ব্যুরো নিউজ ১১ নভেম্বর ২০২৫ : সোমবার সন্ধ্যায় লালকেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে গাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১২ জনের মৃত্যু এবং ২৯ জন আহত হওয়ার ঘটনার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মঙ্গলবার রাজধানীতে এক উচ্চপর্যায়ের নিরাপত্তা পর্যালোচনা বৈঠক করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব গোবিন্দ মোহন, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (IB) ডিরেক্টর তপন ডেকা, দিল্লি পুলিশ কমিশনার সতীশ গোলচা এবং এনআইএ (NIA)-এর ডিজি সদানন্দ বসন্ত দাড়ে। এছাড়াও জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের ডিজি নলিন প্রভাত ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দেন।
বৈঠকে শীর্ষ আধিকারিকেরা বিস্ফোরণের পরবর্তী পরিস্থিতি এবং তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে বিস্তারিত উপস্থাপনা দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, শীর্ষ তদন্তকারী সংস্থাগুলি পূর্ণ তীব্রতায় তদন্ত করছে এবং বিস্ফোরণের প্রতিটি দিক খতিয়ে দেখা হবে।
ইউএপিএ ধারায় এফআইআর ও সতর্কতা
দিল্লি পুলিশ এই বিস্ফোরণ কাণ্ডে কোতোয়ালি থানায় বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন (UAPA) এবং বিস্ফোরক পদার্থ আইনে এফআইআর (FIR) দায়ের করেছে। এফআইআর-এ ইউএপিএ-র ধারা ১৬ ও ধারা ১৮ প্রয়োগ করা হয়েছে, যা মূলত সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ এবং ষড়যন্ত্রের শাস্তির সঙ্গে সম্পর্কিত।
হামলার পর থেকেই গোটা রাজধানী জুড়ে চরম সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিমানবন্দর, রেলওয়ে স্টেশন, বাস টার্মিনাল সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে পাহা’রগঞ্জ, দরিয়াগঞ্জ এবং আশেপাশের এলাকায় রাত্রিকালীন অভিযান চালিয়ে হোটেলগুলির নথি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই অভিযানে চারজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তদন্তের মূল অভিমুখ: পুলওয়ামা যোগ ও ‘তিন ঘণ্টা’র রহস্য
বিস্ফোরিত হুন্দাই আই২০ (Hyundai i20) গাড়িটির সূত্র ধরে তদন্তকারীরা জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামার যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন। জানা গিয়েছে, গাড়িটি পুলওয়ামার এক বাসিন্দা কিনেছিলেন।
দিল্লি পুলিশ সূত্রে খবর, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, সন্দেহভাজন চালক ডঃ উমর মোহাম্মদ সোমবার দুপুর ৩টা ১৯ মিনিট থেকে ৬টা ২২ মিনিট পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা লালকেল্লার কাছে গাড়িটি পার্কিং লটে রেখেছিলেন। এই ‘তিন ঘণ্টার’ সময়কালে উমর কী করছিলেন— তিনি ভেতরে ছিলেন, কারো সঙ্গে দেখা করেছিলেন, নাকি হামলার আগে রেকি করছিলেন— সেইসব প্রশ্নই এখন তদন্তের কেন্দ্রে রয়েছে।
তদন্তকারীরা সন্দেহ করছেন, উমর হয়তো কোনো হ্যান্ডলারের থেকে শেষ নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করছিলেন অথবা সর্বোচ্চ ক্ষয়ক্ষতি নিশ্চিত করতে সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজে উমরকে একা দেখা গেলেও, পুলিশ সব দিক খতিয়ে দেখছে।
আত্মঘাতী হামলা ও ফরিদা’বাদ মডিউলের সংযোগ
পুলিশের ধারণা, এটি আত্মঘাতী (Fidayeen) হামলা হতে পারে। সিনিয়র পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের সময় চলন্ত আই২০ গাড়িতে তিনজন আরোহী ছিলেন বলে জানা গেছে। তবে আহতদের শরীরে ছিদ্র বা গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়নি, যা সাধারণ বোমা বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক। এই বিষয়টি আত্মঘাতী বা ভিন্ন কোনো উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক ব্যবহারের দিকে ইঙ্গিত করছে।
তদন্তকারীরা ফরিদা’বাদের আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়-এর সঙ্গে যুক্ত তিন ডাক্তারের জড়িত থাকার বিষয়টিও খতিয়ে দেখছেন, যারা এনক্রিপ্টেড টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে radicalised network তৈরি করেছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এই নেটওয়ার্কের সদস্য সংখ্যা, বিস্ফোরকের সরবরাহ শৃঙ্খল এবং বৈদেশিক যোগসূত্র— সবকিছুই এখন কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির তদন্তের আওতায়। এনআইএ, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো এবং দিল্লি পুলিশের বিশেষ শাখা সহ ৫০০-এরও বেশি দক্ষ আধিকারিকের একটি বিশাল দল এই তদন্তে কাজ করছে।



















