্ষমাণ তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের নিয়োগ করা।
তবে, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এই সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ২০২২ সালের ১৮ নভেম্বর, বিচারপতি বসু এই নিয়োগের উপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করেন, যা একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে এবং সর্বশেষ ১৮ জুন, ২০২৫ পর্যন্ত বহাল রাখা হয়েছে।
ডিভিশন বেঞ্চের অবস্থান: চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবীরা ডিভিশন বেঞ্চের কাছে স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, স্থগিতাদেশ দীর্ঘ সময় ধরে চলায় প্রার্থীদের সমস্যা হচ্ছে। স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) ইতিমধ্যে এই অতিরিক্ত পদগুলির জন্য ১,২৪০ জন প্রার্থীকে সুপারিশ করেছে।
তবে, ডিভিশন বেঞ্চ বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর আদেশ পরিবর্তন করতে রাজি হয়নি। আদালত জানিয়েছে, বিচারপতি বসু এই মামলার শুনানি করছেন এবং এই পর্যায়ে তারা হস্তক্ষেপ করতে চান না।
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত দাবি করেছিলেন যে, অন্তর্বর্তী আদেশটি ২০২৩ সালের এপ্রিলের পরে আর কার্যকর নয়, তবুও ডিভিশন বেঞ্চ হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকার করে বিচারপতি বসুর স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছে।
যুক্তিতর্ক ও উদ্বেগ:
- অতিরিক্ত পদগুলির বৈধতা: এই পদ তৈরি নিয়ে প্রধান বিতর্ক হল এর আইনগত বৈধতা। বিচারপতি বসুর প্রাথমিক স্থগিতাদেশে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন আইন, ১৯৯৭-এর নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল।
- অপেক্ষমাণ প্রার্থীদের অবস্থা: রাজ্য সরকারের যুক্তি ছিল, অপেক্ষমাণ প্রার্থীদের বয়সের কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সমস্যা হতে পারে, তাই এই পদ তৈরি করা হয়েছে।
- সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা: সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি এই পদ তৈরি নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ করেছে, তবে আদালতের বক্তব্য ছিল, তারা শুধুমাত্র সিবিআই তদন্তের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে, পদগুলির বৈধতা নিয়ে নয়।
পরবর্তী পদক্ষেপ: এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১৮ জুন, ২০২৫-এ বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর কাছে হবে। আদালতের চূড়ান্ত ফয়সালার আগে পর্যন্ত এই পদগুলিতে নিয়োগ করা যাবে না। এই মামলার ফল হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ এবং রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।