tmc anti SIR rally

ব্যুরো নিউজ ০৫ নভেম্বর ২০২৫ : ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়া শুরু হতেই রাজ্য রাজনীতিতে পারদ চড়েছে। মঙ্গলবার বি আর আম্বেদকরের মূর্তি থেকে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত মিছিলের শেষে প্রতিবাদ মঞ্চ থেকে এই ইস্যুতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ফের গর্জে উঠলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিল বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশন।

 

অভিষেকের মূল বার্তা: আত্মসমর্পণ নয়, লড়াই

প্রতিবাদ মঞ্চ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কঠোর আক্রমণ শানিয়েছেন। তাঁর মূল বক্তব্য ছিল, তৃণমূল কংগ্রেস কোনো অবস্থাতেই বিজেপির কাছে মাথা নত করবে না।

“এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি হননি, সেই সময় কংগ্রেসের ব্যানার থেকে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ এবং আইডেন্টিটি কার্ড চালুর জন্য আন্দোলন সবার প্রথম করেছিলেন। সেই আন্দোলন আজও স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। আগামী দিনেও যদি আমাদের রাস্তায় নামতে হয় বিজেপির বিরুদ্ধে, আমরা সর্বশক্তি নিয়ে রাস্তায় নামবো। কিন্তু আমরা দিল্লিতে বিজেপির কাছে আত্মসমর্পণ করব না। তৃণমূলকে ধমকে চমকে কাজ হবে না।”

তিনি আরও বলেন, গত বিধানসভা নির্বাচনে ইডি, সিবিআই এবং “সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের একাংশ”-এর বিরুদ্ধে লড়াই করে তৃণমূল কংগ্রেস জয়লাভ করেছিল। তাঁর মতে, মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় তৃণমূল কংগ্রেস বদ্ধপরিকর এবং তারা “দিল্লির কাছে মেরুদন্ড বিক্রি করবে না।”

WB SIR ECI : কলকাতা হাইকোর্টের নজরে ‘এসআইআর’: আদালতে মামলা, বিভ্রান্তি কাটাতে এল নতুন ওয়েবসাইট

 ‘ভোটার বাঁচাও সরকার’ এবং মতুয়া বার্তা

নির্বাচন কমিশনকেও নিশানা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, এতদিন মানুষ বাছত সরকার, আর এখন ভোটার বাছছে সরকার
মতুয়া সম্প্রদায়ের উদ্দেশে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, “বিজেপি যে সিএএ ক্যাম্প খুলে ফাঁদ পেতেছে তাতে কেউ পা দেবেন না। যদি পা দেন তাহলে অসমে যে পরিস্থিতি হয়েছে, সেই পরিস্থিতি হবে আপনাদের।”
সাংসদ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কোনো বৈধ ভোটার বাদ গেলে দিল্লিতে আন্দোলন হবে এবং “বঙ্গের জনতার ক্ষমতা দিল্লি দেখবে।” উপস্থিত কর্মীদের কাছে তিনি দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলন করার জন্য প্রস্তুত কি না, হাত তুলে সমর্থন জানাতে বলেন।

 

২০২৬ নির্বাচনই জবাব

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঙ্কার, “আগামী ২০২৬ সালের নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী করার লড়াই শুধু নয়, আগামী নির্বাচনে বিজেপিকে শূন্য করার লড়াই।”
তিনি বলেন, যারা বিগত দিনে বোতাম টিপে ৫০০ টাকার নোট বাতিল করেছে, একশ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করেছে এবং আধার কার্ড বাতিল করেছে, তাদের বিরুদ্ধেই লড়াই লড়তে হবে। এর জবাব দিতে হবে আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনে ভোট মেশিনে। তবে এই সভার মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কর্মীদের উদ্দেশ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করে দেন, আধার কার্ড এখনও একটি বৈধ পরিচয়পত্র হিসেবে গণ্য হবে। তবে, কেবল আধার কার্ড নয়—নাগরিকত্বের পরিচয়ের জন্য এর সঙ্গে অন্যান্য আনুষঙ্গিক নথি যেমন জন্ম শংসাপত্র (Birth Certificate) ইত্যাদি প্রয়োজন হবে।

WB SIR ECI : রাজ্যে SIR প্রক্রিয়া শুরুতেই শিক্ষকদের বিক্ষোভ: ‘অন ডিউটি’ ঘোষণা-সহ নিরাপত্তা দাবি।

SIR-এর বিরোধিতা কেন? তৃণমূলের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন

যদিও তৃণমূল কংগ্রেস শুরু থেকেই SIR-এর বিরোধিতা করছে, কেন এই বিরোধিতা, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তৃণমূল নেতৃত্ব লাগাতারভাবে ভোটার তালিকা সংশোধনের শুধু নেতিবাচক দিকগুলিই তুলে আনছেন, যা বহু ক্ষেত্রে ‘অপপ্রচার’ বলে সমালোচিত হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, SIR প্রক্রিয়া একটি অত্যন্ত সাধারণ প্রশাসনিক পদক্ষেপ:
১. ভারতে জন্ম নেওয়া কোনো নাগরিকের ভোটাধিকার বাতিল হওয়ার কথা নয়।
২. ২০০২ সালের পর নতুন ভোটাররা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত হবেন তাঁদের মা-বাবা বা ঠাকুরদা-ঠাকুরমার ভোটাধিকারের সূত্রে।
৩. এই প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের দূরে রাখা এবং তালিকা থেকে মৃত ভোটারদের বাদ দেওয়া।

কিন্তু এই সহজ প্রক্রিয়াটিকে তৃণমূল কংগ্রেস কখনও NRC কখনও বা CAA বলে ব্যাখ্যা করে জনমানসে প্রভাব ফেলার চেষ্টা করছে। মতুয়াদের ভোটাধিকারের বিষয়টি টেনে এনে CAA-এর শরণার্থি ইস্যুটিকে SIR প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব আসলে নির্বাচন কমিশনের সাধারণ সংস্কার প্রক্রিয়াকে কাঠগড়ায় তুলে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাইছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এই পথসভা সেই কৌশলটিই স্পষ্ট করে দিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর