ব্যুরো নিউজ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির তীব্র আক্রমণের কারণে সীমান্ত পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করছে। আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের প্রায় পুরোটাই দখল করে নিলেও, সিটওয়ে-সহ তিনটি প্রধান শহর থেকে সামরিক জান্তাকে এখনো হটাতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মিকে সহায়তা দিতে বাংলাদেশের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে, যা নিয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
আরাকান আর্মিকে করিডোর দিতে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ
মিয়ানমারের সংঘাতের আবহে, গত মাসে মার্কিন প্যাসিফিক আর্মি ডেপুটি কমান্ডিং জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল জোয়েল জেবি ভাওয়েল বাংলাদেশ সফর করেন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে বৈঠক করেন। সূত্রের খবর, এই বৈঠকে জেনারেল জামান আরাকান আর্মির আক্রমণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ রুটগুলো খোলা রাখার ব্যাপারে কোনো ধরনের প্রতিশ্রুতি দিতে রাজি হননি।
এর আগে, গত ২ এপ্রিল মার্কিন ডেপুটি এনএসএ অ্যালেক্স নেলসন ওং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি খলিলুর রহমানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের এটি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ। যদিও রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেলেও, সুত্র বলছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরাকান আর্মির জন্য সরবরাহ রুটগুলো খোলা রাখার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে আগ্রহী।
Bangladesh : বাংলাদেশের ময়মনসিংহে সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটা ভাঙা হচ্ছে, ভারতের হস্তক্ষেপ
চট্টগ্রামে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের রহস্যজনক উপস্থিতি
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি, মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি বড় দল চট্টগ্রামে এসে পৌঁছেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, প্রায় ১২০ জন মার্কিন সেনা ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা ১০ সেপ্টেম্বর একটি ইউএস-বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছান এবং রেডিসন ব্লু হোটেলে ওঠেন। জানা গেছে, তাদের জন্য ৮৫টি কক্ষ বুক করা হলেও, অতিথিদের তালিকায় তাদের কোনো নাম নেই।
এরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে একটি যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নিতে এসেছেন বলে শোনা যাচ্ছে এবং ২০ সেপ্টেম্বর তাদের চট্টগ্রাম ছাড়ার কথা। এই ঘটনার কয়েকদিন আগেই ৩১ আগস্ট ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে মার্কিন স্পেশাল ফোর্সের একজন কমান্ড অফিসারের মৃতদেহ পাওয়া যায়। ৫০ বছর বয়সী টেরেন্স আরভেল জ্যাকসন নামের ওই কর্মকর্তার মৃত্যু রহস্যজনক পরিস্থিতিতে ঘটলেও, দুই দেশের কেউই এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
Bangladesh : বাংলাদেশে স্বৈরাচারী তন্ত্রের প্রকোপে অর্থনীতিবিদ আবার !
ভারতীয় সেনার সদর দফতর পরিদর্শন মিয়ানমার সেনাপ্রধানের
এদিকে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর (তাতমাদাও) বিএসও-১-এর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল কো কো উ এবং চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল শুক্রবার কলকাতার বিজয় দুর্গ-এ ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দফতর পরিদর্শন করেন। এই সফরের অংশ হিসেবে তারা দিল্লি, আগ্রা এবং গয়ায়ও যান।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, “লেফটেন্যান্ট জেনারেল কো কো উ ইস্টার্ন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং-ইন-চিফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাম চন্দর তিওয়ারির সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর দৃঢ়তা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের প্রশংসা করেন।” দুই পক্ষই দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেন।
দুই দেশের মধ্যে সপ্তম আর্মি টু আর্মি স্টাফ টকস (AAST)-এর অংশ হিসেবে এই সফর অনুষ্ঠিত হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, এটি দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা জোরদার করবে। ভারত মিয়ানমারকে তাদের প্রতিরক্ষা পরিকাঠামো আধুনিকীকরণ এবং প্রযুক্তি-ভিত্তিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে ভারত নজরদারি বাড়িয়েছে বলেও খবর রয়েছে।



















