ব্যুরো নিউজ ০৭ জুলাই ২০২৫ : বিহারের ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ (Special Intensive Revision – SIR) সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। এই নির্দেশিকার বিরোধিতা করে একাধিক মামলা দায়ের হলেও, মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করেছে। তবে, আদালত বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখতে রাজি হয়েছে এবং পরবর্তী শুনানির তারিখ ১০ জুলাই ধার্য করেছে।
মহুয়া মৈত্র ও বিরোধীদের আপত্তি
গত ২৪ জুন নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছিল যে, বিহারের ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ করা হবে। এই প্রক্রিয়ায় ভোটারদের নির্দিষ্ট নথি, যেমন জন্ম শংসাপত্র, জমা দিতে হবে। আধার কার্ড বা রেশন কার্ডের মতো নথি এক্ষেত্রে গণ্য হবে না। চলতি বছরের অক্টোবর বা নভেম্বরে বিহার বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, তার ঠিক আগে কমিশনের এই নির্দেশ দেশজুড়ে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
বিরোধীদের অভিযোগ, এই সংশোধন প্রক্রিয়ার ফলে বহু মানুষ, বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিক, দলিত ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ ভোটাধিকার হারাবেন, যা গণতন্ত্রের পরিপন্থী। মহুয়া মৈত্র তাঁর আবেদনে উল্লেখ করেছেন যে, “কমিশনের এই নির্দেশ ভারতীয় সংবিধানের ১৪, ১৯(১), ২১, ৩২৫, ৩২৬ ধারা, জনপ্রতিনিধি আইন এবং ভোটার নিবন্ধনের নিয়ম লঙ্ঘন করছে। এই নির্দেশ যদি বাতিল না করা হয়, সেক্ষেত্রে বহু মানুষ ভোটাধিকার হারাবেন। এটা গণতন্ত্রের অসম্মান এবং দেশে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাঁধা।” তিনি একইরকম নির্দেশ যাতে বাংলা বা অন্য কোনও রাজ্যের ক্ষেত্রে না দেওয়া হয়, সেই আর্জিও রেখেছেন।
Bihar : বিহারের ঐতিহাসিক ই-ভোটিং উদ্যোগ: গণতন্ত্রে নতুন দিগন্ত?
সুপ্রিম কোর্টে মামলা ও অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশের আবেদন
মহুয়া মৈত্র ছাড়াও বেসরকারি সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস’ এবং বিহারে কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলিও কমিশনের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে। সিনিয়র অ্যাডভোকেট কপিল সিব্বল দ্রুত শুনানির আবেদন জানিয়েছিলেন, যাতে সম্ভাব্য স্থগিতাদেশ নিয়ে যুক্তিতর্ক করা যায়। বিহারের প্রাক্তন বিধায়ক মুজাহিদ আলমও এই প্রক্রিয়ার সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন, তাঁর যুক্তি, নির্বাচনের ঠিক আগে এমন ব্যাপক সংশোধন নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
কমিশনের সাফাই ও নির্দেশিকার বিবরণ
নির্বাচন কমিশন বিহারের ক্ষেত্রে তাদের এই পদক্ষেপের পক্ষে যুক্তি দিয়েছে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার জানিয়েছেন যে, ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম ছিল, তাঁদের কোনো সমস্যা নেই। তবে, বাকিদের মধ্যে যাঁদের জন্ম ১৯৮৭ সালের আগে, তাঁদের জন্মের প্রমাণপত্র দিতে হবে, এমনকি তাঁরা গত লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়ে থাকলেও ছাড় নেই। ১৯৮৭ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে যাঁদের জন্ম, তাঁদের নিজেদের এবং বাবা-মায়ের মধ্যে যে কোনো একজনের জন্মের প্রমাণপত্র দিতে হবে। ২০০৪ সালের পরে জন্ম হলে নিজের ও বাবা-মায়ের দু’জনেরই জন্মের প্রমাণপত্র দিতে হবে। কমিশন দাবি করেছে, “সকলের সহযোগিতায় ও পুরো দক্ষতার সঙ্গে বিহারের ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে।” ভুয়ো ভোটার নিরাময়ের জন্যে এই পদক্ষেপ অনিবার্য ।
Aadhar : আধার দিতে পারবেনা ভোটাধিকার , ভুয়ো ভোটার নির্মূলের পদ্ধতিতে চিন্তিত রাজনৈতিক মহল ।
সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত ও পরবর্তী পদক্ষেপ
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচন কমিশনের বিহারের ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দিতে রাজি হয়নি। অর্থাৎ, আপাতত এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে নির্বাচন কমিশনের কোনো বাধা নেই। তবে, আদালত বিষয়টি আরও গভীরভাবে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং মামলার পরবর্তী শুনানি ১০ জুলাই ধার্য করেছে। এই সিদ্ধান্ত বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে।