ব্যুরো নিউজ ২৬ মে : ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার সর্ববৃহৎ বিমান হামলার পর এবার সরাসরি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘একেবারে পাগল’ (absolutely crazy) বলে আক্রমণ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুধু তাই নয়, মস্কোকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, ইউক্রেনকে সম্পূর্ণ দখলের যেকোনো চেষ্টা ‘রাশিয়ার পতন ডেকে আনবে’।
পুতিনের বিষয়ে ট্রাম্পের ‘ধৈর্যচ্যুতি’: ‘সে উন্মাদ হয়ে গেছে!’
নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ তীব্র ভাষায় একটি পোস্টে ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, পুতিনের উপর তার ধৈর্য কমছে। মস্কো যখন টানা তৃতীয় রাতের মতো কিয়েভ ও অন্যান্য ইউক্রেনীয় শহরগুলিতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, ঠিক তখনই রুশ নেতার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা প্রকাশ্যে এল। ট্রাম্প তার পোস্টে লিখেছেন, “রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আমার সবসময় খুব ভালো সম্পর্ক ছিল, কিন্তু তার কী হয়েছে! সে একেবারে পাগল হয়ে গেছে! সে অনর্থক বহু মানুষকে হত্যা করছে, এবং আমি শুধু সৈন্যদের কথা বলছি না।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও হুঁশিয়ারি দেন যে, যদি পুতিন ইউক্রেনকে সম্পূর্ণভাবে দখল করতে চান, তাহলে তা রাশিয়ার পতন ডেকে আনবে! ট্রাম্প আরও যোগ করেন, “ইউক্রেনের শহরগুলিতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়া হচ্ছে, কোনো কারণ ছাড়াই। আমি সবসময় বলেছিলাম যে সে ইউক্রেনকে পুরোটাই চায়, শুধু একটি অংশ নয়, এবং হয়তো সেটাই প্রমাণিত হচ্ছে, কিন্তু যদি সে তা করে, তবে তা রাশিয়ার পতন ডেকে আনবে।”
জেলেনস্কির প্রতিও ট্রাম্পের বিরক্তি: ‘কথা বলা বন্ধ করুন’
ট্রাম্প শুধু পুতিন নন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতিও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন যে, জেলেনস্কি যেভাবে কথা বলছেন, তা ইউক্রেনের জন্য ‘কোনো ভালো করছে না’। ট্রাম্প তার পোস্টে লিখেছেন, “একইভাবে, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি যেভাবে কথা বলছেন, তাতে তার দেশের কোনো উপকার হচ্ছে না। তার (জেলেনস্কি) মুখ থেকে যা বেরোচ্ছে, তা সমস্যা তৈরি করছে, আমি এটা পছন্দ করি না, এবং এটা বন্ধ হওয়া উচিত।”
এছাড়াও, ট্রাম্প তার পূর্বসূরি জো বাইডেনকেও কটাক্ষ করে বলেন, “যদি আমি প্রেসিডেন্ট থাকতাম, তাহলে এই যুদ্ধ কখনোই শুরু হতো না। এটা জেলেনস্কি, পুতিন এবং বাইডেনের যুদ্ধ, ‘ট্রাম্পের’ নয়। আমি কেবল চরম অযোগ্যতা ও ঘৃণার মাধ্যমে শুরু হওয়া বড় ও প্রাথমিক আগুন নেভাতে সাহায্য করছি।”
ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘সবচেয়ে বড়’ ড্রোন হামলা: নিহত ১২, আহত বহু
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা রবিবার ভোরে জানিয়েছেন, টানা দ্বিতীয় রাতের মতো ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বিশাল রুশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১২ জন নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হয়েছেন। ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইগনাত (Yuriy Ihnat) এর মতে, এই হামলার মাত্রা ছিল স্তম্ভিত করার মতো — রাশিয়া ইউক্রেনে ৩৬৭টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যা তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধের একক বৃহত্তম হামলা। তিনি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (AP) জানান, রাশিয়া সব মিলিয়ে ৬৯টি বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ২৯৮টি ড্রোন ব্যবহার করেছে, যার মধ্যে ইরান-নির্মিত শাহেদ ড্রোনও ছিল।
প্রতিশোধের আগুন ও আন্তর্জাতিক ভোগান্তি
কিয়েভের উপর এই নজিরবিহীন হামলাকে মস্কো এবং রাশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার প্রতিশোধ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে মস্কো লক্ষ্য করে ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশিরভাগ হামলা সফলভাবে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে, তবুও এর ফলে মস্কোর বিমানবন্দরগুলিতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলির স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটে এবং যাত্রীদের ঝুঁকির মুখে ফেলে।
এই ঘটনার সরাসরি প্রভাব পড়েছে ভারতের সর্বদলীয় সন্ত্রাসবিরোধী প্রতিনিধি দলের উপর। সাংসদ কানিমোঝির নেতৃত্বে এই প্রতিনিধি দলটি মস্কো বিমানবন্দরে পৌঁছনোর সময় চলমান ড্রোন হামলার কারণে তাদের ফ্লাইটে দীর্ঘ বিলম্ব হয়। এই ঘটনা আবারও যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে অসামরিক নাগরিক এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণের উপর হামলার মারাত্মক প্রভাব তুলে ধরল।