ব্যুরো নিউজ ২৯ অক্টোবর ২০২৫ : রাজ্যে ‘এসআইআর’ (SIR) কর্মসূচি শুরুর পর থেকেই ভোটার তালিকা নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক ও একের পর এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। এক দিকে যেমন সরকারি কর্মীর নিজের নাম তালিকায় না থাকার ঘটনা সামনে এসেছে, তেমনই অন্য দিকে এই ইস্যু নিয়ে রাজ্যের শাসক দল এবং বিরোধী দলের মধ্যে চরম বাগযুদ্ধ শুরু হয়েছে।
বিএলও-এর নাম নেই তালিকায়, শান্তিপুরে প্রশ্ন
নদীয়ার শান্তিপুর ব্লকের বেলগড়িয়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ফুলিয়া পাড়ায় এক অদ্ভুত ঘটনা সামনে এসেছে। স্থানীয় ১৮৫ নম্বর বুথের বিএলও (Booth Level Officer) হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত রজনীকান্ত পাল (কালিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক)-এর নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নেই।
- বিতর্কের সূত্রপাত: ব্লক প্রশাসন তাঁকে নিয়োগপত্র দিলেও পরে জানা যায়, বয়সের কারণে তাঁর নাম ভোটার তালিকায় উঠেছে ২০১৪ সালে।
- প্রধান প্রশ্ন: সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি হলো, তাঁর বাবা-মা বা পরিবারের অন্য কারও নামও ২০০২ সালের তালিকায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। যাঁর নিজের নামই নেই, তিনি কীভাবে অন্যের ভোটার তালিকা যাচাই করবেন? এই ঘটনা চাউর হতেই রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে।
WB SIR ECI : কাল থেকে পশ্চিমবঙ্গে শুরু নির্বাচন কমিশনের ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ ; রাজ্যকে এবং বিএলওদের সঠিক ভাবে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের আর্জি কমিশনের
মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে অভিষেকের চরম হুঁশিয়ারি
এই ‘এসআইআর’ (SIR) বিতর্ক নিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) সরাসরি দেশের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জ্ঞানেশ কুমারকে তোপ দেগেছেন।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি অভিযোগ করেন:
- নির্বাচনী কৌশল: “যে পাঁচটা রাজ্যে ভোট আছে, খুব কৌশলের সঙ্গে অসমকে বাদ দিয়েছে। কারণ বিজেপি ক্ষমতায় আছে। তাহলে বিজেপি ক্ষমতায় থাকলে SIR হবে না।”
- হুঁশিয়ারি: বৈধ নাগরিকদের নাম বাদ গেলে কমিশনকে ছেড়ে কথা বলবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
- দেশ না ছাড়ার হুমকি: এর আগেও দিল্লি ঘেরাওয়ের ডাক দেওয়া অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবার সরাসরি জ্ঞানেশ কুমারকে দেশ ছেড়ে না পালিয়ে যাওয়ার চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
তবে এইখানে প্রশ্ন থাকছে যে , SIR , পশ্চিমবঙ্গ সহ ১২টি রাজ্যে হবে দ্বিতীয় দফায় , যার মধ্যে বিজেপি শাসিত রাজ্য উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ এবং রাজস্থান ও রয়েছে – তাহলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “তাহলে বিজেপি ক্ষমতায় থাকলে SIR হবে না।” – মন্তব্যের ভিত্তি কি ? যুক্তি না অপপ্রচার ?
বাঁকুড়ায় জাল ভোটারের ছড়াছড়ি
এসআইআর (SIR) কার্যকর হতেই বাঁকুড়া জেলায় ধরা পড়েছে ১,০০০-এরও বেশি ভুয়ো ভোটার। এই ঘটনা বিতর্ককে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
- গ্রামের চিত্র: বাঁকুড়ার ১ নম্বর ব্লকের শ্যামপুর গ্রাম মূলত হিন্দু অধ্যুষিত হলেও, সেখানকার ২৮৫ নম্বর বুথের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে ১০৪৬ জনের, যাদের প্রত্যেকেই মুসলিম।
- গ্রামবাসীদের অভিযোগ: গ্রামবাসীরা নিজেদের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করতে গিয়ে দেখেন তালিকায় একের পর এক ভোটার ভুয়ো।
- রাজনৈতিক আক্রমণ: ভুয়ো ভোটারের এই ঘটনা সামনে আসতেই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করেন। পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেসও নির্বাচন কমিশনকে দোষারোপ করে সুভাষ সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগে।
শুভেন্দু অধিকারীর কড়া জবাব: “গুরুত্ব দেবেন না”
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লাগাতার হুমকি এবং কটূক্তির জবাবে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তাঁর কথায়, বিরোধী শিবির অভিষেকের হুমকিকে মোটেই গুরুত্ব দিচ্ছে না।
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “ওর (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের) বড় বড় লেকচার জানা! বেয়াদপটা বলেছিল অর্জুন সিং হেরে যাবে, কিন্তু জিতেছে। ওই বেয়াদপটা বলেছিল রাজনীতি ছেড়ে দেবো যদি সৌমিত্র খাঁ একটাও নির্বাচন জেতে, সৌমিত্র খাঁ জিতেছে। ও বলেছিল দিল্লী লড়িয়ে দেবো! ওর কথার দাম দেন কেন আপনারা (সংবাদমাধ্যম), একদম গুরুত্ব দেবেন না। ওর কিছু করার দম থাকলে করে দেখাক।”
বিরোধী নেতার এই মন্তব্যে স্পষ্ট যে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুমকিকে তাঁরা বিশেষ গ্রাহ্য করছেন না এবং যেকোনো রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মানসিকতা তাঁদের আছে।



















