ব্যুরো নিউজ ১২ আগস্ট ২০২৫ : ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে আগামী ১৫ই আগস্ট আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই বৈঠকের আগে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে ভূখণ্ড ছাড়ার একটি প্রস্তাব আসার জল্পনা শুরু হয়েছে, যা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। হোয়াইট হাউস সূত্রে খবর, এই বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকেও আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, পুতিনের সঙ্গে তার এই বৈঠক হবে “ফিল-আউট মিটিং,” যার মূল উদ্দেশ্য যুদ্ধ বন্ধের জন্য আলোচনা শুরু করা। তিনি বলেন, কিছু “ভূখণ্ড বিনিময়” হতে পারে, যা উভয় দেশের জন্যই “কল্যাণকর” হবে। ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ-এর মস্কো সফরের সময় পুতিন একটি পূর্ণ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন, যেখানে ইউক্রেন দোনেৎস্ক থেকে তাদের সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করে নেবে এবং এর ফলে লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে আসবে। ট্রাম্প বলেছেন যে, এই বৈঠকের পর তিনি ইউরোপীয় নেতাদের এবং সবশেষে জেলেনস্কিকে ফোন করে সম্ভাব্য “ন্যায্য চুক্তির” বিষয়ে জানাবেন।
Donald Trump : ভারতের প্রশ্নের মুখে প্রকাশ মার্কিন রাষ্ট্রপতির অজ্ঞতা , লজ্জাজনক দ্বিচারিতা !
জেলেনস্কির কঠোর প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের ভূখণ্ড বিনিময়ের প্রস্তাবের জবাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, ইউক্রেন কোনো অবস্থাতেই দখলদারদের কাছে নিজেদের ভূখণ্ড সমর্পণ করবে না। “আমরা রাশিয়াকে তাদের আগ্রাসনের জন্য কোনো পুরস্কার দেব না,” জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেন। তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে নেওয়া যেকোনো সিদ্ধান্ত “অকার্যকর” এবং তা কখনোই কার্যকর হবে না। যদিও ট্রাম্প বলেছেন যে তিনি জেলেনস্কিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রথমে জানাবেন, কিন্তু জেলেনস্কি ট্রাম্প ও পুতিনের এই বৈঠকের কঠোর সমালোচনা করেছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ইউরোপের অবস্থান
ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক এবং শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, ফিনল্যান্ড এবং পোল্যান্ডের প্রতিনিধিরা লন্ডনে একটি বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামি, ইউক্রেনের শীর্ষ উপদেষ্টা আন্দ্রেই ইয়ারমাক এবং মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ইউরোপীয় নেতারা জোর দিয়ে বলেছেন যে, ইউক্রেনের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো শান্তি চুক্তি গ্রহণযোগ্য হবে না। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিও একমত হয়েছেন যে, কোনো শান্তি চুক্তি “ইউক্রেনের সঙ্গে তৈরি করতে হবে, তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।”
রুশ দ্বারা আকাশে পরাস্ত মার্কিন যুদ্ধবিমান F16 ; নিহত ইউক্রেনের বৈমানিক ।
বৈঠকের স্থান ও প্রেক্ষাপট
ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী, পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠকটি আলাস্কায় অনুষ্ঠিত হবে। ১৮৬৭ সালে রাশিয়া এই অঞ্চলটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিক্রি করেছিল, যা এই বৈঠকের স্থানকে একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব দিচ্ছে। ট্রাম্প এই বৈঠকের স্থানকে “খুবই জনপ্রিয়” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এই বৈঠক এমন এক সময় হচ্ছে, যখন ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের শেষ সময়সীমা ঘোষণা করেছিলেন। পুতিনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তিনি এই নিষেধাজ্ঞা এড়াতে চেয়েছেন। যদিও ক্রেমলিন এই বৈঠকের বিষয়ে খুব বেশি প্রত্যাশা দেখাচ্ছে না, তবুও তারা এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে।