ব্যুরো নিউজ ১০ নভেম্বর ২০২৫ : চলমান বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (Special Intensive Revision – SIR) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোটার তালিকা সংশোধনের পদ্ধতি নিয়ে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ও ডিএমকে সভাপতি এম. কে. স্ট্যালিন রবিবার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নিজের হাতে থাকা শুমারি (enumeration) ফর্মটি দেখিয়ে তিনি অভিযোগ করেন যে, এই ফর্মটিতে যথেষ্ট অস্পষ্টতা রয়েছে, যার ফলে শিক্ষিত নাগরিকরাও প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
একটি ভিডিও বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন বলেন, আবেদনকারীর বিবরণ চাওয়ার পর, ফর্মে পূর্ববর্তী ভোটার তালিকায় তালিকাভুক্ত এক আত্মীয়ের তথ্য চাওয়া হয়েছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এই আত্মীয়টি কে – বাবা বা মা, স্ত্রী বা স্বামী, ভাই, বোন, নাকি সন্তান? প্রত্যেকের নাম ভোটার তালিকায় থাকে। স্পষ্টতা কোথায়?”
স্ট্যালিন আরও বলেন, আত্মীয়ের বিবরণ সংক্রান্ত বক্সে প্রথমে নাম চাওয়া হয়েছে, তারপর তাঁর ইপিক (EPIC) নম্বর। এরপর তৃতীয়বারের মতো আবার সেই আত্মীয়ের নামই জানতে চাওয়া হয়েছে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন যে, সামান্য ভুল হলেও নির্বাচন কমিশন ফর্ম বাতিল করে নাম বাদ দিয়ে দিতে পারে।
“বিপজ্জনক ষড়যন্ত্র,” গণহারে নাম বাতিল করার অভিসন্ধি
মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন এই এসআইআর প্রক্রিয়াকে “ত্রুটিপূর্ণ, বিভ্রান্তিকর এবং বিপজ্জনক” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন যে এটি তামিলনাড়ুতে গণহারে নাম বাতিল করার একটি ষড়যন্ত্র, যার মাধ্যমে বিজেপি লাভবান হতে চাইছে।
স্ট্যালিন কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে ED, আয়কর বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনকে ডিএমকে সরকারের বিরুদ্ধে অপব্যবহারের প্রস্তুতি নেওয়ার অভিযোগও আনেন। তিনি বলেন, “আসুক তারা – আমরা তাদের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। মাঠ আমাদের।”
- সুপ্রিম কোর্টে মামলা: তিনি জানান, ডিএমকে এই এসআইআর প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছে। ডিএমকে দল ভোটার তালিকার সংস্কারের বিরুদ্ধে নয়, কিন্তু “তাড়াহুড়ো করে, বিভ্রান্তিকরভাবে এবং অনেক ভুলভ্রান্তি সহ” এই প্রক্রিয়াটি যেভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, তার বিরোধিতা করছে।
- হেল্পলাইন ঘোষণা: এই বিশৃঙ্খলা মোকাবিলার জন্য মুখ্যমন্ত্রী নাগরিকদের ফর্ম পূরণে এবং জমা দিতে সহায়তা করতে একটি পাবলিক হেল্পলাইন (০৮০৬৫৪২০০২০) নম্বর চালু করার কথা ঘোষণা করেছেন।
- পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলের মুখ্যমন্ত্রীদের সমর্থন: তিনি উল্লেখ করেন যে এই কারণেই পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলের মুখ্যমন্ত্রী যথাক্রমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও পিনারাই বিজয়ন এসআইআর-এর বিরোধিতা করছেন।
বুথ লেভেল অফিসারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও ডেপুটি সিএম-এর মন্তব্য
স্ট্যালিন আরও অভিযোগ করেন যে বুথ লেভেল অফিসাররা (BLOs) অনেক এলাকায় যাচ্ছেন না, এবং গেলেও পর্যাপ্ত ফর্ম নিয়ে যাচ্ছেন না। তারা দিনে মাত্র ৩০টির মতো ফর্ম বিতরণ করছেন।
তিনি প্রশ্ন করেন, “যদি এভাবেই চলে, তবে একজন ইআরও (ERO) এত অল্প সময়ের মধ্যে তিন লক্ষাধিক ফর্ম কীভাবে বিতরণ ও সংগ্রহ করতে পারেন?” এই ফর্মগুলিকে ৭ ডিসেম্বরের আগে কম্পিউটারাইজড করে খসড়া তালিকা প্রকাশের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
উপমুখ্যমন্ত্রী উদয়নিধি স্ট্যালিনও মুখ্যমন্ত্রীকে সমর্থন করে বলেন, কেন্দ্র সরকার “আমাদের বিজয় আটকাতে” এসআইআর এনেছে। তিনি এটিকে সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক গোষ্ঠীর ভোট মুছে ফেলার একটি “বিজেপি ষড়যন্ত্র” বলে দাবি করেন। তিনি বিহারে প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটার বাতিল হওয়ার অভিযোগ টেনে এনে জনগণকে প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত সতর্ক থাকতে আহ্বান জানান।
এআইএডিএমকে-র বিরোধিতা ও ‘জঙ্গল রাজ’ অভিযোগ
অন্যদিকে, বিরোধী দল এআইএডিএমকে-র সাধারণ সম্পাদক এ. পালানিস্বামী (EPS) এই এসআইআর প্রক্রিয়াকে সমর্থন করেছেন। তাঁর দাবি, জাল ও নকল ভোটারদের বাদ দিতে এই প্রক্রিয়া অপরিহার্য।
পালানিস্বামী অভিযোগ করেন, “ডিএমকে এসআইআর-এর বিরোধিতা করছে কারণ তারা জাল ভোট দিয়ে স্থানীয় নির্বাচনে জিতেছে। নির্বাচনের সময়, এমনকি মৃতরাও ভোট দিতে জীবিত হয়ে ওঠে। জাল এন্ট্রিগুলি সরাতে এবং সমস্ত আসল ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করতে এসআইআর অনুশীলন গুরুত্বপূর্ণ।”
পাশাপাশি, পালানিস্বামী তামিলনাড়ুতে মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিনের অধীনে “জঙ্গল রাজ” চলছে বলে অভিযোগ করে খুন বৃদ্ধি পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন এবং অবিলম্বে একজন পূর্ণ সময়ের ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ (DGP) নিয়োগের দাবি জানান।
তবে, মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন পালানিস্বামীর সমস্ত অভিযোগকে “সম্পূর্ণ মিথ্যা” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন এবং এসআইআর প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ১১ নভেম্বর রাজ্যব্যাপী প্রতিবাদের ঘোষণা করেছেন।
