ব্যুরো নিউজ ২ই জুন  : ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত এক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে, যেখানে ইউক্রেন রাশিয়ার অভ্যন্তরে একাধিক সামরিক বিমানঘাঁটিতে ‘কামিকাজে’ ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এই ব্যাপক হামলা এমন এক সময়ে ঘটল, যখন উভয় দেশই ইস্তাম্বুলে দ্বিতীয় দফার শান্তি আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই যুদ্ধবৃদ্ধি আলোচনার গতিপথকে কতটা প্রভাবিত করবে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে।


রুশ বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের ‘সন্ত্রাসী হামলা’

রবিবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক স্বীকার করেছে যে, দেশের বিভিন্ন সামরিক বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেন সিরিজ ‘কামিকাজে ড্রোন হামলা’ চালিয়েছে। তারা এই হামলাকে ‘সন্ত্রাসী’ আক্রমণ বলে আখ্যা দিয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, হামলাগুলো প্রতিহত করা হয়েছে, তবে কিছু ক্ষেত্রে ‘বস্তুগত ক্ষতি’ হয়েছে।

  • আক্রান্ত অঞ্চল: মন্ত্রক অনুসারে, মুরমানস্ক অঞ্চল (দেশের উত্তর), ইভানভো ও রিয়াজান অঞ্চল (মধ্য রাশিয়া), সেইসাথে সাইবেরিয়ার ইরকুটস্ক অঞ্চল এবং সুদূর প্রাচ্যের আমুর অঞ্চলের বিমানঘাঁটিগুলি লক্ষ্যবস্তু ছিল।
  • ড্রোনের ধরন: সমস্ত হামলায় ফার্স্ট-পার্সন ভিউ (FPV) ‘কামিকাজে’ ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে কিছু ড্রোন বিমানঘাঁটির খুব কাছাকাছি এলাকা থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।
  • ক্ষয়ক্ষতি ও আটক: প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, মুরমানস্ক ও ইরকুটস্ক অঞ্চলে কিছু বিমানে আগুন ধরে গিয়েছিল, যা এখন নিভিয়ে ফেলা হয়েছে। হামলায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে, হামলার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে মন্ত্রক দাবি করেছে, যদিও আটকদের সংখ্যা বা পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

    বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে


ইউক্রেনের ‘স্পাইডারের জাল’ অভিযান: জেলেনস্কির তত্ত্বাবধানে ১ বছরের প্রস্তুতি

ইউক্রেনের নিরাপত্তা পরিষেবা (SBU) গর্ব করে ঘোষণা করেছে যে, তারা রাশিয়ায় ‘শত্রু কৌশলগত বোমারু বিমানগুলিকে’ ধ্বংস করার লক্ষ্যে একটি ‘বড় আকারের বিশেষ অভিযান’ চালাচ্ছে। বিবিসি এসবিইউ সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে যে, “স্পাইডারের জাল” (Spider’s Web) কোডনামে এই হামলার প্রস্তুতি নিতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগেছে এবং প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নিজে এর তত্ত্বাবধান করেছেন।

  • লক্ষ্যবস্তু: জানা গেছে, এই বিমানঘাঁটিগুলিতে রাশিয়ার কৌশলগত বিমান সম্পদ যেমন কৌশলগত বোমারু বিমান TU-95s, সুপারসনিক দূরপাল্লার বোমারু বিমান TU-22M3s, এবং আগাম সতর্কতা ও নিয়ন্ত্রণ বিমান A-50 এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম রাখা ছিল। ইউক্রেনের দাবি, এই হামলায় ৪০টিরও বেশি রুশ যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে।
  • হামলার পদ্ধতি: কিছু প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোনগুলো ট্রাকে করে রুশ সীমান্তের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হয়, যা রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়েছে।

শান্তি আলোচনার প্রাক্কালে উত্তেজনা বৃদ্ধি

এই বিমানঘাঁটিতে হামলার ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটল, যখন সোমবার ইস্তাম্বুলে দুই দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনার পরবর্তী দফা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। যদিও উভয় পক্ষই জানিয়েছে যে তাদের প্রতিনিধি দল আলোচনার জন্য রওনা হয়েছে, তবে এই বড় ধরনের উত্তেজনা আলোচনার ওপর কী প্রভাব ফেলবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

  • প্রস্তুতি ও উদ্দেশ্য: ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রবিবার সকালেই বলেছিলেন যে, একটি প্রতিনিধি দল তুরস্কে যাবে যার মূল লক্ষ্য হবে একটি “সম্পূর্ণ এবং নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি” অর্জন করা। রুশ গণমাধ্যমও জানিয়েছে যে, একটি রুশ প্রতিনিধি দল আলোচনার জন্য তুরস্কে রওনা হয়েছে।
  • পূর্ববর্তী ঘটনা: বিমানঘাঁটিতে হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই রাশিয়ার ব্রিয়ানস্ক এবং কুরস্ক অঞ্চলে দুটি সেতু ভেঙে যাওয়ায় ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে অন্তত সাতজনের মৃত্যু এবং বহু মানুষ আহত হয়েছিলেন। রুশ তদন্তকারীরা উভয় ঘটনাকে নাশকতা বলে অভিহিত করে ইউক্রেনকে দায়ী করেছে।

    ‘দক্ষিণায় পাক অধিকৃত কাশ্মির চাই’: সেনাপ্রধানকে জগদ্গুরু রামভদ্রাচার্য্যের স্পষ্ট বার্তা


রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক প্রভাব

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ইউক্রেনের ক্রমবর্ধমান হামলা শান্তি প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার একটি প্রচেষ্টা। ইউক্রেন রাশিয়ার কৌশলগত বিমান বহর, যা তাদের পারমাণবিক ট্রায়াডের অংশ, সেটিকে লক্ষ্য করে আক্রমণ বাড়ানোয় মস্কো চুপ থাকবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। সামরিক প্রতিশোধ ছাড়াও রাশিয়ার কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া কী হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যখন সংঘাতের অবসানের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে এবং রাশিয়াও ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা শিল্প স্থাপনাগুলির পাশাপাশি অন্যান্য সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে বেশ কয়েকটি প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে। এই হামলাগুলো শান্তি আলোচনার গতিপথকে আরও জটিল করে তুলবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর