ব্যুরো নিউজ ৩ জুন : ওয়াকফ আইনকে চ্যালেঞ্জ করে করা আবেদনগুলি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন থাকাকালীন , কেন্দ্রীয় সরকার ওয়াকফ সম্পত্তির সঠিক ব্যবস্থাপনা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে চলেছে। আগামী ৬ জুন ‘উমীদ’ (Unified Waqf Management, Empowerment, Efficiency, and Development) পোর্টাল চালু করা হবে বলে সূত্র মারফত জানা গেছে। এই পোর্টালের মাধ্যমে সারা দেশের সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হবে, যা ৬ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
‘উমীদ’ পোর্টাল: উদ্দেশ্য ও কার্যকারিতা
‘উমীদ’ পোর্টাল চালু করার প্রধান লক্ষ্য হলো ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসনে আরও বেশি স্বচ্ছতা আনা। এই পোর্টালের মাধ্যমে দেশের সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তি ডিজিটালভাবে নিবন্ধিত হবে। ‘উমীদ’-এর পূর্ণরূপ হলো Unified Waqf Management, Empowerment, Efficiency, and Development।
পোর্টালের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়া এবং সময়সীমা:
- বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন: ওয়াকফ আইন অনুসারে, এই পোর্টালে সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক।
- সময়সীমা: পোর্টাল চালুর ৬ মাসের মধ্যে সমস্ত ওয়াকফ সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক হবে।
- তথ্য যাচাই: সূত্রের খবর, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় সম্পত্তির সনাক্তকরণের জন্য নির্বাচন কমিশনের তথ্য ব্যবহার করা হবে।
- বিস্তারিত বিবরণ: প্রতিটি সম্পত্তির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, ভূ-অবস্থান/ভূ-স্থানাঙ্ক (জিও-ট্যাগিং) সহ সমস্ত বিবরণ পোর্টালে প্রবেশ করাতে হবে। প্রতিটি সম্পত্তির জিও-ট্যাগিং এখন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং এর সম্পূর্ণ বিবরণ সাইটে ঘোষণা করতে হবে।
- দায়িত্ব: ওয়াকফ সম্পত্তি নিবন্ধন করানোর দায়িত্ব মুতাওয়াল্লি (ওয়াকফ ম্যানেজার)-এর উপর বর্তাবে। রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডগুলি এই রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
ব্যতিক্রম এবং বিতর্কিত সম্পত্তির নিষ্পত্তি:
- অতিরিক্ত সময়: যদি কোনো প্রযুক্তিগত সমস্যা বা অন্য কোনো বড় কারণে ৬ মাসের মধ্যে কোনো ওয়াকফ সম্পত্তি নিবন্ধিত না হয়, তবে তাদের ১-২ মাস অতিরিক্ত সময় দেওয়া হতে পারে।
- বিতর্কিত সম্পত্তি: যদি কোনো সম্পত্তি অনুমোদিত অতিরিক্ত সময়সীমার পরেও নিবন্ধিত না হয়, তবে তা ‘বিতর্কিত’ (disputed) বলে বিবেচিত হবে এবং বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য ওয়াকফ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। সরকার জানিয়েছে, নিবন্ধিত নয় এমন সম্পত্তিগুলিকে অবৈধ বিবেচনা করে দখল করা হতে পারে।
- মহিলাদের নামে সম্পত্তি: একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা হলো, মহিলাদের নামে নিবন্ধিত সম্পত্তি বা যেখানে মহিলারা উত্তরাধিকারী, সেগুলিকে ওয়াকফ হিসাবে ঘোষণা করা যাবে না। তবে ওয়াকফ সম্পত্তির প্রাথমিক সুবিধাভোগীদের মধ্যে নারী, শিশু এবং সমাজের অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
ওয়াকফ আইন ও সুপ্রিম কোর্টের পর্যালোচনা:
ওয়াকফ সংশোধনী আইন, যা এখন ‘উমীদ’ নামে পরিচিত, ভারতে ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনকে আরও কার্যকর এবং স্বচ্ছ করার জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ৫ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে এই আইনটি অনুমোদন করেছিলেন এবং এটি ৮ এপ্রিল ২০২৫ থেকে কার্যকর হয়েছে। তবে, এই আইনের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে বেশ কয়েকটি আবেদন বিচারাধীন রয়েছে। গত মাসে, সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলিকে এই বিষয়ে নোটিশ জারি করেছে। প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহ-এর একটি বেঞ্চ ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনকে চ্যালেঞ্জ করে বিচারাধীন অন্যান্য পিটিশনের সাথে এই আবেদনগুলিকে ট্যাগ করেছে।
আবেদনকারীরা যুক্তি দিয়েছেন যে, ওয়াকফ আইন ১৯৯৫ (ওয়াকফ সংশোধনী আইন ২০২৫ দ্বারা সংশোধিত) সংবিধানের ১৪, ১৫, ২১, ২৫, ২৬ এবং ২৭ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী এবং বৈষম্যমূলক। কারণ, শুধুমাত্র মুসলমানদের দাতব্য সম্পত্তির প্রশাসনের জন্য একটি নির্দিষ্ট আইন রয়েছে, অন্য ধর্মগুলির ক্ষেত্রে এমন কোনো অনুরূপ আইন নেই। এছাড়াও, পিটিশনে বলা হয়েছে যে সরকার জনগণের খরচে ওয়াকফ এবং তাদের সম্পত্তির যাচাইকরণের ব্যয় বহন করতে পারে না, যখন অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং তাদের সম্পত্তির জরিপের জন্য অনুরূপ কোনো অনুশীলন বা ব্যয় বরাদ্দ নেই। সুপ্রিম কোর্ট এই আবেদনগুলির বিষয়ে কেন্দ্রকে ৭ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেছে। শীর্ষ আদালত ‘প্লেসেস অফ ওয়ারশিপ অ্যাক্ট ১৯৯১’ এবং ‘ন্যাশনাল মাইনরিটি কমিশন অ্যাক্ট ১৯৯২’ কে চ্যালেঞ্জ করা পিটিশনগুলিরও শুনানি করছে।
কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য জোর দিয়ে বলেছে যে, এই আইনটি ওয়াকফ সম্পত্তির অপব্যবহার, অবৈধ দখল এবং অব্যবস্থাপনা রোধ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে এবং এটি মুসলমানদের ধর্মীয় জীবনে কোনো হস্তক্ষেপ করে না, বরং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।
