ব্যুরো নিউজ ২২ মে : পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গণতান্ত্রিক দেশটির সর্বেসর্বা, মহৎ হৃদয়ের অধিকারী বর্তমান রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও তাঁর চিরাচরিত মেজাজের জাদুতে মুগ্ধ করলেন বিশ্বকে। সম্প্রতি পেন্টাগনের একটি তুচ্ছ ঘোষণা নিয়ে এক ‘অত্যন্ত মেধাবী’ (!) সাংবাদিকের প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হয়ে তিনি যে প্রতিক্রিয়া দিলেন, তা নিয়ে এখন বিশ্ব জুড়ে হাসির রোল, অবশ্য ট্রাম্পের ভক্তরা একে দেশপ্রেমের চূড়ান্ত নিদর্শন বলেই মনে করছেন।
‘টেরিবল’ সাংবাদিক এবং এক অনবদ্য দান
ঘটনার সূত্রপাত হয় হোয়াইট হাউসে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি সিরিল রামাফোসার সঙ্গে এক ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বৈঠক চলাকালীন। সেখানেই এক NBC সাংবাদিকের ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ প্রশ্ন: “পেন্টাগন একটি কাতারি বোয়িং 747 বিমানকে ভবিষ্যতের এয়ার ফোর্স ওয়ান হিসেবে পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে, এ বিষয়ে আপনার কী বক্তব্য?” আহা! কী ভয়ানক প্রশ্ন! যেখানে খোদ রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের উপর হিংসা ও বর্ণবাদী আইন নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন, সেখানে কিনা সাংবাদিক কাতারি জেট নিয়ে প্রশ্ন করছেন!
ট্রাম্পের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া ছিল, “আপনি কী বলছেন?… আপনি কী বলছেন? আপনি… আপনাকে এখান থেকে চলে যেতে হবে… কাতারি জেটের সঙ্গে এর কী সম্পর্ক?” তিনি আরও যুক্ত করেন, “ওরা মার্কিন বিমানবাহিনীকে একটি জেট দিচ্ছে, আর এটা দারুণ ব্যাপার… আমরা আরও অনেক কিছু নিয়ে কথা বলছি, আর এই NBC আপনাদের মনোযোগ সরাতে চাইছে যা আপনারা এইমাত্র দেখলেন।” এরপরই আসে আসল মন্তব্য, “আপনি একজন ভয়ানক (terrible) রিপোর্টার। প্রথমত, রিপোর্টার হওয়ার মতো আপনার যোগ্যতা নেই। আপনি যথেষ্ট স্মার্ট নন।” উফফ! কী বিনয়! কী সহনশীলতা!
NBC-র বিরুদ্ধে ‘তদন্তের’ আহ্বান: সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার নতুন সংজ্ঞা
শুধু সাংবাদিককে অপমান করেই ক্ষান্ত হননি ট্রাম্প। তিনি NBC এবং এর মূল সংস্থার সিইও ও চেয়ারম্যান ব্রায়ান রবার্টসকে তাদের কার্যক্রমের জন্য তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন, এবং চ্যানেলটিকে ‘লজ্জাজনক’ (disgrace) বলেও আখ্যা দিয়েছেন। ভাবুন তো, দেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি, যিনি কিনা সর্বদা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পূজারী, তিনিই কিনা এমন একটি ‘গণতান্ত্রিক’ অনুরোধ করছেন! “আপনার উচিত NBC-এর স্টুডিওতে ফিরে যাওয়া, কারণ ব্রায়ান রবার্টস এবং যারা ওই জায়গাটি চালায়, তা খুবই খারাপ। আপনারা যেভাবে ওই নেটওয়ার্কটি চালান, তা খুবই খারাপ। এবং আপনি একজন কলঙ্ক। আপনার থেকে আর কোনো প্রশ্ন নয়।” – ট্রাম্পের এই বচন ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, অন্তত সংবাদমাধ্যমের ইতিহাসে তো বটেই।
কাতারি দান: ট্রাম্পের দেশপ্রেমের এক নতুন নজির
সাংবাদিকের ‘অনভিজ্ঞতা’ সত্ত্বেও ট্রাম্প মহানুভবতার পরিচয় দিয়ে কাতারি উপহারের পক্ষে সওয়াল করেন। “কিন্তু আপনি কিনা মার্কিন বিমানবাহিনীকে দেওয়া একটি জেট নিয়ে কথা বলছেন, যা একটি অত্যন্ত চমৎকার জিনিস। তারা জেট ছাড়াও ৫.১ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের বিনিয়োগও দিয়েছে।” – এই কথাগুলো শুনে কাতারের চোখেও জল এসে গিয়েছিল হয়তো! একটি জেট এবং সামান্য কিছু বিনিয়োগ, আর তাতেই ট্রাম্পের মতো একজন ‘দেশপ্রেমিক’ এতটাই আপ্লুত!
সিএনএন-এর সূত্র অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা বিভাগের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ কাতার থেকে একটি বোয়িং 747 গ্রহণ করেছেন, যা ব্যাপক পরিবর্তন ও সুরক্ষামূলক সংযোজনের পর রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প ব্যবহার করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পার্নেলও বিমানের গ্রহণ নিশ্চিত করেছেন এবং বলেছেন যে, এই হস্তান্তর মার্কিন আইন ও প্রবিধান মেনে করা হয়েছে। ট্রাম্প নিজেও তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পূর্বে বলেছিলেন যে, জেটটি “আমার জন্য নয়!” বরং “একটি জাতির উপহার।” হ্যাঁ, অবশ্যই, সবকিছুই দেশের জন্য, নিজেদের জন্য তো কিছুই নয়! এভাবেই ট্রাম্প আবারও প্রমাণ করলেন, তিনিই একমাত্র যিনি দেশপ্রেমের সঠিক অর্থ বোঝেন, বাকিরা কেবল তুচ্ছ প্রশ্ন করে সময় নষ্ট করে।