ব্যুরো নিউজ,৩ এপ্রিল: টানা দীর্ঘ বিতর্কের পর অবশেষে বুধবার গভীর রাতে লোকসভায় পাশ হল সংশোধিত ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৫। বিলের পক্ষে ভোট দেন ২৮৮ জন সাংসদ, আর বিপক্ষে ছিলেন ২৩২ জন। মোট ভোট পড়ে ৫২০টি, আর ব্যবধান দাঁড়ায় ৫৬ ভোটের। যদিও উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি হতে পারত, তবে অধিবেশন তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণই ছিল। এখন বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় এই বিল পেশ করা হবে।
উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ
লোকসভায় বিল পেশের আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। পরে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বিলটি আনুষ্ঠানিকভাবে পেশ করেন। বিরোধীরা দাবি করেন, বিলের খসড়া তৈরির সময় যৌথ সংসদীয় কমিটিতে (JPC) তাঁদের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় এ নিয়ে সরব হন। বিরোধীদের অভিযোগ নাকচ করে রিজিজু বলেন, “এই বিল সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নয়। বরং ওয়াকফ সম্পত্তির সুষ্ঠু পরিচালনা এবং পিছিয়ে পড়া মুসলিম সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্যই আইন সংশোধন করা হচ্ছে।” তাঁর দাবি, বর্তমানে দেশে ওয়াকফ সম্পত্তির সংখ্যা ৮.৭২ লক্ষ, যা সঠিকভাবে পরিচালিত হলে শুধু মুসলিমদেরই নয়, গোটা দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
Today petrol price: আজ পেট্রল ও ডিজেলের দাম কোন রাজ্যে কত থাকছে এক নজরে জেনে নিন
সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব এবং কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ অভিযোগ করেন, “এই বিল সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব করতে এবং রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটাতে আনা হয়েছে।” তাঁদের দাবি, মোদী সরকার মুসলিমদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে চাইছে এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিলটিকে “অসাংবিধানিক” বলে কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন, “এই আইন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থবিরোধী এবং বিজেপির লুকানো উদ্দেশ্য প্রকাশ করে।”
যদিও বেশিরভাগ বিরোধী দল বিলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, বিজেপির শরিক দলগুলোর সমর্থন মোদী সরকারের জন্য স্বস্তিদায়ক হয়েছে। বিহারের নীতীশ কুমারের জেডিইউ, অন্ধ্রপ্রদেশের টিডিপি এবং লোক জনশক্তি পার্টি শেষ মুহূর্তে বিলের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। তাঁদের দাবি, “এই সংশোধনী পিছিয়ে পড়া মুসলিম সম্প্রদায়ের কল্যাণে সহায়ক হবে।” বিতর্ক চলাকালীন অমিত শাহ বিরোধীদের একহাত নেন। তিনি বলেন, “কেউ অন্যের জমি দান করতে পারে না। দান করতে হলে নিজের জমিই করতে হয়।” তাঁর দাবি, ইউপিএ সরকারের আমলে ওয়াকফ বোর্ডকে অবৈধভাবে সরকারি ও ব্যক্তিগত জমি হস্তান্তরের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, যা বর্তমান সংশোধনীতে সংশোধন করা হচ্ছে। বিরোধীদের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিলটি পাশ হয়েছে। এখন রাজ্যসভায় এই বিল পেশ করা হবে, যেখানে বিজেপির অবস্থান কিছুটা দুর্বল। সেখানেও বিল পাস করানো সম্ভব হলে তা আইনে পরিণত হবে। এখন দেখার বিষয়, বিরোধীরা রাজ্যসভায় কতটা শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে এবং সরকার তার মোকাবিলা কীভাবে করে।