ব্যুরো নিউজ ০৪ নভেম্বর ২০২৫ : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবিলম্বে নিউক্লিয়ার বা পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা শুরু করবে। রাশিয়া আধুনিক পরমাণু-সক্ষম ব্যবস্থা, যেমন পসাইডন আন্ডারওয়াটার ড্রোন-এর সাম্প্রতিক পরীক্ষা চালানোর পরই ট্রাম্প এই বড় পদক্ষেপের কথা জানালেন, যা দুই পরমাণু শক্তির মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে পারে।
বৃহস্পতিবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে ওঠার আগে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, নিরস্ত্রীকরণ একটি “বিশাল বিষয়” হলেও, তিন দশকেরও বেশি সময় পর আমেরিকার পরমাণু পরীক্ষা আবার শুরু করা “সময়োপযোগী”।
অন্যান্য দেশের পরীক্ষার দিকে ইঙ্গিত
রবিবার ‘সিবিএস নিউজের ৬০ মিনিটস’ অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প দাবি করেন, রাশিয়া, চিন, উত্তর কোরিয়া এবং পাকিস্তান-সহ একাধিক দেশ গোপনে পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালাচ্ছে, যেখানে আমেরিকা একমাত্র দেশ যারা পরীক্ষা করা বন্ধ রেখেছে।
ট্রাম্প বলেন, “রাশিয়া পরীক্ষা করছে, আর চিন পরীক্ষা করছে, কিন্তু তারা এ নিয়ে কথা বলছে না। আমরা একটি উন্মুক্ত সমাজ, আমরা আলাদা। আমরা এটা নিয়ে কথা বলি। আমাদের কথা বলতে হয়, কারণ তা না হলে আপনারা রিপোর্ট করবেন। তাদের এমন সাংবাদিক নেই যারা এ নিয়ে লিখবেন।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা পরীক্ষা চালাব, কারণ তারা এবং অন্যেরা পরীক্ষা চালায়। আর অবশ্যই উত্তর কোরিয়া পরীক্ষা চালাচ্ছে। পাকিস্তানও পরীক্ষা চালাচ্ছে।”
ট্রাম্পের দাবি, এই দেশগুলি ভূগর্ভে পরীক্ষা চালায়, যেখানে মানুষজন ঠিক কী ঘটছে তা জানতে পারে না, তবে মৃদু কম্পন অনুভূত হয়। এর আগে বৃহস্পতিবারও ট্রাম্প রাশিয়া ও চিনের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, “তাদের সবাই নিউক্লিয়ার পরীক্ষা চালাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে… অন্যরা পরীক্ষা চালানোয়, আমার মনে হয় আমরাও পরীক্ষা চালালে তা উপযুক্ত হবে।”
পাকিস্তানের পাল্টা জবাব ও আন্তর্জাতিক চুক্তি
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে একজন ঊর্ধ্বতন পাকিস্তানি আধিকারিক পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, ইসলামাবাদ “প্রথম দেশ হবে না যারা পরমাণু পরীক্ষা আবার শুরু করবে।” ওই আধিকারিক সিবিএস নিউজকে জানান, “পাকিস্তান প্রথম দেশ ছিল না যারা পরমাণু পরীক্ষা করেছিল এবং পরীক্ষা আবার শুরু করার ক্ষেত্রেও প্রথম হবে না।” উল্লেখ্য, পাকিস্তান CTBT চুক্তির স্বাক্ষরকারী না হলেও, ১৯৯৮ সালে শেষ পরীক্ষার পর থেকে তারা একতরফাভাবে পরমাণু পরীক্ষার ওপর ‘মোরাটোরিয়াম’ বা স্থগিতাদেশ বজায় রেখেছে।
আন্তর্জাতিক তথ্য অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়া ছাড়া গত কয়েক দশকে অন্য কোনো দেশের পরমাণু বিস্ফোরণ পরীক্ষার খবর জানা নেই। আমেরিকা ১৯৯২ সালে, রাশিয়া ১৯৯০ সালে এবং চিন ১৯৯৬ সালে শেষবার পরীক্ষা চালিয়েছিল।
ভারতের সামরিক প্রস্তুতি ও উদ্বেগের কারণ
এই পরিস্থিতির মধ্যে, পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সম্প্রতি প্রশ্নের মুখে এসেছে। জানা যায়, ভারত এই বছর ‘অপারেশন সিন্দূর’-এর সময় পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রাগার এবং কৌশলগত নিউক্লিয়ার কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল। কিরণ পাহাড়ের কাছে পরমাণু মজুত কেন্দ্র এবং নুর খান বিমানঘাঁটির কাছে কৌশলগত কমান্ড বাঙ্কারগুলি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল বলে খবর। এর পর থেকেই ওই অঞ্চলে স্থানীয় তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়া এবং ছোট মাপের ভূমিকম্পের খবর আসে, যা ভূগর্ভস্থ পরীক্ষার সময় ট্রাম্পের উল্লেখ করা ‘কম্পন’ সম্পর্কিত বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।
এই ঘটনার পর থেকে ভারতে আমেরিকার অবিশ্বাস বেড়েছে বলেও খবর। তবে, পাকিস্তানের পরমাণু হুমকির মোকাবিলায় ভারত তার নিজস্ব নিউক্লিয়ার ট্রায়াড (স্থল, জল ও আকাশ থেকে পরমাণু অস্ত্র উৎক্ষেপণের ক্ষমতা) তৈরির মাধ্যমে সব ধরনের প্রস্তুতির পরিকল্পনা করে রেখেছে।



















